দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন-অর্থমন্ত্রীর স্পষ্ট ভাষণ

সমাজের সবখানে যে দুর্নীতি বিস্তৃত, এটা নতুন কথা নয়। যেটা নতুন তা হলো, দুর্নীতির ব্যাপক সম্পর্কে স্বয়ং অর্থমন্ত্রীর স্পষ্ট বক্তব্য। প্রশ্ন ওঠে, সরকার কী করছে? বিচার, প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভূমি, কর আদায়কারী সংস্থা থেকে শুরু করে থানা পর্যন্ত সবখানে দুর্নীতি। তাহলে বাকি থাকল কী?


শনিবার ঢাকায় সুশাসনবিষয়ক এক গোলটেবিল বৈঠকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেছেন, ‘থানার মূল ব্যক্তি হলেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। কিন্তু পুরো থানাতেই চলে ঘুষ।’ দুর্নীতি যে কত বড় দুর্ভোগ, তা সাধারণ মানুষ প্রতিদিন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। বিচার চাইতে গেলে মামলার তারিখের পর তারিখ পড়ে, আর প্রতি তারিখে বিভিন্ন টেবিলে টাকা ঢালতে হয়। বিচারপ্রত্যাশীরা সর্বস্বান্ত হন। ভূমি অফিসে সরকারকে খাজনা দিতে গেলেও ঘুষ লাগে!
সরকারের বিভিন্ন কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকলে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। কিন্তু এ দুটির অভাব যখন প্রকট, দুর্নীতি ফুলে-ফেঁপে ওঠাই তো স্বাভাবিক। বর্তমানে এ ব্যাপারটাই ঘটে চলেছে। অর্থমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, ‘কমিউনিটি উন্নয়ন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন—এ বিষয়গুলো সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারে।’ কিন্তু এ তিনটি খাতে সরকার গুরুত্ব দিলেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। ভূমি প্রশাসন, থানায় সাধারণ ডায়েরি করা বা কর প্রশাসনে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ এখনো ধীরগতিতে চলছে। এই অক্ষমতা প্রকারান্তরে এসব খাতে দুর্নীতির বিস্তারে সবুজসংকেত হিসেবে কাজ করছে।
কিন্তু শুধু বিকেন্দ্রীকরণ বা তথ্যপ্রযুক্তি যথেষ্ট নয়। সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন। সরকার তো অনেক কিছুই করেছে। বিচার বিভাগ পৃথক্করণ, তথ্য অধিকার আইন পাস, তথ্য কমিশন গঠন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠন প্রভৃতি সরকারের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হলেও এর সুফল সাধারণ মানুষ এখনো পাচ্ছে না। এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান তাঁর এক তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্যে বলেছেন, ‘দুর্নীতি শুধু আইন করে দমন করা সম্ভব নয়, এ জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছার।’
দুর্নীতির দুর্গে কামান দাগার কাজটা শুরু করতে হবে সরকারকেই। কথায় বলে, আপনি আচরি ধর্ম...। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সফল পদক্ষেপ নেওয়ার প্রথম সূত্র হলো, ওপর থেকে শুরু করুন। চুনোপুঁটির পেছনে সব শক্তি শেষ না করে দু-চারটা রাঘববোয়াল প্রথমে ধরুন। নিচের দিকের সবাই তখন বুঝবে যে দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না। প্রভাবশালীরা যত দিন ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবেন, তত দিন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন।
গণতন্ত্র ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থমন্ত্রী দুর্নীতির ব্যাপকতা সম্পর্কে মন্তব্য করে প্রকৃতপক্ষে এ ব্যাপারে সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার কর্তব্যটিও সামনে এনেছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এখন তা বাস্তবায়ন করা হোক।

No comments

Powered by Blogger.