সময়ের প্রতিবিম্ব-অর্ধশিক্ষিত প্রজন্মের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ by এবিএম মূসা

চট্টগ্রাম থেকে আমার দূরসম্পর্কীয় নাতনি টেলিফোন করে আর্তি জানাল, ‘দাদু, আমাদের কী হবে?’ মেয়েটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। আসল ঘটনা হচ্ছে, বন্ধ হয়নি, ছাত্রছাত্রীদের আসা-যাওয়ার বাস-ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যারা করেছে,


অথবা সাম্প্রতিককালে দেশের অনেক স্থানে উচ্চ বিদ্যাপীঠ মাঝেমধ্যে ‘সাময়িক’ বন্ধ হয়ে যায় যাদের দাপটে, পত্রিকার পাতায় প্রতিদিনের খবরেই তাদের পরিচয় জানা যায়। ছবি ছাপা হচ্ছে, চাপাতি হাতে সন্ত্রাসীর পরিচিতি দেওয়া হচ্ছে ছাত্রলীগের সদস্য বলে। মূল কথা হচ্ছে, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের ব্যাপক বিস্তারের ফলে বর্তমান সরকারের আমলে একটি প্রজন্মের উচ্চশিক্ষার পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে সম্প্রতি পরম শ্রদ্ধাভাজন পাঁচজন শিক্ষাবিদ ‘দুঃখ প্রকাশ করে’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। তাঁরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শায়েস্তা করার কথা বলেননি, ধরে বেঁধে জেলে ভরতেও বলেননি। ইতিপূর্বে প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান তাদের ‘সামলাতে’ বলেছেন, কীভাবে সামলাবেন তা বলেননি, কোনো সুপারিশও করেননি।
উপরোক্ত বিষয়ে আলোচনার শুরুতে একটি ব্যাখ্যা দিতে চাই। আমার আজকের প্রতিবেদনটি পাঁচ নমস্য গুণীজনের বিবৃতির সমালোচনা নয়। জেলো বক্তব্যের তির্যক প্রতিক্রিয়াও নয়। বস্তুত, সব মিলিয়ে একটি জাতীয় সমস্যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করছি। বুঝতে চাই, কেন উচ্চতম শিক্ষাঙ্গনগুলোর শিক্ষার পরিবেশ বিপর্যস্ত। কেন দেশের কতিপয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপীঠে সন্ত্রাস, উচ্ছৃঙ্খলতা ও অশুভ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কেন সেগুলো বন্ধ হচ্ছে, খুলছে; আবার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সর্বজনশ্রদ্ধেয় পাঁচজন প্রবীণ শিক্ষাবিদ আমার পরম নমস্য, তাঁদের অসীম জ্ঞান-গরিমা আকাশছোঁয়া। শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ সম্পর্কে তাঁদের অভিজ্ঞতা অপরিসীম। সুতরাং তাঁরাও যখন শেষ পর্যন্ত একটি ‘বিবৃতি’ দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন, তখন এ নিয়ে ভাবতে হবে বইকি। ইতিমধ্যে তাঁদের দেওয়া বিবৃতিটির কিঞ্চিৎ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন গত রোববার অনুজপ্রতিম সাংবাদিক ও কলামিস্ট মিজানুর রহমান খান। তবে তিনি একটুখানি সমালোচনা করেছেন মাত্র। লিখেছেন, ‘শিক্ষাবিদদের বিবৃতি পড়ে মনে হয়নি যে ক্যাম্পাস-রাজনীতিবিষয়ক সমস্যা নিয়ে তাঁদের মুখ্য উদ্বেগ ছিল।’ মিজান তারপর আর বলেননি কেন ‘মনে হয়নি,’ উদ্বেগটি কী নিয়ে ছিল। আসলে সব খোলাখুলি বলতে গেলে পাঁচ শিক্ষাবিদকে বর্তমান সরকারের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের তিরস্কার করতে হতো। তারা সেই অপ্রিয় কাজটি করেননি। মিজানকে তাঁর নিজস্ব আইনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ সাংবাদিকতার আঙিনার বাইরে বেরিয়ে এসে রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের নিয়েই আলোচনা করতে হতো। তা না করে তিনি প্রকৃত আলোচনাকে ভিন্নমুখী করে তাঁর নিজস্ব ‘আইন-বিচার’ জ্ঞানের পরিধিতে নিয়ে এসেছেন। অথচ শিক্ষাঙ্গন এখন বৈচারিক নিয়মে চলছে না, আইনি কোনো বিধানে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে না, এমনকি প্রতিষ্ঠানের নিয়মকানুনের আওতায় শৃঙ্খলাবদ্ধ নয়। বস্তুত কাদের নিয়ন্ত্রণে চলছে, ছাত্রলীগের হাতে কারা চাপাতি তুলে দিয়েছে তা বুঝতে পারছি না, অথবা বুঝেও না বোঝার ভান করছি। তাই বলছিলাম যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খড়ের গাদায় আগ্নেয়াস্ত্র খুঁজে পায়, শিক্ষাঙ্গনের চাপাতিটি তাদের চোখে পড়ে না কেন?
