অভিমত ভিন্নমত

ছাত্ররাজনীতির এই দুর্দশা কেন দেশের মানুষ বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থীদের ভোট দেন। নতুন প্রজন্মের ভোটারেরা সচেতন, তাই তাঁরা উন্নয়নের রাজনীতি, প্রগতির রাজনীতির পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত জোটকে ভোট দেন।


তাঁদের প্রত্যাশা ছিল, ন্যায়ের সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। অতীতে ছাত্ররা রাজনীতি করেছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে। ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধ, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে ছাত্র সংগঠনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কিন্তু এ সময়ের ছাত্ররা কেমন রাজনীতি করছে? এখন টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিতে ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বেশি মনোযোগী। আগে মেধাবী ছাত্ররা রাজনীতি করতেন। এখন রাজনীতি করেন মাস্তানেরা।
ছাত্রলীগের বাড়াবাড়িতে প্রচণ্ড অসন্তুষ্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংগঠনটির সাম্প্রতিক কার্যকলাপে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে দলের হাইকমান্ড মনে করছে। গত এক বছরে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের যে বিবরণ সরকারের কাছে রয়েছে, তাতে এখনই এ সংগঠনের লাগাম টেনে না ধরলে আরও বিপদ ঘটতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। গত এক মাসে দেশের অন্তত ২০টি উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এসব সংঘর্ষের বাইরে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং তদবিরবাজির অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে টেন্ডারবাজির সময় ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে।
মাস্তানি-চাঁদাবাজি করে টুপাইস কামাই করার মতো ঘৃণ্য ধান্ধা ছাত্রদের কত নিচে নামিয়েছে, তা ভাবতেও ঘৃণা হয়। কুষ্টিয়া কলেজ, ঢাকা কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ ডজনখানেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররা ছাত্রভর্তি করার জন্য যে জঘন্য কাজ করলেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের সভাপতিকে একই দলের ছাত্ররা মারধর করলেন—সর্বশেষ তাঁদের দ্বন্দ্বে ঢাকা কলেজের মেধাবী ছাত্রের মৃত্যু, ছাত্ররাজনীতির কলঙ্কজনক দিক।
আমরা দেশবাসী চাই, ছাত্ররা অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। দেশ পরিচালনায় নেতা-নেত্রীরা যখন ভুল পথে অগ্রসর হবেন, তখন তার প্রতিবাদ করবেন এবং সঠিক দিকনির্দেশনা দেবেন। ছাত্ররা থাকবেন নির্যাতিত-নিপীড়িত জনগণের পাশে। কিন্তু তাঁরা আমাদের চাওয়ার উল্টো পথেই চলছেন। দেশবাসী হতাশ। ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের বর্তমান নেতারা, এমনকি প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ, পরামর্শ, ধমক কোনো কিছুকেই পরোয়া করছেন না তাঁরা, চলছেন ফ্রি-স্টাইলে। নোংরা কর্মকাণ্ড চালিয়ে ছাত্রলীগকে কলুষিত করছে একদল ছাত্র নামধারী।
ক্ষমতাসীনদের পদলেহন, লেজুড়বৃত্তি করে থাকেন এক ধরনের ব্যক্তি। যখন যে দল ক্ষমতাসীন হয়, তাদের পিছু পিছু ঘুরে কিছু কামিয়ে নেওয়ার ধান্ধা তাঁদের। যাঁরা প্রকৃত দেশপ্রেমিক, যাঁরা জনগণের ভালো চান, তাঁরা দল ও দেশকে ভালোবেসেই জীবন উত্সর্গ করেন। আর সুযোগসন্ধানীরা সর্বদাই আখের গোছানোর ধান্ধায় থাকেন।
