চিকিৎসক ও চিকিৎসাকেন্দ্রের জবাবদিহি প্রয়োজন-অপচিকিৎসার দৌরাত্ম্য

ভুল চিকিৎসায় রোগীর জীবন হলো মরণাপন্ন আর প্রতিবাদী হওয়ায় স্বজনেরা হয়েছেন মারধরের শিকার, তিন ঘণ্টা বন্দী থেকেছেন দড়িবাঁধা অবস্থায়। ঢাকার বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই ধরনের ঘটনাই ঘটেছে। বলা বাহুল্য, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।


দেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে প্রায়ই রোগীরা এ রকম অপচিকিৎসার শিকার হয়। সেখানেই শেষ হয় না; আর্থিক, শারীরিক খেসারতও দিতে হয় তাদের।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের অপরাধ দুটি: প্রথমত, তাঁরা রোগীর স্বজনদের অনুমতি না নিয়েই রোগীর পেটে অস্ত্রোপচার করেন। দ্বিতীয়ত, ওই রোগীর দেহকে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের শেখানোর গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করতে গিয়ে নাড়িভুঁড়ি কেটে ফেলেন। গত সোমবার প্রকাশিত প্রথম আলোর সংবাদ অনুসারে সেই রোগীর এখনো জ্ঞান ফেরেনি। অপকর্মটি গণমাধ্যমকর্মীদের জানানোয় হাসপাতালের লোকজন রোগীর তিন স্বজনকে বেদম প্রহার করে ভূগর্ভস্থ গ্যারেজে বেঁধে রাখে। তিন ঘণ্টা এভাবে বন্দী থাকার পর পুলিশ এসে তাঁদের উদ্ধার করে। এই হলো ঢাকার ধানমন্ডির ওই বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাপদ্ধতি। বোঝা গেল, হাসপাতাল ও ক্লিনিক চালাতে হলে কেবল চিকিৎসকই লাগে না, পেশিশক্তিরও প্রয়োজন হয়।
কেবল বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই এমনটা ঘটে, তা নয়; ঢাকা নগরসহ দেশের অনেক নামীদামি ক্লিনিক থেকে শুরু করে ছোটখাটো ক্লিনিকগুলোতে প্রায়শই অপচিকিৎসা, আর্থিক হয়রানি ও অবহেলার ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। এদের দৌরাত্ম্যের কাছে রোগীকে থাকতে হয় অসহায়। ভণ্ড পীর বা ভুয়া কবিরাজের অপচিকিৎসা নিয়ে আমরা যত সোচ্চার, আধুনিক ও বাণিজ্যিক চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোর অন্যায় ও অপকর্মগুলোর বিষয়ে যেন ততটাই উদাসীন। এ বিষয়ে আইন রয়েছে, কিন্তু প্রতিকারের উদ্যোগ নেই। কাজটা সরকারের। অপচিকিৎসা ও চিকিৎসা-বাণিজ্যের দৌরাত্ম্য কমানোর জন্য সরকারের সুনির্দিষ্ট সংস্থা থাকা প্রয়োজন। প্রয়োজন অভিযোগ দাখিল ও তা তদন্ত করে বিচারের সহজ বন্দোবস্ত। পৃথিবীর বহু দেশে এমন বিধান ও সংস্থা রয়েছে।
বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এই ঘটনা আমাদের বাণিজ্যিক চিকিৎসা বন্দোবস্তের ভেতরের অন্যায় ও অনিয়মকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আশা করি, সরকারি বা বেসরকারি চিকিৎসাব্যবস্থার গলদ দূর করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে।

No comments

Powered by Blogger.