শ্রদ্ধেয় গুণীজন একদল সন্ত্রাসী ছাত্রের সমালোচনায় তাত্ত্বিক বক্তব্য দিয়েছেন। অথচ আজকে উচ্চতম ও মধ্য পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একদল ছাত্রের উচ্ছৃঙ্খলতা ও সন্ত্রাসের বিস্তারের সঙ্গে বাস্তবে এবং আশ্চর্যজনকভাবে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের অনৈতিক ও অসামাজিক কার্যকলাপের বিস্তারের সম্পর্ক রয়েছে। প্রভাব রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের অদ্ভুত নিষ্ক্রিয় মনোভাব। সর্বোপরি কারও কারও পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা আছে কি না তা সরাসরি বলা যাচ্ছে না, তবে বোঝা যায়।
সত্যি কথা হলো ক্ষমতাসীনদের কোনো মহলের পৃষ্ঠপোষকতা অথবা প্রশ্রয় না থাকলে ‘চাপাতি লীগের’ এত সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটত না। অতীতেও ক্ষমতাধরের পৃষ্ঠপোষকতায় এমনটিই হয়েছে। তা নিয়ে একটুখানি ইতিহাস-আলোচনা করছি। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের সংশ্লিষ্ট হওয়ার প্রক্রিয়াটি আজকের নয়, অনাদিকালের। শুরু হয়েছিল এ দেশে মোনায়েম খান ও তাঁর ‘খলিফা’ সামরিক শাসক ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের আমলে। বিস্তৃতি লাভ ঘটেছে স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক শাসকদের তাঁদের পোষ্য বেসামরিক একনায়কদের আমলে। দুঃখজনক বিবর্তনে সেই অশুভ ঐতিহ্যকে লালন-পালন করে আরও সীমাহীন করেছেন সামরিক শাসনের সমালোচক জনপ্রতিনিধি রাজনীতিবিদেরা। একদল ছাত্র-নামধারীর অনাকাঙ্ক্ষিত ও অমঙ্গলজনক ঐতিহ্যের কর্মকাণ্ডকে সন্ত্রাস ও নীতিহীনতার আচ্ছাদন পরিয়েছেন তাঁরা। আজকে আমাদের বৃহত্তর জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গন অপসংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে ছাত্ররাজনীতির বিপথগামিতা তথা ছাত্রসংগঠনগুলোর লেজুড়বৃত্তি। বক্তব্যটি উল্টোভাবেও বলা যায়। জাতীয় রাজনীতিকে যাঁরা কলুষিত করেছেন, শিক্ষাঙ্গনের অপকর্মের বিস্তারে তাঁরা পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা দিয়েছেন। মোনায়েম খানদের সরকার এনএসএফ দুর্বৃত্তদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ক্ষুর, উত্তরসূরিরা দিয়েছে চাপাতি। অর্থাৎ ক্ষুর থেকে গজারি কাঠ, অতঃপর পিস্তল, এখন দেখা যাচ্ছে চাপাতি—শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের এমনি বিচিত্র ক্রমবিকাশ ঘটেছে।
আমার শেষোক্ত মন্তব্যটি একটু কঠিন মনে হতে পারে। আমি ছাত্ররাজনীতি অথবা ছাত্রদের রাজনীতিচর্চা, আরও পরিষ্কারভাবে বলতে হয়, কতিপয় ছাত্রের অনাকাঙ্ক্ষিত কার্যকলাপের আলোচনায় আরও গভীর অতীতে যেতে চাই। ব্রিটিশ শাসনামলে যে ছাত্র-অঙ্গসংগঠনগুলো গড়ে ওঠে, সেগুলো ছিল জাতীয় কংগ্রেসের নিখিল ভারত ছাত্র কংগ্রেস, মুসলিম লীগের নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশন ও কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র ফেডারেশন। তবে বর্ণিত ছাত্র প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকলাপ মূলত সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাঙ্গনের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ ছিল। সেগুলো মূলধারার রাজনৈতিক দলের সহায়ক শক্তি বিবেচিত হতো না। তবে কতিপয় সংগঠন ছিল রাজনীতিকদের প্রজননকেন্দ্র। অপর দিকে পরবর্তীকালে তাঁরাই বরং জাতীয় রাজনীতিকে সংগঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত করেছেন। বস্তুত আমাদের ভাষা আন্দোলন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার জন্য সংগ্রাম, শিক্ষাব্যবস্থা নিষ্কলুষ রাখার অতুলনীয় অবদান থেকে স্বাধীনতাযুদ্ধ পর্যন্ত সব সংগ্রামই ছাত্রসমাজ সূচনা করেছে, রাজনীতিবিদেরা পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়েছেন।