নেতৃত্বের বিকাশ ঘটার সুযোগ দিতে হবে। নেতারা নিজেদের হাতকে শক্তিশালী করার জন্য মাস্তান লালন-পালন করবেন, এমনটা যদি হয় তাহলে ভবিষ্যত্ অন্ধকার হবেই। আলোর পথ দেখতে হলে ছাত্রদের পড়ালেখায় মনোযোগী এবং সত্য ও ন্যায়ের পথ দেখাতে হবে। এই দায়িত্ব নিতে হবে জ্যেষ্ঠ নেতাদের। জ্যেষ্ঠ নেতারা যদি দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ ও সুবিধাবাদী হন, তাহলে ছোটরা তেমনটাই শিখবে।
হাবিবুর রহমান
ঢাকা।

এ কেমন ভালোবাসা
২৪ জানুয়ারি: ছয় বছরের হাস্যোজ্জ্বল সন্তানের হাত ধরে এক মা অপেক্ষা করছেন বাসের জন্য। হাতে টিকিট। দৈত্য হয়ে আচমকা একটি বাস মায়ের সামনে সন্তানকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল। আশপাশের মানুষের আহাজারি। এও এক রকম ভালোবাসা।
২৫ জানুয়ারি: রাস্তা পার হতে গিয়ে মায়ের হাত ধরা অবস্থায় আরেক শিশুকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল আরেক গাড়ি। হতবাক মা।
ভালোবাসার রকমফের রাস্তাজুড়ে স্তব্ধতা।
এরই মধ্যে হরেক আকস্মিক ঘটনার পর ঋতুরাজ বসন্তের আগমন, দিকে দিকে বসন্তের সাজ। গান, আনন্দ, উল্লাসের এই উৎসব। দীর্ঘ দিনের সব মানুষের, অন্তত এই ভূখণ্ডের মানুষের। ঠিক তার পর দিন:
অনুকরণ করি আরেক দিন, আরেক সংস্কৃতির—বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। ভাবতে খারাপ লাগে না। এ রকম ভালোবাসার নামেও দিবস উদ্যাপিত হয়। যদিও বসন্তজুড়েই ভালোবাসার রং ছড়িয়ে থাকে। তার পরও আলাদাভাবে পালন করা হয় উপলক্ষের অভ্যাসবশত। কিন্তু যখন সংবাদজুড়ে বিশ্ব ভালোবাসার রঙিন খবরের নিচে একটি দেড় বছরের শিশু অপহরণ ও পরে না খেতে দিয়ে হত্যা করার খবর ছোবল মেরে যায় সভ্যতার অস্তিত্বে। মুক্তিপণ মাত্র পাঁচ হাজার টাকা।
এর মধ্যে দুই হাজার টাকা ও একটি মোবাইল সেট পরিশোধ করা হয়েছে। তার পরও হারিয়ে যাওয়া নিষ্পাপ অপূর্বর খবরে তাকিয়ে থাকি খরবের পাতায়।
এ কেমন ভালোবাসা!
জগন্ময় পাল
ঢাকা।

কার্যকর স্থানীয় সরকার চাই
অকার্যকর উপজেলা পরিষদের এক বছর পেরিয়ে গেল। গণমাধ্যমে লেখালেখি-আলোচনা অনেক হয়েছে। কিন্তু কোনো পরিবর্তন আসেনি।
সরকারি ও বিরোধী দল ভিন্ন সুরে কথা বললেও উপজেলা প্রসঙ্গে তারা একই সুরে কথা বলে। সংসদে টেবিল চাপড়ে হাসতে হাসতে উপজেলা চেয়ারম্যানদের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার সময় সরকারি ও বিরোধী সব সাংসদকেই এককাট্টা দেখা গেল। খুঁটি শক্ত করলে ঘর মজবুত হয়। ঠিক তেমনি স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হলে কেন্দ্রীয় সরকারও শক্তিশালী হবে। সংরক্ষিত আসনসহ মোট সাংসদ ৩৪৫ জন। আর উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান ১৪৪৬ জন। সাংসদেরা প্রায় সময় ঢাকায় থাকেন। আর উপজেলা চেয়ারম্যানরা সবসময় নিজ এলাকায় থাকেন, সর্বস্তরের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলার চেষ্টা করেন।
মাঠপর্যায়ে গণভিত্তি যাঁদের ভালো, তাঁদের মূল্যায়ন করা দরকার। এরশাদ স্বৈরশাসক হয়েও দীর্ঘ নয় বছর ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিলেন ১৯৮৫ সালে উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যানদের ব্যাপক ক্ষমতা দিয়ে উপজেলা পরিষদকে শক্তিশালী করার কারণে।
