অভিমত ভিন্নমত

শ্রমিক অসন্তোষ ও ন্যূনতম মজুরি তৈরি পোশাকশিল্পে শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে টালবাহানা, মজুরি কম দেওয়া, শ্রম আইন উপেক্ষা করা শিল্পমালিকদের একটি সাধারণ রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। তেমনি কয়েক বছর ধরে শ্রমিকদের ঘন ঘন বিক্ষোভ-আন্দোলনও এখন স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়ে উঠেছে।


গত এক দশকের ঘটনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, শ্রমিকদের অসন্তোষ যখন বিদ্রোহের রূপ নিয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টির উপক্রম হয়, তখন সরকার-মালিক-শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা বা চুক্তি সম্পাদন করা হয়।
সম্প্রতি মজুরি বৃদ্ধিসহ অন্যান্য দাবিতে কাঁচপুর ও মিরপুরে শ্রমিক অসন্তোষ চলছে। কাজের পরিবেশ ও কম মজুরির কারণে চট্টগ্রামে পোশাকশিল্প-কারখানায় শ্রমিক খুঁজতে এখন মালিকদের রাস্তায় মাইকিং করতে হচ্ছে।
ক্ষুধার্ত শ্রমিক সর্বোচ্চ উৎপাদন দিতে পারেন না। দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সংগতি রেখে ন্যূনতম মজুরি পরিবর্তন-পরিবর্ধনের প্রয়োজন রয়েছে। তা না হলে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের উদ্দেশ্যই অর্থহীন হয়ে পড়ে।
রপ্তানি-আয়ের শীর্ষে ৭৬ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী এ শিল্প খাতের ৩০ লাখ শ্রমিকের অবদান বিরাট। এখানে কর্মরত শ্রমিকদের বেঁচে থাকার উপযুক্ত মজুরি শুধু প্রত্যাশা নয়, প্রয়োজনও বটে। এটা প্রয়োজন এই শিল্পকে অস্থিরতামুক্ত রেখে স্থায়ীভাবে টিকে থাকা, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো ও দেশের অগ্রগতির জন্য।
এ শিল্প খাতে সর্বপ্রথম ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৯৯৪ সালে, এরপর ২০০৬ সালে শ্রমিক বিদ্রোহের ঘটনার পর শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে তিন হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি দাবি করার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এক হাজার ৬৬২ টাকা ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করে। গত চার বছরে দ্রব্যমূল্য দুই-তিন গুণ বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত ভাড়াও বেড়েছে। মূল্যবৃদ্ধির এই কশাঘাতে শ্রমিক এখন জর্জরিত।
মালিক সমিতি বিজেএমইএ/ বিকেএমইএ বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার প্রভাব ইত্যাদির যুক্তি দেখিয়ে এত বছর কাটিয়েও মজুরি বাড়ানোর বিষয়টি ঠান্ডাভাবে পার করে দিতে চাইছে। মালিক সমিতিগুলোর কথা যুক্তির খাতিরে মেনে নিলেই কি শ্রমিকেরা অর্ধাহারে-অনাহারে কারখানায় কাজ করবে? জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সাংসদ, বিচারপতি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বেশ বাড়ানো হয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর দাবি সেই বিচারে অনেক বেশি যুক্তিসংগত।
একজন মানুষকে কর্মক্ষম হিসেবে টিকে থাকতে হলে দৈনিক কমপক্ষে ২২০০ ক্যালরি তাপ উৎপাদন করার মতো খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট যে খাদ্যতালিকা প্রণয়ন করেছে, তাতে এখন একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের এক দিনের প্রয়োজনীয় খাদ্যের জন্য কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরকার। চার সদস্যের প্রতি মাসে খাবার খরচ, বাসা ভাড়া, যানবাহন ব্যয়, কাপড়চোপড়, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ সব মিলিয়ে ন্যূনতম মজুরি হওয়া উচিত—সব শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে—পাঁচ হাজার টাকা। শ্রমিক যাতে তাঁর মজুরির মাধ্যমে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানুষের মতো বাঁচতে পারে, সেটাই ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়।
