সময়চিত্র-দয়া করে এবার থামুন by আসিফ নজরুল

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে এ দেশে কিছু উদ্ভট ঘটনা ঘটেছিল। এর মন্দ দিক ছিল, ভালো দিকও ছিল। এমন একটি ঘটনা ঘটে ২০০৮ সালের ১৯ জুন। রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে এদিন একটি চিঠি পাঠানো হয় সুপ্রিম কোর্টে। চিঠির সঙ্গে একটি ছক পাঠিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের কাছে তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতাবিষয়ক কিছু তথ্য জানতে চাওয়া হয়।


সে সময় দেশে ছিল আর্মির দাপট। এ কারণে হোক আর অন্য কোনো কারণে হোক, ১৪ জন বিচারক এই ছক পূরণ করে পাঠিয়ে দেন রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে। বাকি বিচারকেরা একজোট হয়ে এই ‘অবমাননাকর’ চিঠির উত্তরদানে বিরত থাকেন।
গত বছর ইউএনডিপির পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতের ওপর একটি গবেষণা করতে গিয়ে ১৪ জনের উপরিউক্ত তথ্যাবলি হস্তগত হয় আমার। বিচারকদের নিজস্ব স্বাক্ষরে প্রদত্ত এই তথ্যাবলি অনুসারে তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল নিম্নরূপ।

 এই ১৪ জন বিচারপতির মধ্যে চারজন তাঁদের শিক্ষাগত জীবনের সর্বস্তরে (এসএসসি, এইচএসসি ও স্নাতক) তৃতীয় শ্রেণী বা তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। পরে তাঁরা বিভিন্ন আইন কলেজ থেকে এলএলবি পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
 ১৪ জনের মধ্যে নয়জন শিক্ষাজীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে তৃতীয় বিভাগ বা শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
 মাত্র দুজনের আইন ডিগ্রি ছিল কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, অন্যরা পাস করেছিলেন বিভিন্ন কলেজ থেকে।
 ১৪ জনের মধ্যে সবাই বিএনপি বা আওয়ামী লীগ আমলে বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। এঁদের অধিকাংশই ছিলেন আইনজীবী।

সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান অতিসম্প্র্রতি নিয়োগ পাওয়া ১৭ জন বিচারকের শিক্ষাগত যোগ্যতার যে বিবরণ তাঁর একটি প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন, তাতেও একই চিত্র পাওয়া গেছে। মিজানুর রহমান তাঁর প্রতিবেদনে নিয়োগ পাওয়া কোনো কোনো বিচারকের অভিজ্ঞতার ঘাটতি, রাজনৈতিক দলসংশ্লিষ্টতা এমনকি প্রশ্নবিদ্ধ অতীতকেও তুলে ধরেছেন। এরও আগে প্রথম আলোতে ১২ এপ্রিল প্রকাশিত লেখায় একই ধরনের প্রশ্ন তুলেছেন প্রখ্যাত আইনজীবী শাহ্দীন মালিক। হাইকোর্টে নিয়োগ পাওয়া বিচারকদের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন তুলেছেন কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিসহ আরও কেউ কেউ। মিজানুর রহমানের লেখার প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রথম আলোর ওয়েব সংস্করণে শতাধিক পাঠক তাঁদের ক্ষোভ, হতাশা ও শোচনীয় মর্মবেদনার কথা লিখেছেন।
প্রশ্ন সবার একই রকম। দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়ে বিচারক নিয়োগের নামে এসব কী হচ্ছে? কবে বন্ধ হবে এই সর্বনাশা প্রবণতা।