কিন্তু সরকারের ক্ষমতায় থাকার স্বার্থে নয়, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকে আরও বেশি সহজ, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিপূর্ণ করার প্রয়োজনে। স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হলে কেন্দ্রের প্রতি নির্ভরশীলতা হ্রাস পাবে, কাজে গতি আসবে, স্থানীয়ভাবেই অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে। সাংসদদের উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের উপদেষ্ট করা হয়নি।
অথচ এসবই স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। একই দেশে দুই আইন। উচ্চ আদালতে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। উপজেলা পরিষদকে শক্তিশালী করার জন্য একটি গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে উচ্চ আদালতে মামলা করে উপজেলা চেয়ারম্যানদের দাবি আদায় করতে হবে, এটা জাতি কখনোই প্রত্যাশা করেনি।
আনোয়ারুল হক
চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ, আক্কেলপুর, জয়পুরহাট।

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা ও অভিবাসনের সুযোগ
উচ্চশিক্ষা উপলক্ষে আমি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছি। শিক্ষা ও গবেষণা কাজের সুবাদেই জানলাম, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি নাগরিকদের অভিবাসনের অনেক সুযোগ রয়েছে। ২০০৬ সালের এক হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ অভিবাসীর সংখ্যা প্রায় চার কোটি। এখনো বৈধতা পায়নি এমন অভিবাসীর সংখ্যা প্রায় সোয়া কোটি। মোট অভিবাসীর মধ্যে শুধু মেক্সিকো থেকেই এসেছে প্রায় এক কোটি। জানা গেল, মেক্সিকো আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে বহিঃঅভিবাসন বন্ধ করার পদক্ষেপ নেবে। তখন বাংলাদেশিদের সুযোগ অনেক বেড়ে যাবে।
শুধু মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যেই বর্তমানে দুই লাখ অভিবাসী কর্মীর চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদা পূরণে চীন, ভারত, দক্ষিণ আমেরিকা ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর নাগরিকেরা প্রতিযোগিতায় নামবে, এতে সন্দেহ নেই। তবু বাংলাদেশেরও ব্যাপক সুযোগ-সম্ভাবনা থাকছে।
সে জন্য প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন। ভাষাজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে পেশাগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে হবে, যাতে তাঁরা এ দেশে এসে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে অর্থ উপার্জন ও দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে পারেন। আর জনশক্তি রপ্তানিকারী বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (আদম ব্যাপারি) অসাধু কর্মকাণ্ডের ফলে যাতে এই সম্ভাবনা নষ্ট হতে না পারে, সে দিকে সরকারকে কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জুডিথ ম্যাকহেল ঢাকা সফরকালে বলেন, তাঁর দেশ প্রতি বছর বাংলাদেশের ২০ হাজার শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেবে। এই সুযোগের পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশের সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার উদ্যোগী হওয়া উচিত। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন করার চারটি প্রক্রিয়ার মধ্যে উচ্চশিক্ষা একটি। এর মাধ্যমে বৈধ ও স্থায়ীভাবে বসবাস ও পর্যায়ক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিবাসী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে; শিক্ষাব্যবস্থা খুব উন্নত এবং বৃত্তি-ফেলোশিপের সুযোগও বিস্তৃত। যাঁরা নিজ খরচে পড়াশোনা করতে সক্ষম, তাঁদেরও অনেক সুযোগ আছে।
