নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই-পুরান ঢাকার আইনশৃঙ্খলা

ছিনতাইকারীদের গুলিতে পুরান ঢাকার চাল ব্যবসায়ী আফিল উদ্দিন বিশ্বাস ও সন্ত্রাসীদের গুলিতে ওয়ার্ড কমিশনার, যুবদল নেতা হাজি আহাম্মদ হোসেনের হত্যার প্রতিবাদে এবং হত্যাকারীদের শাস্তির দাবি জানাতে ব্যবসায়ীরা গত বুধবার যে ধর্মঘট ডেকেছিলেন, তা ছিল বেশ বড় আকারের।


প্রায় সাড়ে চার হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল; শুধু পুরান ঢাকা এলাকায় নয়, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, নিহত আফিল উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায়ও ব্যবসায়ীরা ধর্মঘট পালন করেছেন। শুধু চাল ব্যবসায়ীরা নন, ধর্মঘট পালন করেছেন ওষুধ, রাসায়নিক ও প্রসাধনী, কাচ ও আয়না ব্যবসায়ীরাও। এই ব্যাপক প্রতিবাদের তাত্পর্য নিশ্চয়ই বিরাট।
ব্যবসায়ী আফিল উদ্দিন বিশ্বাসের হত্যা ছিনতাইকারীদের কাজ। ওয়ার্ড কমিশনার হাজি আহাম্মদ হোসেনের হত্যার পেছনে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ বা সামনের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রার্থিতা নিয়ে বিরোধ হতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে। উভয় ক্ষেত্রেই নিরাপত্তাহীনতার প্রশ্নটিই বড়। হত্যাকারীদের শাস্তির দাবির মধ্যে আছে নিরাপত্তার সর্বজনীন দাবি। ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য এ দেশে নতুন কিছু নয়; সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ বা নির্বাচনকেন্দ্রিক বিরোধও নতুন নয়। হঠাত্ করে যে এসব খুব বেড়ে গেছে, তাও হয়তো নয়। কিন্তু মানুষের নিরাপত্তাহীনতার বোধ ভঙ্গুর হয়ে পড়লে এ ধরনের দু-একটি ঘটনাই বিরাট প্রতিক্রিয়ার উপলক্ষ হয়ে উঠতে পারে। শুধু ব্যবসায়ী সমাজের নয়, সমাজের সব স্তরের মানুষেরই চলাফেরায়, ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে ও দৈনন্দিন জীবন যাপনে যে ন্যূনতম নিরাপত্তার বোধ অপরিহার্য, তার নিশ্চয়তা দৃশ্যমানভাবে অনুপস্থিত।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের কাছে টেলিফোনে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, নিয়মিত চাঁদা দিয়েও তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাহলে কারা চাঁদাবাজি করছে, কিসের জোরে তারা তা করতে পারছে, তাদের দাপটের উত্স কী—এগুলো খতিয়ে দেখে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। চাঁদাবাজি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে ভাড়াটে খুনি, ছিনতাইকারীসহ সব ধরনের পেশাদার অপরাধীকে দমন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আরও তত্পরতা প্রয়োজন। এদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামর্থ্যের বাইরে নয়। প্রয়োজন তাদের সামর্থ্য কাজে লাগানো। এ ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীর পেশাগত সততা প্রয়োজন, রাজনৈতিক বা অন্যান্য প্রভাব থেকে থাকলে সেগুলো দূর করার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও প্রয়োজন। আমরা আশা করব, সরকার এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেবে।
ব্যবসায়ী আফিল উদ্দিন বিশ্বাস ও ওয়ার্ড কমিশনার হাজি আহাম্মদ হোসেনের হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে ব্যবসায়ী সমাজসহ জনসাধারণের নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ অবশ্যই নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.