২.
বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমেই চোখে কাঁটার মতো বিঁধে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি। দু-একজন প্রশ্ন তোলেন: তৃতীয় বিভাগ বা শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হলে কি কেউ অযোগ্য হয়ে যান? আমরা মনে করি, তৃতীয় শ্রেণীতে পাস করা অবশ্যই একটি অযোগ্যতা। এটি যদি অযোগ্যতাই না হয়, তাহলে বিভিন্ন সরকারি চাকরি, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কেন তৃতীয় বিভাগ পাওয়াদের আবেদন করতেই বারণ করা হয়? কেন উচ্চ আদালতের তুলনায় মর্যাদা, বেতন ও সুবিধায় বহু নিচে থাকা নিম্ন আদালতের বিচারক পদে আবেদনকারীরই থাকতে হয় ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার যোগ্যতা?
শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘাটতি অভিজ্ঞতা দিয়ে কখনো কখনো পূরণ করা সম্ভব। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, বিশেষ করে গত ১০ বছরে নিয়োগ পাওয়া কারও কারও অভিজ্ঞতারও ছিল ঘাটতি। সংবিধান বলেছে, ‘সুপ্রীম কোর্টে অন্যূন দশ বৎসরকাল এডভোকেট না থাকিয়া থাকিলে’ তিনি উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগলাভের যোগ্য হবেন না। আইন অনুসারে (যেমন: বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডার, ১৯৭২ এবং জেনারেল ক্লজেস্ অ্যাক্ট, ১৮৯৭) আইনজীবী হিসেবে নিবন্ধিত ব্যক্তিই অ্যাডভোকেট হিসেবে গণ্য হন। একপেশে ব্যাখ্যায় তাই সক্রিয় বা কর্মরত না থাকলেও আইনজীবী হিসেবে নিবন্ধিত থাকার কারণে একজনকে অ্যাডভোকেট হিসেবে গণ্য করা যায়। কিন্তু আমাদের কি এটি ধরে নেওয়া উচিত যে, সংবিধান এমন আইনজীবীদেরও উচ্চ আদালতের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিতে বলেছে? সংবিধান কি চাইতে পারে যে, সনদ পাওয়ার পর আদালতে প্র্যাকটিস না করে ১০ বছর ‘জয়বাংলা’ বা ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ করে বেড়ালে একজনকে বিচারক নিয়োগ করা যাবে?
মনে রাখতে হবে, সংবিধান ন্যূনতম যোগ্যতার কথা বলছে। উপযুক্ত অভিজ্ঞতাহীন একজন সনদপ্রাপ্ত আইনজীবীকে বিচারক নিয়োগ করা সংবিধানের অসৎ ব্যাখ্যা বা মতলববাজি প্রয়োগ ছাড়া আর কিছু নয়।
একাধিক মামলায় (যেমন: রাষ্ট্র বনাম মানবজমিন এবং শামসুল হুদা ও অন্যান্য বনাম বাংলাদেশ) সুপ্রিম কোর্টের প্রাজ্ঞ বিচারপতিরা সত্যিকারের অভিজ্ঞতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। একটি রায়ে অভিজ্ঞতা বলতে স্বতন্ত্রভাবে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে (হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগ) মামলা পরিচালনার অভিজ্ঞতার কথা বলা আছে। সাধারণ যুক্তিই তো বলে, আদালতে মামলা পরিচালনার অভিজ্ঞতা নেই, আইন অধ্যয়নে গ্রহণযোগ্য কোনো রেজাল্ট নেই, এমন ব্যক্তি কীভাবে সুদক্ষভাবে হাইকোর্টে বিচারকাজ পরিচালনা করবেন?
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকদের কারও কারও বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগও। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হাইকোর্টের ৬৭ জন বিচারকের মধ্যে ১৭ জনের সততা প্রশ্নবিদ্ধ বলে বিভিন্ন সরকারি এজেন্সি মতামত দিয়েছিল (দেখুন: মানবজমিন: ‘সর্বোচ্চ আদালত কি বিতর্কমুক্তির পথে’, ২১ মার্চ ২০০৭)। এ অভিযোগ মিথ্যে হতে পারে। কিন্তু অনিয়ম বা দুর্নীতির দায়ে বিচারকের চাকরি গেছে—এমন উদাহরণ তো দু-একটি হলেও আছে। জবাবদিহি ও সততার স্বার্থে প্রধান বিচারপতি নিজে বিচারকদের সম্পদের বিবরণ দিতে বলেছিলেন। সর্বশেষ নিয়োগ পাওয়াদের কেউ কেউ এই দায়িত্ব এড়িয়ে গেলেন কেন?
সর্বোচ্চ আদালতে নিয়োগ পাওয়ারা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থেকে দূরে থাকবেন, এটিও সবার প্রত্যাশা। এটি জরুরি এ কারণে যে, হাইকোর্ট সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের নিষ্পত্তি করে থাকেন। কেউ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকলে এবং সেই দলের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে, তিনি এসব অভিযোগের নিষ্পত্তি করার সময় নিরপেক্ষ থাকবেন কি না, এই সন্দেহ পোষণ করার যুক্তি আছে। আইনজীবীরা সাধারণত রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার সুযোগ পান, নিম্ন আদালতের বিচারকদের এই সুযোগ নেই বললেই চলে। আমাদের প্রশ্ন: এ জন্যই কি দিন দিন নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের হার কমে চলেছে?
সংবিধান নিম্ন আদালতে কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিচারকদের মধ্য থেকে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের কথাও বলেছে। বহুদিনের রেওয়াজ ছিল প্রতি তিনজন বিচারকের মধ্যে অন্তত একজনকে নিম্ন আদালত থেকে নিয়োগ করার। সামরিক শাসকেরা এই রেওয়াজ মেনেছেন। এর লঙ্ঘন শুরু রাজনৈতিক সরকারের আমলে। ২০০১ সালের বিএনপি সরকার ৪০ জনের মধ্যে ৩০ জনকে নিয়োগ করেছে আইনজীবীদের মধ্য থেকে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম দফায় নয়জনের মধ্যে সাতজনকে এবং সর্বশেষ ১৭ জনের মধ্যে ১৪ জনকেই নিয়োগ করেছে আইনজীবীদের মধ্য থেকে। নিম্ন আদালতের বিচারকেরা সাধারণত শিক্ষাগতভাবে অধিকতর যোগ্য, অধিকতর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং রাজনীতির সঙ্গে সংস্রবহীন (ফুটনোট: নিম্ন আদালতের বিচারকদের উচ্চ আদালতের অভিজ্ঞতা নেই এটি সত্যি। কিন্তু তাঁদের পক্ষে উচ্চ আদালতের হালচাল বুঝে নেওয়া নিশ্চয়ই হাইকোর্টের ব্রিফলেস কোনো আইনজীবীর চেয়ে অনেক বেশি। উচ্চ আদালতে এমনকি প্রধান বিচারপতি হিসেবে তাঁদের অনেকের ট্র্যাক-রেকর্ড তা-ই বলে)। তাহলে নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ না করার ক্রমবর্ধমান অনীহা কিসের ইঙ্গিত দেয়?