এসব সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ জনসংখ্যার বিপুল চাপ থেকে যেমন মুক্তি পেতে পারে, তেমনি শিক্ষিত পেশাজীবী নাগরিকদের এ দেশে অভিবাসন ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার মধ্য দিয়ে প্রচুর রেমিট্যান্স আয় ও দেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল করতে পারে।
উত্তম কুমার দাস,
মিনিয়াপলিস, যুক্তরাষ্ট্র।

ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে
রাজধানীর ট্রাফিকব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ট্রাফিক সংকেতব্যবস্থা কাজ করে না। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যানজট, রাতে চলে ট্রাকের তাণ্ডব। শহরের অধিকাংশ রাস্তায় ফুটপাত নেই। যেটুকু আছে তাও অবৈধ দখলে। ফুটপাতে হাঁটার উপায় নেই; এমনিতে ভিড়, উপরন্তু মোটরসাইকেলের উপদ্রব।
পথচারী পারাপারের কিছু চিহ্নিত জায়গা আছে, সেখানে গাড়ি থামতে চায় না। পারলে গায়ের ওপর উঠিয়ে দিতে চায়। উন্নত দেশে পথচারী পারাপারের জায়গায় যদি কোনো গাড়ি না থামে, তাহলে এমন জরিমানা গুনতে হয় যে এমনটি করার সাহস আর কখনো গাড়িচালক করেন না। এখানে রাস্তার মধ্যখানে ঘাসে পানি দেওয়া হয় দিনের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়ে।
বাস, ট্যাক্সি, সিএনজি গাড়ির চালকেরা আইনকানুন কিছুই মানেন না। তাঁরা যেখানে খুশি সেখানে যান থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করান। অনেকে রাস্তায় উল্টো দিক দিয়ে চলেন। কোনো যানবাহন লেন মেনে চলে না; এলোমেলোভাবে ছোটে কে কার আগে যাবে, এ প্রতিযোগিতায়। সরকারের উচিত যানবাহনের চালকদের প্রশিক্ষণের প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষ কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে দেখা, তারা চালকদের কী কী বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়। চালকদের প্রশিক্ষণ সিলেবাস হতে হবে উন্নত বিশ্বের মতো।
প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার দেখা উচিত, কিভাবে শিশু, মহিলা, বৃদ্ধসহ মানুষ রাস্তা পারাপার হয়। যদি সরাসরি না পারেন, অন্তত ভিডিও করে দেখতে পারেন। ঢাকায় কোনো রাস্তায়ই রাস্তা পারাপারের সুষ্ঠুব্যবস্থা নেই। শুধু তোপখানা রোডটি সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা ভিডিও করে দেখেন, কিভাবে নারী, পুরুষ ও শিশুরা রাস্তা পারাপার হয়। রাস্তা পারাপারব্যবস্থা হতে হবে ব্যবহারকারী-বান্ধব। প্রয়োজনবোধে রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা থাকতে পারে প্রতি ২৫০ মিটার পর পর।
