ছয় পরিবারের পাশে বসুন্ধরা-এই ধারা আরো বেগবান হোক

'মানুষ মানুষের জন্য, মানুষ মানুষের সহানুভূতি পাবে'- এটা যেমন সব ধর্মের শিক্ষা, তেমনি নৈতিকতা, মূল্যবোধ, সমাজ বাস্তবতা, মানবিকতা- সব বিবেচনায়ই এটি একটি পরম সত্য। অথচ প্রায়ই আমাদের বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যায় এই পরম সত্যটি।


তাই তো বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরীর কণ্ঠে উঠে আসে এমনই আক্ষেপ, 'আমাদের সমাজে বিত্তের অভাব নেই, অভাব শুধু চিত্তের।' গত শনিবার বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে সম্প্রতি নানা কারণে বিপর্যয়ে পড়া ছয়টি পরিবারকে অর্থসহায়তার চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে তিনি এই আক্ষেপ প্রকাশ করেই বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তাই তিনি তাঁর সামাজিক দায়বদ্ধতাকে ভুলে যাননি। তাই তিনি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিক পরিবারসহ আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে এসেছেন। আজাদ চৌধুরী বসুন্ধরা গ্রুপের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিত্তবানদের প্রতি সমাজ এবং মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান। আমরাও চাই, বিত্তবানদের সহায়তায় সমাজের ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষ নতুন করে বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজে পাক।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে গত শনিবার সম্প্রতি নিহত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির একমাত্র সন্তান মেঘের বেড়ে ওঠা এবং লেখাপড়ার স্বার্থে ১৫ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়। এ ছাড়া সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সাংবাদিক বিভাষ চন্দ্র সাহা ও শহীদুজ্জামান টিটুর পরিবারের হাতে দুই লাখ করে চার লাখ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়। দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া জাতীয় প্রেসক্লাবের কর্মচারী সোহেলের হাতে তুলে দেওয়া হয় এক লাখ টাকার চেক। সহযোগিতা প্রদানের জন্য নির্ধারিত অন্য দুটি পরিবার হলো, সম্প্রতি ছিনতাইকারীদের কবল থেকে এক নারীকে রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হওয়া একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হজরত আলীর পরিবার এবং খিলগাঁওয়ে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া বাসচালক বদর আলীর পরিবার। এর আগেও বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সাংবাদিক দীনেশ দাসের পরিবারকে ১০ লাখ, প্রয়াত সাংবাদিক পথিক সাহার পরিবারকে ১০ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত আরেক সাংবাদিক নিখিল ভদ্রকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসা করানো বাবদ ৩৫ লাখ টাকা সহায়তা করা হয়। প্রয়াত নেওয়াজুল বারীর পরিবারকে ১০ বছর পর্যন্ত তাঁর বেতনের সমপরিমাণ টাকা প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইতিমধ্যে অসুস্থ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও কর্মচারীর সব চিকিৎসা ব্যয় বহন করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সমাজ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য রয়েছে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন।
মানুষের বিপদে, মানুষের কল্যাণে মানুষকেই তো এগিয়ে আসতে হবে। সৃষ্টির সেবার মধ্যেই তো নিহিত রয়েছে স্রষ্টার সন্তুষ্টি। নৈতিকতার বিচারেও তিনিই উত্তীর্ণ হবেন, যাঁর অন্তর কেঁদে উঠবে অন্যের ব্যথায়, বেদনায়। এসব বিচারে বসুন্ধরার চেয়ারম্যানের বর্তমান উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি মহৎ উদ্যোগ। আমরা অন্যান্য ব্যবসায়িক গ্রুপের কাছ থেকেও অনুরূপ উদ্যোগ আশা করি। সবাই মিলেমিশে আমরা একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।

No comments

Powered by Blogger.