পোশাকশিল্পের অবস্থা কী, শ্রমিকেরা কী করবে, তা নির্ভর করবে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিসহ ন্যায্য দাবি ও ত্রিপক্ষীয় চুক্তি বাস্তবায়ন করা না-করার ওপর। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সময়োচিত যুক্তিসংগত উদ্যোগ নিলে পোশাকশিল্পের স্থিতিশীলতা, সৌহার্দ্যময় পরিবেশ আরও উন্নত হবে।
মাহবুবুর রহমান ইসমাইল
আইনজীবী, ঢাকা।
ad.mr.ismail@gmail.com

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার
বহু প্রতীক্ষার পর মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার-প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই বিচারের জন্য দেশবাসীকে অনেক আন্দোলন করতে হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে এই বিচার সম্পন্ন হলে জাতি বিরাট কলঙ্ক থেকে মুক্তি পাবে।
বিএনপি বলছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার স্বচ্ছ হলে এতে তাদের কোনো আপত্তি নেই। আবার তারা বলছে, দেশে তো এখন কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই। এই কথার মাধ্যমে প্রকারান্তরে তারা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষেই অবস্থান নিচ্ছে। সমগ্র জাতি যখন এই বিচারের দাবিতে আন্দোলন করছে তখন তারা দাবি জানাচ্ছে না যে, সরকারকে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে হবে। বরং বিভিন্ন মঞ্চে বিএনপির নেতারা জামায়াতিদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে যেসব বক্তব্য দিচ্ছে, তাতে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
এই বিচার-প্রক্রিয়ার আন্তর্জাতিক মান নিয়েও কথা বলা হচ্ছে। এটিও আসলে আলাদা কিছু নয়। বিচারকার্যটি কীভাবে বিলম্বিত করা যায় বা বানচাল করা যায়, সে অপচেষ্টারই একটি অংশ কি না, তা ভেবে দেখতে হবে।
আমরা জনসাধারণ বিএনপিকে বিনীতভাবে আরেকবার তাদের এই অবস্থান পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি। দেশের মানুষ চায় না তাদের প্রিয় সংগঠন বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নিক।
কাজী জোবায়েদ
কোমারপুর, আদমদীঘি, বগুড়া।

১০ টাকায় কৃষকের ব্যাংক হিসাব
রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন গ্রামীণ শাখায় এবং জেলা পর্যায়ের প্রধান প্রধান শাখায় ১০ টাকায় কৃষকের হিসাব খোলার হিড়িক পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এ বিষয়ে কৃষক হয়রানির ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ব্যাংকারদের উদ্দেশে। তাই ব্যাংকের শাখাগুলো যেন জ্বলন্ত উনুনের ওপর বসে এই কাজটি প্রাণপণে করে চলেছে। প্রতি বৃহস্পতিবার সারা সপ্তাহে খোলা হিসাবের কৃষকের নাম, পিতার নাম, মুঠোফোন নম্বর, জমির পরিমাণ, কৃষক পরিচিতি নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ইত্যাদি তথ্যসংবলিত বিস্তারিত বিবরণও বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানোর জন্য তাদের নিজ নিজ নিয়ন্ত্রণকারী কার্যালয়ে পাঠাচ্ছে শাখাগুলো। প্রতি সপ্তাহে ৫০০ থেকে ৬০০ হিসাবের বিস্তারিত তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কী প্রয়োজন, তা বোধগম্য নয়। হিসাব খোলার গতি মনিটর করার জন্য শুধু প্রতি সপ্তাহে খোলা হিসাবের সংখ্যা জানালেই যথেষ্ট নয় কি? এই অপ্রয়োজনীয় মনিটরিং পদ্ধতিতে কী পরিমাণ সময়, শ্রম ও কাগজের অপচয় হয়, তা কি কেউ ভেবেছেন? অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এই যে বিশাল তথ্যভান্ডার বাংলাদেশ ব্যাংক সংগ্রহ করছে, তা থেকে ভবিষ্যতে কেউ চাইলে, দৃষ্টান্তস্বরূপ, ‘সোনালী ব্যাংকের চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখা মোট কতজন কৃষকের হিসাব খুলেছে’—এই তথ্যটি দিতে পারবে না। নিশ্চিতভাবেই বলছি, বাংলাদেশ ব্যাংক এই তথ্যটি দুই মাস পর সরবরাহ করতে পারবে না। তাহলে যে তথ্য সংগ্রহ করে অবহেলায় আস্তাকুঁড়ে ফেলে রাখা হবে, তার জন্য এই বিশাল অপচয়ের মানে কী?
