দ্রুত তদন্ত হওয়া জরুরি-নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা

অপরাধ দমনে কঠোর আইন ও পৃথক আদালত গঠনই যে যথেষ্ট নয়, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার পরিণামই তার প্রমাণ। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে অধিকাংশ অপরাধী ছাড় পেয়ে যাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। প্রথম আলোতে প্রকাশিত খবরে জানা যায়,


২০০৮ সালে সারা দেশে ১৬১টি মামলার মধ্যে মাত্র ২৮টিতে অভিযুক্ত সাজা পেয়েছে, বাকি মামলার মধ্যে ৬৭টিতে আসামি খালাস পেয়েছে, চারটি বিচারাধীন রয়েছে। ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে ২০০৯ সালে নিষ্পত্তি হওয়া ৬৪৬ মামলার ৯৬ শতাংশ খারিজ হয়ে যায়।
বিপুলসংখ্যক মামলার আসামি খালাস পাওয়ার কারণ কি এই মামলাগুলো ভিত্তিহীন বা অভিযুক্তরা নিরপরাধ ছিলেন? না, সেটি আসল কারণ নয়। মামলা করলেই তো অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত হয় না। অপরাধীকে শাস্তি দিতে হলে মামলার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা যদি প্রতিবেদন দিতে দেরি করেন কিংবা পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদন দাখিল করেন, তাহলে ন্যায়বিচারের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়।
নারী নির্যাতন মামলাগুলো যেমন স্পর্শকাতর, তেমনি সব ক্ষেত্রে তথ্যপ্রমাণ হাজির করাও কঠিন। কেননা অপরাধীরা সাক্ষপ্রমাণ রেখে অপরাধ করে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অপরাধীরা প্রভাবশালী, তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতেও অনেকে ভয় পান। কখনো কখনো প্রতিপক্ষকে নাজেহাল করতেও নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা করা হয় সত্য, কিন্তু ৯৬ শতাংশ মামলা খারিজ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি মোটেই স্বাভাবিক নয়। এর জন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে একশ্রেণীর তদন্তকারী কর্মকর্তার যোগসাজশও দায়ী। আসামি হাতেনাতে ধরা পড়লে ১৫ কার্যদিবস ও পলাতক থাকলে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তারা অনেক ক্ষেত্রে তদন্ত নিয়ে টালবাহানা ও অযথা সময়ক্ষেপণ করেন। এতে মামলার প্রয়োজনীয় আলামতও নষ্ট হয়ে যায়।
খারিজ হয়ে যাওয়া মামলাগুলো পুনঃ তদন্ত করা প্রয়োজন এবং এ ক্ষেত্রে কারও গাফিলতি থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। অপরাধীরা যদি শাস্তি না পায়, তাহলে মামলা করে লাভ কী? ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা যাতে নির্বিঘ্নে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন এবং ন্যায়বিচার পান, সেই নিশ্চয়তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরই দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.