হৃদরোগে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায় 'অ্যাজিথ্রোমাইসিন'

বহু ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ অ্যাজিথ্রোমাইসিন হৃদরোগে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়। গত বুধবার নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে এ দাবি করা হয়েছে। বাংলাদেশের বাজারেও দেশি-বিদেশি ৬৭টি প্রতিষ্ঠানের ১৩৭টি ব্র্যান্ডের 'অ্যাজিথ্রোমাইসিন' গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ আছে।


স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এসব ওষুধ ট্যাবলেট, ক্যাপসুল বা সিরাপ রূপে তৈরি, যা বাংলাদেশে বহুল ব্যবহৃত।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, কানের সংক্রমণ ও যৌন রোগের চিকিৎসায় অ্যাজিথ্রোমাইসিন ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আশির দশকে বিশ্বব্যাপী এর বাজারজাত শুরু হয়। এটি মানবদেহে বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার রোধ করে। কয়েক দশক ধরে ওষুধটি ব্যবহৃত হয়ে এলেও রোগীদের ওপর এর মারাত্মক প্রভাবের বিষয়টি এই প্রথমবারের মতো নজরে আনলেন গবেষকরা। পরীক্ষায় দেখা যায়, অন্য অ্যান্টিবায়োটিকের চেয়ে বা যারা কোনো অ্যান্টিবায়োটিক নেয়নি এমন রোগীদের তুলনায় অ্যাজিথ্রোমাইসিন ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে প্রথম পাঁচ দিনে হৃদরোগের ঝুঁকি আড়াই গুণ বেশি।
গবেষণাটি চালান যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, এ গ্রুপের আরেকটি বিকল্প অ্যান্টিবায়োটিক হচ্ছে অ্যামোক্সিসিলিন। অ্যামোক্সিসিলিন গ্রহণকারী রোগীদের চেয়ে অ্যাজিথ্রোমাইসিন গ্রহণকারী রোগীদের মৃত্যুর সংখ্যা বেশি, প্রতি ১০ লাখে ৪৭ জন। অন্যদিকে হৃদরোগ আছে এমন রোগীদের মধ্যে যারা অ্যামোক্সিসিলিন গ্রুপের ওষুধ নিয়েছে, তাদের তুলনায় অ্যাজিথ্রোমাইসিন নেওয়া রোগীদের মৃত্যুর ঘটনা প্রতি ১০ লাখে ২৪৫ জন পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ কালের কণ্ঠকে জানান, অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশে অ্যাজিথ্রোমাইসিন ব্যাপকভাবে প্রচলিত একটি ওষুধ। এ অ্যান্টিবায়োটিক বহু রোগের ক্ষেত্রে কার্যকর হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ১৯৯২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় টেনেসি অঙ্গরাজ্যে অ্যাজিথ্রোমাইসিন গ্রহণকারী তিন লাখ ৪৮ হাজার রোগীর প্রেসক্রিপশন সংগ্রহ করে এ গবেষণা চালান। তাঁরা ওষুধটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও রোগীদের এর ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁদের মতে, এ গবেষণা চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন চিন্তার সুযোগ তৈরি করবে।
গবেষক দলের বিশেষজ্ঞ ও ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওয়েন রে বলেন, 'আমাদের বিশ্বাস, এ গবেষণা অ্যাজিথ্রোমাইসিনের ঝুঁকি বিষয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।'
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রসঙ্গে বলেন, 'অ্যাজিথ্রোমাইসিন থেকে মৃত্যুঝুঁকির তথ্য এই প্রথম। এর আগে এমনটা শোনা যায়নি। গবেষণাটি ভালো করে দেখতে হবে।'

No comments

Powered by Blogger.