এ সময় দেখা যাচ্ছে, মাটি ফুঁড়ে কৃষক বের হচ্ছে। কৃষির সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই—এমন লোকও কৃষক পরিচয়পত্র পেয়েছে। সরকারগুলো ক্ষমতায় আসার পর নতুন একটা কর্মসূচি দিয়ে সারা দেশে একটা হুজুগ তুলে দেয়, আর ওই কর্মসূচির নামে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থের অপচয় ঘটে। ১৯৮২-৮৩ সালে তাঁতঋণ দিতে বাধ্য করে ব্যাংকগুলোর শত শত কোটি টাকা আজও অনাদায়ী পড়ে আছে। বিগত জোট সরকার ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালনের জন্য ঋণ দিতে এমনিভাবেই ব্যাংকগুলোকে বাধ্য করেছিল। এই খাতেও আছে শত শত কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। কোনো দিনও এসব ঋণ আদায় হবে না।
আটকে পড়া বিশাল শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ে বড় কোনো পলিসি নেই, প্রাইভেট ব্যাংকগুলোর লাগামহীন ব্যাংকিং কার্যক্রম এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেই। জাতি এসব বিষয়ে গভর্নরের ভাবনার প্রকাশ দেখতে চায়। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, ছাত্রী উপবৃত্তি, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, স্কুলশিক্ষকদের বেতন, সামরিক অবসর ভাতা, গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, কৃষিঋণ, ১০ টাকায় হিসাব খোলা, লটারির টিকিট বিক্রয়—এসব নিয়েই এখন আছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। তাই তো এসব ব্যাংকের ব্যবসায়িক কার্যক্রম দিন দিন সংকুচিত হয়ে চলেছে। আমানত কমছে, শ্রেণীকৃত রেমিট্যান্স কমছে, বৈদেশিক ব্যবসা কমছে, ঋণ বাড়ছে। এসব বিষয় নিয়ে ভাবনাটা কার আছে, তা তো বোঝা যায় না।
রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এমনিতেই মানসম্মত দক্ষ লোকের অভাব, তার ওপর জনবলের সংকট। এ অবস্থায় নানা রকম সামাজিক নিরাপত্তামূলক নতুন নতুন কর্মসূচি ব্যাংকগুলোকে দিয়ে বাস্তবায়ন করতে চাইলে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাবটা কী হতে পারে, তা একবার সবাইকে ভেবে দেখতে বলি।
শিশির চৌধুরী
ঢাকা।

পুলিশ, অসহায়ত্ব এবং
আমরা পুলিশ বাহিনীর সমালোচনা করি। ব্যর্থতা, দায়িত্বহীনতা, দুর্নীতি ইত্যাদি নানা অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, সারা দিন কর্মক্লান্ত হয়ে রাতে যখন নিদ্রায় যাই, তখন এই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা রাত জেগে পাহারা দেয়। রাজনৈতিক সভা, ধর্মীয় সভা, সামাজিক বা বিনোদনের অনুষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিদেশি রাষ্ট্রদূত, যানবাহনসহ এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে পুলিশ বাহিনী জনগণকে নিরাপত্তা দিচ্ছে না। বিশাল এই বাহিনীর ভেতরে কিছু অসৎ সদস্য যে নেই, তা নয়।
দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ২০০০ সালে সার্জেন্ট আহাদ, ২০০২ সালে এসআই কনকউজ্জামান, ২০০৩ সালে দুজন ডিবি কর্মকর্তা, একই বছরে সিআইডি ইন্সপেক্টর নজরুল ইসলাম এবং সর্বশেষ গত ২০ এপ্রিল এসআই গৌতম রায় সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়েছেন। খুনের ঘটনার তদন্ত হয়, দোষীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাজাও হয়তো পায়। কিন্তু নিহত ব্যক্তির রেখে যাওয়া পরিবারের অসহায় সদস্যদের কথা কি আমাদের আর মনে থাকে? তারা পারিবারিক, আর্থিক ও সামাজিকভাবে হয়ে পড়ে অসহায়, অসচ্ছল ও নিরাপত্তাহীন।