বসবাসরত সভ্য মানুষদেরই এগিয়ে আসতে হবে, এ শহর বাঁচাতে। স্বল্প, মধ্য, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা যা-ই করা হোক না কেন, এই শহরকে চলাচলের উপযোগী পর্যায়ে আনার জন্য আইনের সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। এ জন্য প্রায়ই মোবাইল কোর্ট বসিয়ে আইন ভঙ্গকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ত্রিমুখী রাস্তাগুলো যতদূর সম্ভব চতুর্মুখী করা প্রয়োজন। যেখানে সম্ভব নতুন রাস্তা তৈরি করতে হবে। লন্ডনের এম ২৫-এর মতো বড় সার্কুলার রোড তৈরি করতে হবে। যেসব রাস্তা আছে, তার দুপাশে যথেচ্ছ গাড়ি পার্কিং কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। গাড়ি আটক, উচ্চহারে জরিমানা করলে কিছু ফল হতে পারে।
এম. সরোয়ার হোসেন, ঢাকা।

ইটের পরিবেশবান্ধব বিকল্প আছে
বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয় ও উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রধান কারণ সনাতন পদ্ধতির ইটভাটাগুলো। এসব ইটভাটায় একদিকে এলাকার জামির মাটি কেটে জমি নিচু করে ফেলছে, অন্যদিকে পোড়ানো ইট স্তরে স্তরে সাজিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বহুতল ভবন। ফলে নষ্ট হচ্ছে ভূস্তরের ভারসাম্যহীনতা ও ভূমি কাঠামো। ইট পোড়ানোর জন্য খনিজ কয়লার সঙ্গে ফার্নেস অয়েল ও পুরোনো টায়ার পোড়ানো হচ্ছে; কার্বনডাই অক্সাইডযুক্ত কালো ধোঁয়া জলবায়ুর উষ্ণতা বৃদ্ধিসহ মারাত্মক স্বাস্থ্যসমস্যা সৃষ্টি করছে। ঢাকা শহরের চারপাশে রয়েছে অসংখ্য ইটভাটা, তীব্রভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষিজ উত্পাদন। এলাকার মানুষ মারাত্মকভাবে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছে। কাশির সঙ্গে বের হচ্ছে কালো কফ। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ কালো হয়ে গেছে। ঢাকা শহরের বাতাসেও উড়ছে ইটভাটার কালো বিষাক্ত ধোঁয়া। পরিবেশ দূষণের এমন ভয়াবহ চিত্র বিশ্বের কোথাও আছে কি না জানি না। পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিয়েই এভাবে ইট পোড়ানো হচ্ছে। বিশ্বের কোথাও কি এমন পদ্ধতিতে ইট পোড়ানোর পদ্ধতি চালু আছে?
উন্নত বিশ্বসহ বিশ্বের সব দেশে বালু ও সিমেন্ট দিয়ে প্রস্তুত ব্লক ইট ব্যবহূত হচ্ছে, যার গুণগত মান পোড়া ইট থেকে অনেক ভালো। আমাদের দেশেও ব্লক ইট বানানোর প্রযুক্তি রয়েছে কিন্তু এর ব্যাপক ব্যবহার নেই। বর্তমানে ঢাকা শহরের রোড ডিভাইডার এবং ফুটপাত তৈরিতে মূলত বিভিন্ন সাইজের ব্লক ইট ব্যবহার হচ্ছে যা খুবই মজবুত এবং দৃষ্টিনন্দন। ভবনের লোড কমানো এবং তাপ নিরোধের জন্য জমানো ‘হলো ব্রিকসও’ কোনো কোনো ভবনে ব্যবহূত হচ্ছে। ব্লক ইট বানানোর প্রধান কাঁচামাল উন্নতমানের বালু আমাদের প্রচুর আছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল দিয়ে বহমান ৫৪টি বড় নদীসহ অসংখ্য ছোট ছোট নদী ও খাল বালুতে ভর্তি হয়ে আছে। এসব বালু ব্যবহার করে উন্নতমানের ব্লক ইট তৈরি করলে একদিকে নদীগুলো খনন হয়ে যাবে, অপরদিকে দেশি কাঁচামাল বালু ও সিমেন্ট ব্যবহার করে গুণগত মানসম্পন্ন ব্লক ইট প্রস্তুত করা সম্ভব হবে, সাশ্রয় হবে কয়লা ও ফার্নেস অয়েল আমদানির জন্য ব্যবহূত বৈদেশিক মুদ্রা, নিরুত্সাহিত হবে গাছ কাটা। নিচু হবে না দেশের ভূমি এবং দেশ ও জাতি রক্ষা পাবে পরিবেশের মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে। সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে ইট পোড়ানো সংস্কৃতি বন্ধ করে বালু ও সিমেন্ট দিয়ে ইট তৈরির পদ্ধতির সম্প্রসারণ করে তার ব্যবহারের প্রতি মানুষকে সজাগ ও উত্সাহিত করতে হবে।
এম এ অদুদ, ঢাকা।

অযাচিত বেদন...
