সার্ধশত পেরিয়ে উজ্জ্বল রবীন্দ্রনাথ

আজ পঁচিশে বৈশাখ। বাঙালির সৃজন-মননের দীপ্তিমান কৃতী পুরুষ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন। দেড় শতাব্দী পেরিয়ে গেল তাঁর জন্মদিনের। দিবাকরের প্রোজ্জ্বল কিরণের মতোই তাঁর অনন্য প্রতিভার আলো উদ্ভাসিত করে চলেছে বাঙালির জীবন ও মানস। আজ তাঁর ১৫১তম জন্মবার্ষিকীতে বাঙালি তাঁকে স্মরণ করবে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।


নতুন চিন্তনে ও হূদয়ের সুকুমার অনুভূতির প্রকাশে অনুভব করবে তাঁর প্রাসঙ্গিকতা।
১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ অনুযায়ী ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দের ৬ মে (বাংলা বর্ষপঞ্জির পরিবর্তনে এখন বাংলাদেশে ৮ মে) কলকাতায় জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনটি অনেক কাল আগে থেকেই সমগ্র বাঙালির জীবনে এক জাতীয় উৎসবে পরিগণিত হয়েছে। সার্ধশততম বর্ষ উপলক্ষে গতবছর শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ উদ্যোগে বছরব্যাপী কর্মসূচি। এ বছর ১৫১তম জন্মবার্ষিকীর উৎসবের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে সেই কর্মসূচি। এ উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে কর্মসূচি শুরু হয়েছিল গত রোববার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। বিশেষ অতিথি হয়ে এসেছিলেন ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি। বরাবরের মতো এবারও রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি কবির স্মৃতি জড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসর ও খুলনার দক্ষিণডিহিতে কবির জন্মজয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রায় একক প্রচেষ্টায় বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বসভায় স্বকীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছিলেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর স্বীকৃতি তিনি পেয়েছেন ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভের মাধ্যমে। তিনিই সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী প্রথম বাঙালি এবং প্রথম এশীয়। তিনি তাঁর বহুমুখী প্রতিভায় বাংলা কাব্য, উপন্যাস, গল্প, নাটক, প্রবন্ধ ও সংগীতকে অতুলনীয় সমৃদ্ধি দান করেছেন। চিত্রকলায় সংযোজন করেছেন নতুন মাত্রা। সৃজনশীল কর্মের সমান্তরালে ধর্ম, দর্শন, রাজনীতি, সমাজ উন্নয়ন, পরিবেশ, কৃষি, শিক্ষা ক্ষেত্রেও তিনি যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তার সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য এখনো প্রাসঙ্গিক হয়ে আছে। তাঁর রচিত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ আমাদের জাতীয় সংগীত। এ দেশের মুক্তিসংগ্রামে তাঁর গান আমাদের প্রেরণা জুগিয়েছে। এখনো দুর্যোগ-দুর্দিনে তাঁর রচনা আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে আছে।
কবিগুরুর জন্মদিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বিশ্বকবির সার্ধশততম জন্মবার্ষিকীর সমাপনী উৎসব ও ১৫১তম জন্মবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। বাণীতে তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিস্ময়কর প্রতিভা রবীন্দ্রনাথের ক্ষুরধার লেখনী থেকে বেরিয়ে এসেছে বৈচিত্র্যময় ও বহুত্ববাদী চিন্তা-চেতনা। গতবছর বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ উদ্যোগে কবির সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনের ঘটনা শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়। কবিকে কেন্দ্রে করে যে সাংস্কৃতিক মৈত্রীর দ্বার উন্মোচন হলো, তার গুরুত্ব অপরিসীম।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ‘বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন শান্তি ও মানবতার কবি। প্রকৃতির চিরন্তন সৌন্দর্যের কবি। জীবন ও জগৎকে গভীরভাবে নিরীক্ষণ করেছেন। বিশ্বব্যাপী দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও বৈষম্যের বিলোপ সাধন এবং ধর্ম-বর্ণ-ভাষার বৈচিত্র্য সমুন্নত রাখতে রবীন্দ্রনাথের জীবন ও দর্শন এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। আমাদের মননে বিশ্বকবির ব্যঞ্জনাময় উপস্থিতি সাম্প্রদায়িকতা ও স্বৈরতন্ত্র প্রতিরোধে বাঙালির অগ্রযাত্রাকে চিরকাল অব্যাহত রাখবে।’
বিরোধীদলীয় নেতা তাঁর বাণীতে বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্ম জাতীয়তার গণ্ডি পেরিয়ে দেশ-দেশান্তরে হয়ে উঠেছে কল্যাণের অকৃত্রিম আলেখ্য। মানবপ্রেম, প্রকৃতিপ্রেম ও দেশপ্রেম তাঁর লেখনীর প্রধান অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করেছে। আজও আমরা সবাই তাঁর লেখনী দ্বারা উদ্বুদ্ধ এবং একই সঙ্গে তা সমাজের অনাচার, অবিচার আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়।’

No comments

Powered by Blogger.