সামান্য বেতন, উৎসব-পার্বণেও পরিবারকে দেওয়ার মতো সময় না থাকা, প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা, অপর্যাপ্ত পরিবহনব্যবস্থা—এই অব্যবস্থাগুলো কি তাদের অসৎ পথে ঠেলে দিচ্ছে না? একটি কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া উচিত, যাতে করে এই বাহিনীর উন্নতি হয়। একটি সময়োপযোগী বেতনকাঠামো দরকার প্রথমেই। এই বিভাগে কাজ করা যেহেতু বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, তাই এদের বেতনও হতে হবে আকর্ষণীয়। অত্যাধুনিক অস্ত্র, চাকরিরত অবস্থায় অপরাধের ধরন অনুযায়ী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, প্রতিটি থানাকে আইটি সিস্টেমের আওতায় আনা, পর্যাপ্ত যানবাহনের ব্যবস্থা করা, লোকবল বাড়ানো এবং ডিউটির সময়সীমা কমিয়ে একটি সহনীয় পর্যায়ে আনা, ইলেকট্রনিক সিগন্যাল সিস্টেম কার্যকরভাবে চালু করে ট্রাফিক ও সার্জেন্টদের অতিরিক্ত চাপ থেকে মুক্ত করা, সন্ধ্যার পর থেকে টহল বৃদ্ধি করা, যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার মাধ্যমে আধুনিক, যুগোপযোগী ও জনগণের বন্ধুসুলভ একটি সুশৃঙ্খল পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলা সম্ভব।
মারুফ হাবীব, মিরপুর, ঢাকা।

আমলাতন্ত্রে বসবাস
জীবনের প্রথম চাকরির পরীক্ষায় টিকে গেলাম, তাও বাংলাদেশ ব্যাংকে। আবেদন করার সময় বিভাগ থেকে তখনো সম্মান পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়নি। আমরা বিভাগীয় প্রধানকে অনুরোধ করলে তিনি দ্রুত ব্যবস্থার মাধ্যমে ২২ জুন ২০০৯ টেবুলেশন শিট প্রকাশ করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে পাঠান। আমরা সেই মতে ওয়েবসাইটে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের তারিখ পূরণ করি।
মৌখিক পরীক্ষার তারিখ জানানোর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানানো হয়, আমাদের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের তারিখে সমস্যা আছে, ৩০ জুনের আগে তা প্রকাশিত হয়নি, যা চাকরির বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল। বিভাগে ছুটে গেলে জানানো হয় পরীক্ষার ফলাফল অবশ্যই ৩০ জুনের আগে প্রকাশিত হওয়ার কথা। কারণ ২২ জুন তা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এবার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে গেলে কর্মকর্তারা জানান, ‘সকল আনুষ্ঠানিকতা’ সম্পন্ন করার পর তাঁরা ১৩ জুলাই আমাদের সম্মান চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছেন। এরপর স্বাভাবিকভাবেই বুঝতে পারলাম, আমি আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছি না। বাবা-মা, আত্মীয়স্বজনকে বোঝাতে অনেক বেগ পেতে হলো, কেন মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারলাম না। এ রকম আমলাতন্ত্রের বিষবাষ্পে যেন আর কোনো সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট না হয়।
