শেয়ারবাজারে আশার আলো

শেয়ারবাজারে আবার চাঙ্গা ভাব দেখা দিয়েছে। সপ্তাহের প্রথম দুই দিনের মতো মঙ্গলবার তৃতীয় দিনও বাজার চাঙ্গা ছিল। তৃতীয় দিনে লেনদেন শুরুর প্রথম আধঘণ্টায় সূচক বাড়ে ১২৮ পয়েন্ট। হাতবদল হয় ২৩৭টি কম্পানির ৩৫ হাজার ২৯৩টি শেয়ারের।


গত বছরের শেষার্ধে এসে শেয়ারবাজারে যে ধস নামে, তা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারের নেওয়া সেই পদক্ষেপগুলোর কারণে এরই মধ্যে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। শেয়ারবাজারে যে সংকট দেখা দিয়েছিল, তা থেকে উত্তরণের জন্য এই আস্থা অর্জন করাটা খুবই জরুরি ছিল। এ সপ্তাহের শুরু থেকেই শেয়ারবাজারে সেই আস্থা ধীরে ধীরে ফিরে আসছে।
শেয়ারবাজারে আস্থার সংকট কাটাতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে নতুন ফান্ড গঠন। চলমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের পরামর্শে পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি ফান্ড গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফান্ডের মোট আকারের ৫০ শতাংশ মানি মার্কেটে এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হবে। এই ফান্ডের মোট আকারের ১০ শতাংশ বা ৫০০ কোটি টাকা আইসিবি বিনিয়োগ করবে। এ ছাড়া ফান্ড থেকে ৫ শতাংশ বিভিন্ন কম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ফান্ড হবে একটি ওপেন অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ড। তাই এটা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত না হয়েও লেনদেন করতে পারবে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) অনুমোদন লাগবে। বিশেষ ধরনের ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেটে (ওটিসি) এই ফান্ডের লেনদেন হবে। আইসিবির অনুমোদিত বিভিন্ন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্রোকারেজ হাউসে এই ফান্ডের ইউনিটের লেনদেন হবে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, ১০০ টাকা ফেইস ভ্যালুর প্রতিটি ইউনিটের মার্কেট লট ধরা হয়েছে ১০০০টি। এই ফান্ডের স্পন্সর প্রতিষ্ঠান হিসেবে থাকবে আইসিবি। কো-স্পন্সর হিসেবে থাকবে সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংক, বিডিবিএল, সাধারণ বীমা, জীবন বীমা, বেসিক ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক এবং বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফিন্যান্স করপোরেশন। এ ছাড়া বেসরকারি খাতের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ২৩টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, বীমা কম্পানি, ২৮টি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ৩০টি মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কম্পানি এবং সরকারের পেনশন ও প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে বাংলাদেশ ফান্ডে বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া পুঁজিবাজারে বাই ব্যাক পদ্ধতি চালু হচ্ছে বলে জানা গেছে। গত সোমবার সচিবালয়ে এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের জানান, পুঁজিবাজারে বাই ব্যাক পদ্ধতি চালু হতে যাচ্ছে। এটা হলে প্রিমিয়ামসহ কোনো কম্পানির শেয়ার প্রাথমিক মূল্যে বাজারে আসার পর ওই মূল্যের কম দামে শেয়ার বিক্রি হলে কম্পানিটি তখন বাজার থেকে শেয়ার কিনতে বাধ্য হবে। বাই ব্যাংক-সংক্রান্ত আইন প্রচলিত কম্পানি আইনে অন্তর্ভুক্ত করে সংশোধনের জন্য সংসদের চলতি অধিবেশনে তোলা হবে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন। বাংলাদেশের কম্পানি আইনে বাই ব্যাক পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত নেই। শেয়ারবাজার বিশ্লেষকদের ধারণা, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে ফোর্স সেল বন্ধ হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুঁজি হারানোর ভয় অনেকটা কমে গেছে। ফলে তারা শেয়ার বিক্রি কমিয়ে দিয়েছে। ফলে বাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের খবরে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে পতনমুখী শেয়ারবাজারে। সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো দ্রুত বাস্তবায়িত হলে শেয়ারবাজার আবার নতুন করে পথ খুঁজে পাবে বলে মনে করা যেতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.