ছোট্ট শিশু হামিমের স্কুলজুতা পরা দুটি পা, ঢাবির মেধাবী শিক্ষার্থী আবু বকরের ‘ঘামে ভেজা জীবন, রক্তে ভিজে শেষ’—এর সকরুণ বর্ণনা, সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী বৃষ্টির আত্মহত্যা আর ইন্দিরা রোডে গৃহকর্তা-কত্রীর হাতে খুন গৃহকর্মী। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০-এর সকালটা প্রথম আলো হাতে নিয়ে এতগুলো মর্মান্তিক (উপযুক্ত শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না) ঘটনা সঙ্গে নিয়ে দিন শুরু করেছি।
দৈনন্দিন কাজের চাপে সব কিছু আড়াল হতে সময় লাগেনি। তার পরও চারের মধ্য তিন দশমিক ৭৫ নম্বর পাওয়া আবু বকরের খাতাটা ক্ষণে ক্ষণে কেবল সামনে চলে আসতে চাইছিল। সোনালি ফ্রেমে পরিবারের জীবনকে বাঁধতে যে মেধার তরবারি জ্বলে উঠেছিল, তা কিসের আঘাতে থেঁতলে গেল? বকরের কয়েক দিন পর আরও নৃশংস মৃত্যুর মুখোমুখি হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ফারুক, যিনি অনার্সে প্রথম শ্রেণী পেয়েছিলেন।
এ প্রশ্নের জবাব কে দেবে? আর কত শিক্ষার্থীর মৃত্যু শিক্ষাঙ্গনের এই কলঙ্কময় ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে পারবে? রক্তখেকো ছাত্ররাজনীতি আর কত স্বপ্নের রক্তাক্ত লাশ চায়? বুয়েটের ছাত্রী সনি মারা যাওয়ার পর কয়েক দিন প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থী, অভিভাবক থেকে দেশের নামীদামি কর্তারাও এর সমাধান চেয়েছেন, বিচার চেয়েছেন। তবু কেন বন্ধ হয় না এসব মৃত্যু?
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্প্রতি এমএসএস পরীক্ষা দিয়েছি। প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার অনিরাপদ অনুজদের নিরাপত্তাহীন জীবন আমাকে শঙ্কিত করে তুলছে। আমি জানি, এই শঙ্কা দেশের সব মানুষের।
প্রধানমন্ত্রী, আপনি দেশের সেই স্থানটিতে বসে, যেখানে এ দেশের জনগণ আপনাকে পৌঁছে দিয়েছে। আপনার কাছে অনুরোধ, স্ব-উদ্যোগী হয়ে শিক্ষাঙ্গনের এই অস্ত্রের ঝনঝনানি আর বকর-ফারুকদের মৃত্যু বন্ধ করুন। আমরা কোনো প্রতিশ্রুতি চাই না, তদন্ত কমিটি চাই না, আশ্বাসও চাই না। আমরা নিরাপদ শিক্ষাঙ্গন চাই। চাই গরিব মায়েদের যেন তিন বছর মাথায় তেলবিহীন না থাকতে হয়। এক বোতল তেল কিনে দেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে জীবিত থাকবেন বকর-ফারুকেরা।
হামিম, বৃষ্টি, আবু বকর, ফারুক হোসেন, মনজিলা খাতুনের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব ছিল।
এর আগে যারা নানাভাবে হত্যার শিকার হয়েছে বা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে করা অন্যায়ের প্রতিকার হয়নি, অপরাধীরা শাস্তি পায়নি। তাই শিক্ষাঙ্গনে হত্যাকাণ্ড, রক্তপাত চলছে। বখাটেরা নির্বিঘ্নে উত্পাত করে চলেছে। আর বৃষ্টিরা সম্মান বাঁচাতে আত্মহত্যা করে চলেছে। এই মৃত্যুর মিছিল থামাতে এগিয়ে আসার কি কেউ নেই?
সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত হামিমের পা দুটির কথা ভাবুন, আর আপনার সন্তানের ভবিষ্যত্জীবনের কথা ভাবুন। হামিমের মায়ের হাহাকারের কথা ভাবুন। এই ভাবনাগুলোর দোহাই, দেশের সড়কগুলো নিরাপদ করার জন্য কিছু করুন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শান্তি ও শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনুন। কোথাও আর কোনো অপমৃত্যু দেখতে চাই না।
রুখশানা মিলি, ঢাকা।

মাদকের ছোবলে বিপন্ন সমাজ
দিনের পর দিন সীমান্ত জেলাগুলো দিয়ে অবাধে আসছে মাদকদ্রব্য। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নিষ্ক্রিয়তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু অংশের প্রত্যক্ষ মদদে নগর-বন্দরের অলি-গলিতে অবাধে চলছে মাদক বেচাকেনা—এমন অভিযোগ আছে। অবক্ষয়ে মেতেছে ঢাকার অভিজাতপাড়ার নাইট ক্লাবগুলো।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে বর্তমানে মাদকাসক্তের সংখ্যা অর্ধকোটিরও বেশি। এদের প্রায় ৯১ শতাংশই কিশোর ও যুবক। নারী মাদকাসক্তের সংখ্যা দুই লাখের মতো। মাদকবিরোধী সংস্থা ‘লাইফ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাসগুলোর ৩৩৫ জন ছাত্র ও ১৩০ জন ছাত্রীর (মোট ৪৬৫) একটি জরিপ চালিয়ে দেখতে পেয়েছে, এদের ৪০ শতাংশই মাদকাসক্ত। ধূমপানে আসক্তদের শতকরা ৬৫ ভাগ ছাত্র, আট ভাগ ছাত্রী। অ্যালকোহলে আসক্ত ১৪ শতাংশ ছাত্র, চার শতাংশ ছাত্রী। ফেনসিডিল, গাঁজা, ঘুমের ওষুধে আসক্ত ৭০ শতাংশ ছাত্র, দুই শতাংশ ছাত্রী। চরস ও ভাংয়ে আসক্ত ৩৫ শতাংশ ছাত্র এবং ১২ শতাংশ ছাত্রী। হেরোইনসেবীদের মধ্যে ৪০-৫০ শতাংশ ছাত্র, চার-পাঁচ শতাংশ ছাত্রী। কর্মসংস্থানের অভাবে তরুণসমাজের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।
ফলে তারা আশ্রয় নিচ্ছে মাদকের। বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা চার কোটির বেশি। একজন বেকার মাদকাসক্ত হলে সামাজিক অশান্তি ও অস্থিতিশীলতাও বাড়িয়ে তোলে। বর্তমান বিশ্বে মাদক তৃতীয় বৃহত্তম ব্যবসা; গত এক বছরে ৩২০ বিলিয়ন মুনাফা হয়েছে এ ব্যবসায়। বাংলাদেশে গত বছর সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার মাদকের ব্যবসা হয়েছে। সব সরকারের আমলেই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নাকের ডগায় এ সর্বনাশা কাণ্ড চলে আসছে।
মাদকাসক্তি বন্ধের লক্ষ্যে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সক্রিয়। ১৯৯০ সালে সার্ক কনভেনশন অন নারকোটিক ড্রাগস সদস্য দেশগুলোর পার্লামেন্টের অনুমোদনের পর বলবত্ রয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। বাংলাদেশে মাদকের অবৈধ প্রবেশ, উত্পাদন ও শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত শক্তিশালী চক্র থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। মাদক ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা বানাচ্ছে একটি শক্তিশালী চক্র। অন্যদিকে ধ্বংসের মুখোমুখি হচ্ছে যুবসমাজ। দেশের পারিবারিক বন্ধন আলগা হচ্ছে, সামাজিক মূল্যবোধেরও অবক্ষয় ঘটছে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অস্তিত্ব প্রশ্নবোধক। মাদক ব্যবসায়ী চক্রকে শাস্তির আওতায় আনা, মাদকের বিরুদ্ধে শক্তিশালী সামাজিক প্রতিরোধ আন্দোলনের বিকল্প নেই। দেশে মাদক সরবরাহের সব পথ বন্ধ করা গেলে মাদকসেবীর সংখ্যা হ্রাস করা সম্ভব। সরকার-প্রশাসন ও সামাজিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ জোরদার প্রচেষ্টায় সুফল মিলবে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর সদস্যদের এ ব্যাপারে কঠোর জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি।
স্মৃতি চক্রবর্তী, ঢাকা।

No comments

Powered by Blogger.