শাহাদাত জামিল
শ্রীরামপুর, সিলেট।

সমুদ্রসৈকতগুলোর পরিবেশ
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার নিয়ে আমাদের গর্বের শেষ নেই। কিন্তু ১২০ কিলোমিটার (কক্সবাজার-টেকনাফ) দীর্ঘ সৈকতের পরিবেশ আজ হুমকির মুখে।
সমুদ্রসৈকতে দেদার চলে চান্দের গাড়ি, মোটরসাইকেলসহ নানা যান। এসব যানে প্রতিনিয়ত পিষ্ট হয়ে মারা যায় জেলিফিশ, লাল কাঁকড়া, পোকামাকড়সহ নানা সামুদ্রিক প্রাণী। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব প্রাণী মারা যাওয়ায় পুরো সৈকতের প্রতিবেশব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া এখন নদী দখলের মতো সৈকত দখলেরও প্রতিযোগিতা চলছে। অবৈধভাবে সৈকত দখল করে নানা ধরনের স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা ধীরে ধীরে সমুদ্রের অতি নিকটে চলে যাচ্ছে। এগুলো যেকোনো সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়তে পারে। এভাবে পর্যটকদের এক প্রকার বিপদের মুখেই ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া স্থাপনাগুলোর জায়গা ভরাট করার কাজে ব্যবহূত হচ্ছে আশপাশের পাহাড়ের মাটি। এ জন্য কক্সবাজারে পাহাড় কাটার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সৈকতে ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বালু, পাথর তোলার খবরও পাওয়া যায়। সৈকতে শামুক-ঝিনুক আহরণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়। সব মিলিয়ে সৈকত এলাকার পরিবেশ এখন মারাত্মক হুমকির মুখোমুখি।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্র-উপকূল কুয়াকাটারও একই অবস্থা। কুয়াকাটার ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতে চলাচল করে ভাড়ায় চালিত দেড় শতাধিক মোটরসাইকেল। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ভাড়ার মোটরসাইকেলগুলো পর্যটকদের নিয়ে সৈকতের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত ছোটাছুটি করে। মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানের চাকায় প্রতিদিনই পিষ্ট হয় সৈকতে বাসকারী নানা ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সৈকতের অবস্থাও একই রকম। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে।
এই সমুদ্রসৈকতগুলো আমাদের পর্যটনশিল্পের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। পর্যটনশিল্পকে ঘিরে রয়েছে বহু মানুষের জীবন-জীবিকা, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি। তাই পর্যটনশিল্পের বিকাশের স্বার্থেই আমাদের সৈকতের পরিবেশ রক্ষা করা জরুরি। পর্যটনশিল্পে উন্নত দেশগুলো সৈকতের পরিবেশ ধ্বংস করে কখনো পর্যটনকেন্দ্র গড়ে না।
পরিবেশ অধিদপ্তর দেশের বেশির ভাগ সমুদ্রসৈকতকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করেছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্যক্রম পরিচালনা করলে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। তাই সৈকতের পরিবেশ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
রানা আব্বাস, শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
rana_geographer@yahoo.com

দ্বীপচরের মানুষ