৩.
সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক কমাতে হলে অবিলম্বে সরকারকে আইন করতে হবে। বিচারক হতে ইচ্ছুকদের অন্যান্য যোগ্যতা নির্ধারণ করে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সংবিধান সংসদকে দিয়েছে সেই ১৯৭২ সালে। ৯৫(২) অনুচ্ছেদে (গ) প্যারাগ্রাফের আগে “অথবা” শব্দের ব্যবহারের কারণে যোগ্যতা নির্ধারণী এই আইন ১০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো অ্যাডভোকেট বা নিম্ন আদালতের বিচারকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কি না, তা নিয়ে যদি সংশয় থাকে তাহলে ৯৫(২) অনুচ্ছেদই সংশোধন করা যেতে পারে। উচ্চ আদালতের স্বাধীনতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কোনো সংশোধনী করা হলে দেশের মানুষ এই সংসদকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ রাখবে।
সরকারের কুশাসন, স্বেচ্ছাচার ও নিপীড়ন ঠেকাতে সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠান হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট। আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে এই আদালতে বিচারক নিয়োগে সরকারের পছন্দ এবং ইচ্ছের প্রাধান্য ঠেকানোও তাই অতি জরুরি। সব প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক দলিল ও সুপারিশে (যেমন বেইজিং স্টেটমেন্ট, ইউনিভার্সাল চার্টার অব জাজেস্, লাটিমার হাউস গাইডলাইন) এ বিষয়ের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের সংবিধানে রাষ্ট্রপতিকে তাই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে উচ্চ আদালতে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আমাদের ১৯৭২ সালের সংবিধানেও একই বিধান ছিল, এখন আর নেই। আমরা অবগত আছি যে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এই পরামর্শের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এটি আদালতের রায়ের মধ্যে দোদুল্যমান না রেখে দেশের সর্বোচ্চ আইনে স্পষ্ট করে লিখে দেওয়ার দায়িত্ব বর্তমান সংসদ পালন করতে পারে।