ভৌগোলিক অবস্থান অনুসারে বাংলাদেশের চরগুলো মূলত দুই ধরনের—দ্বীপচর ও মূল ভূমির সন্নিহিত চর। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অনেক দ্বীপচর আছে। এগুলো আছে পদ্মা, যমুনা, তিস্তা ও ধরলার বুকজুড়ে। এ দ্বীপচরগুলো দুর্গম, মূল ভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন। গ্রীষ্মে পায়ে হেঁটে, বর্ষায় নৌকা ছাড়া দ্বীপচরগুলোতে যোগাযোগের আর কোনো পথ নেই। বছরের বেশির ভাগ সময়ই দ্বীপচরগুলো পানিবন্দী থাকে।
দ্বীপচরগুলোতে অভাব নিত্যসঙ্গী। সারা বছরই কমবেশি খাদ্যকষ্টে থাকে প্রায় ৬৫ শতাংশ পরিবার। খাদ্যের পুষ্টিমান কম। নারী ও শিশুদের অবস্থা বেশি নাজুক। বেশির ভাগ শিশুর দেহ কঙ্কালসার, তাদের মানসিক বিকাশও ব্যাহত। মায়েদের অবস্থাও করুণ, বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের। পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা নেই। স্থানীয় কবিরাজ, গ্রাম্য চিকিৎসক, নয়তো সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা। শিশুরা বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন রোগে ভোগে। শিশুমৃত্যুর হারও অনেক বেশি। প্রসবপূর্বকালীন এবং পরে এখানকার নারীদের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সৌভাগ্য হয় না। বাচ্চা হওয়ার আগে ও পরে একজন নারীর যেসব টিকা নেওয়া দরকার, সেগুলোও তারা নেওয়ার সুযোগ পায় না। এ কারণে এখানে মাতৃত্বকালীন মৃত্যুর হারও অনেক বেশি।
দ্বীপচরগুলোতে শিক্ষা নেই বললেই চলে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা নগণ্য। অনেক স্কুলে শিক্ষক নেই। আবার শিক্ষক আছেন তো তাঁরা নিয়মিত ক্লাস নেন না। শিশুরা স্কুলে যেতে চায় না। কর্মজীবী শিশুর সংখ্যা অনেক।
দ্বীপচরবাসী কেন বঞ্চিত? বর্তমান সরকার দেশের দরিদ্র মানুষের সার্বিক জীবনমান উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দ্বীপচরবাসীর মৌলিক অধিকার রক্ষায় সরকারের উচিত বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখা।
মো. জাহিদুর রহমান, উন্নয়নকর্মী
ঢাকা।

‘শালিকের মুখে মানুষের বোল’
গত ৩০ এপ্রিল অন্য আলোয় ‘শালিকের মুখে মানুষের বোল’ নামে একটি প্রতিবেদনে লিখেছেন: “...‘মা, ভাত আছে।’ ‘কালাম ভাত দেও।’ ‘আয়... ময়না আয় আয়।’ এ রকম আধো আধো আলতো কথা মানবশিশুর মুখেই শোনা যায়। কিন্তু এমন কথা ও ডাক যদি শোনা যায় কোনো বুনো পাখির মুখে, বিশেষ করে শালিকের মুখে, তাহলে তা অবিশ্বাস্য মনে হবে।”
আসলে, শালিকের মানুষের মতো কথা বলতে পারা অবিশ্বাস্য বা আশ্চর্য ঘটনা নয়। পাখিদের ভোকাল কর্ড মানুষের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত; চেষ্টা করলে অনেক প্রজাতির পাখিকে দিয়ে কথা বলানো সম্ভব। কালাম যেমন চেষ্টা করে পেরেছেন। প্রতিবেদক আরও লিখেছেন, ‘কথা বলার পাখির অভাব এই দুনিয়ায় নেই। কাকাতুয়া বা ময়না পাখির কথা বলার ব্যাপারটা সবাই জানেন।’ এ প্রসঙ্গে বলতে চাই, কাকাতুয়া ও ময়না দুটি ভিন্ন প্রজাতির পাখি। শালিক ও ময়না একই গোত্রের (স্ট্রুনিডি) পাখি, তাই শালিক ও ময়না পাখির মধ্যে তেমন উল্লেখযোগ্য পার্থক্য নেই। ময়না একটু মোটাসোটা, ঠোঁট ও লেজ অপেক্ষাকৃত কম সুচালো, বাস করে পাহাড়ি বনে ও তার আশপাশের গাঁয়ে। কিন্তু শালিক গ্রামগঞ্জে, শহরের পথ-ঘাটে, গাছে নিত্য আনাগোনা দেয় ও বসবাস করে।
প্রতিবেদনের সঙ্গে যে ছবিটি ছাপা হয়েছে, তা আমাদের অতি পরিচিত ভাত-শালিক। ভাত-শালিক দেশের সর্বত্র আছে। এ শালিকের বৈজ্ঞানিক নাম Acridotheres tristis। ইংরেজি নাম Common Mayna। শালিক পরিবারের ময়নাদের পর ভাত-শালিক ভালো কথা বলতে পারে। তারপর আছে ঝুঁটি শালিক। উল্লেখ্য, গত বছর সুনামগঞ্জের সাঙ্গাইড় হাওরে একটি ভাত-শালিকের দেখা পেয়েছিলাম, সেটিও মানুষের মতো কথা বলতে পারে, কিন্তু ওই শালিকটি সব সময় মুক্ত থাকে, মাঠে-ঘাটে খাবার খেয়ে মনিবের বাড়ি চলে যায়। কেবল মনিব নাম ধরে ডাকলে তার কাছে যায়। ঢাকার মিরপুরে এক বাড়িতে খাঁচাবন্দী দুটি ঝুঁটি শালিক দেখেছিলাম, ওরাও কথা বলতে পারে।
বনের পাখিকে কখনোই খাঁচায় মানায় না। কালাম যে শালিক পাখিটি পুষছেন, সেটি হয়তো বেশি দিন বাঁচবে না। কারণ ওর যেসব খাদ্য ও পুষ্টি উপাদান দরকার, তা কখনোই কালাম দিতে পারবেন না। পাখি পোষা একটি অতি নিম্নমানের বিনোদন। সবার এ বিনোদন পরিহার করা উচিত। পাখির মুক্ত আকাশ, গাছপালা ও মাঠ-ঘাটই জন্মগত পরিবেশ এবং সেই পরিবেশে সুস্থ ও নিরাপদভাবে বেঁচে থাকতে পারা জন্মগত অধিকার। তাই ওদের সেখানেই থাকতে দিন এবং অধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন না।
পশুপাখি শিকার, গাছ কেটে বন ধ্বংস করা, খাঁচায় পোষা, পাখিব্যবসা, ফসলখেতে বিষ দেওয়ার মতো বিভিন্ন দূষণমূলক কাজ এবং আমাদের অবহেলা ও নিষ্ঠুরতার জন্য পৃথিবী থেকে অনেক পাখি হারিয়ে গেছে। আমাদের দেশের অনেক পাখিই এখন বিপন্ন ও বিলুপ্ত। শালিকদের আমরা হারাতে চাই না।
সৌরভ মাহমুদ, নিসর্গী, ঢাকা।
bdsourav@gmail.com

চবিতে অচলাবস্থা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গত দুই মাসের ব্যবধানে তিনজন মেধাবী ছাত্র খুন হওয়ায় আমরা সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা কঠোর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবরই বলে আসছে যে বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। গুটিকয়েক বখাটে-সন্ত্রাসীর হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ হাজার শিক্ষার্থী আজ বন্দী হয়ে পড়েছেন। দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আজ অস্থির। আদর্শ আর মেধার চর্চা বাদ দিয়ে শিক্ষাঙ্গন হয়ে উঠেছে দখলদারি আর সন্ত্রাসের আস্তানা। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফারুক হত্যার পর আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সারা দেশে চিরুনি অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। অথচ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পর পর তিনজন ছাত্র নিহত হলেও সরকার বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা দেখা যাচ্ছে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো শুধু ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগের নন, তিনি আমাদের সবার মন্ত্রী। অতএব, অবিলম্বে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
মো. সাহেদ
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments

Powered by Blogger.