৪.
প্রধান বিচারপতিই জানেন কতজন বিচারক নিয়োগ করা প্রয়োজন, কখন নিয়োগ করা প্রয়োজন। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের চাহিদার পত্রটি তাই তাঁর কাছ থেকে আসাই সমীচীন। ভারত ও পাকিস্তানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সংসদের। আমাদের দেশে এই ক্ষমতা সংবিধান অনুসারে কার্যত প্রধানমন্ত্রীর। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ বন্ধ করতে হলে এটি প্রধান বিচারপতির হাতে বা সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন সাপেক্ষে সংসদের কাছে দেওয়া উচিত।
প্রধান বিচারপতির হাতে একক ক্ষমতা দেওয়ার কথা আমরা বলছি না। ভারতে ১৯৯৮ সালে রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সে বিচারক নিয়োগে একটি কলিজিয়াস গঠন করেন সুপ্রিম কোর্ট। এতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ চারজন বিচারকের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য বলা হয়েছে। আমাদের শামসুল হুদা বনাম বাংলাদেশ মামলায় আরও যৌক্তিকভাবে প্রধান বিচারপতিকে সুপ্রিম কোর্টের দুই বিভাগের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ দুজন করে চারজন বিচারক, আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে পরামর্শ করার নীতিমালা ঠিক করা হয়েছে। এই মহামূল্যবান রায়কে আপিল বিভাগ কিছুটা দুর্বল করেছেন ঠিকই, কিন্তু এর চেতনাকে অস্বীকার করেননি। এসব রায়, আন্তর্জাতিক দলিলপত্রাদি, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে বিচারক নিয়োগে রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করার ক্ষমতা সংসদের রয়েছে।
আমাদের একজন প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, বিচারক নিয়োগে সুপ্রিম কোর্টে প্রলয় ঘটে গেছে। এই প্রলয় এর পরও অব্যাহত রয়েছে। এটি বন্ধ করার ব্যবস্থা না নিলে আইনের শাসন, মানবাধিকার, সরকারের জবাবদিহি—কিছুই প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। উল্লিখিত বিভিন্ন বিষয়ে নতুন আইন বা প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে এটি করা অবশ্যই সম্ভব।

৫.
১৯৭২ থেকে ১৯৯৬—এই ২৪ বছরে উচ্চ আদালতে ৯৬ জন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়। বিচারক নিয়োগের হার হঠাৎ লক্ষণীয়ভাবে বেড়ে যায় ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ আমলে। পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার উচ্চ আদালতে নিয়োগ দেয় ৩৬ জন বিচারককে। বিএনপির টনক নড়ে এরপর। আওয়ামী আমলে নিয়োগ পাওয়াদের অনেকের চাকরি স্থায়ী না করে তারা বরং নিয়োগ দেয় ৪৫ জন নতুন বিচারককে। এই স্মৃতি নিশ্চয়ই ভোলেনি বর্তমান সরকার। ক্ষমতায় এসে ১৬ মাসের মধ্যে তারা নিয়োগ দিয়েছে ২৬ জন বিচারককে। ইতিমধ্যে মামলায় জিতে চাকরি ফিরে পেয়েছেন আগের আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়া আরও ১০ জন বিচারক।
আইনমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তাঁরা অচিরেই নিয়োগ করবেন ৫০ জন বিচারক। আমরা বলি—প্লিজ, এবার থামুন। ইচ্ছেমতো নিয়োগের খেলা ড্র হয়েছে। বিএনপি যে সংখ্যায় ইচ্ছেমতো নিয়োগ দিয়েছে, তার চেয়ে কম হয়নি আওয়ামী আমলের নিয়োগ। দুই আমলে নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে ভালো বিচারক ছিলেন, কিন্তু বিতর্কিত বিচারকের সংখ্যাও কম নয়।
আমরা মিনতি করছি: আবার আপনারা থামুন। উপযুক্ত মানের নিরপেক্ষ বিচারক নিয়োগ এবং বিচারকদের স্বাধীনতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবার প্রয়োজনীয় আইন করুন। দরকার হলে সংবিধান সংশোধন করুন। বিচার বিভাগ তথা দেশকে রক্ষা করুন।
আসিফ নজরুল: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments

Powered by Blogger.