স্বাধীন বাংলাদেশে সব ওলট-পালট হয়ে গেল। বলা যায়, পুরোপুরি উল্টে গেছে। কীভাবে ও কেন এমনটি হলো? ছাত্রসমাজের প্রগতিশীল কর্মকাণ্ডের স্রোতোধারাকে বিপরীতমুখী করল কারা? বৃহত্তর ছাত্রসমাজ ভাষা আন্দোলন করেছে, প্রতিক্রিয়াশীল শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। ঊনসত্তুরে গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের সূচনা করেছে। একাত্তরে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে। কোথায় হারিয়ে গেল সেই ঐতিহ্য? সেই হারিয়ে যাওয়ার ক্রমবিকাশ বর্ণনা করছি। এই ছাত্রসমাজের রাজনৈতিক পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যবান অবয়বকে প্রথমেই বিকলাঙ্গ করেছিলেন সামরিক শাসকেরা। কারণ এসব শাসকের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন জেনারেলরা বুঝতে পেরেছিলেন, নিজেদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ ও অবস্থান চিরস্থায়ী করার পথে বাধা হচ্ছে তিনটি। এক, গণমাধ্যম তথা স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার। দুই, স্বাধীন বিচারক যাঁরা তাঁদের অবৈধ কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ করবেন। সর্বশেষ কিন্তু সবচেয়ে প্রধান প্রতিবন্ধক লাস্ট নট দি লিস্ট, ছাত্রসমাজ। তাঁরা গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করলেন, স্বাধীন মতামতধারীদের নানাভাবে নির্যাতন ও হয়রানি করেছেন ও করছেন। বিচার বিভাগকে অনেকখানি নিষ্ক্রিয় করলেন অথবা নানা পন্থায় ঠুঁটো জগন্নাথ বানালেন, সর্বশেষে বিতর্কিত করলেন। আর ছাত্রসমাজকে করলেন ব্যাপকভাবে এবং তাদের নেতৃত্বকে বিশেষভাবে চরিত্রহীন, অর্থলোভী আর সন্ত্রাসী।
এ ক্ষেত্রে জেনারেল জিয়াউর রহমানের কূটকৌশলের তারিফ করতে হয়। তাঁর নীতি ছিল অনেকখানি, ইংরেজি প্রবচনের অনুসরণে ‘ইফ ইউ ক্যান নট বিট দেম, জয়েন দ্যাম।’ তাদের সরাসরি সামাল দিতে না পারলে, তাদের মধ্যে নিজেদের অনৈতিক, অগণতান্ত্রিক, লোভী ও সন্ত্রাসী ভাবধারায় অনুপ্রবেশ ঘটাতে হবে। অনেকে নিশ্চয়ই মনে করতে পারবেন, জেনারেল জিয়া যখন প্রথম যেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশ করেছিলেন, সেদিন ঢিল খেয়েছিলেন। তিনি আইয়ুব খানের অনুসরণে পাটকেলটি মারলেন না, লাঠিপেটা করলেন না, গুলি বা টিয়ারগ্যাস শেল ছুড়লেন না। তিনি তাঁদের ‘দুষ্টু ছেলে’ বলে শিষ্ট করার জন্য সাদরে কাছে টেনে এনে হিযবুল বাহার জাহাজে করে সিঙ্গাপুরে নিয়ে গেলেন। তাদের জাহাজভরে চোরাচালানির মাল আমদানি করতে দিয়ে অনৈতিকতার প্রথম সবকটি দিলেন। ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ নয়, অর্থই পরমার্থ, তাঁর দেওয়া মূলমন্ত্রটি শিক্ষাঙ্গনে প্রতিবাদী ছাত্রদের বিপথগামী করল। পাকিস্তান আমলে মেধাবী ছাত্রনেতারা যে হাতে দেয়ালে চিকা মারতেন, পোস্টার লিখতেন, সেই হাতে সামরিক শাসকের বিশেষ সংস্থা পিস্তল তুলে দিল। পরবর্তী সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ। তবে একধাপ এগিয়ে শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রদের মধ্যে সন্ত্রাস বিস্তার করে, বিভেদ সৃষ্টি করে, পারস্পরিক সংঘর্ষ বাধিয়ে ছাত্রদের স্বেচ্ছাচারী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ স্পৃহাকে নিষ্ক্রিয় করে দিলেন, ঐতিহ্যটি বিনষ্ট করলেন।
তারপর দীর্ঘ তিন দশকের ইতিহাস সবার জানা। তাই বিস্তারিত আলোচনা করব না। এখন শুধু জানতে ও জানাতে চাইব, ছাত্র বা ছাত্র-নেতৃত্বের দাবিদারদের হাতে গণতন্ত্রের চর্চাকারী, জনসমর্থনে নির্ভরশীল সরকারের আমলে পিস্তলের বদলে চাপাতি আর গজারি কাঠ তুলে দেওয়ার গরজটি কী? সামরিক জেনারেল যদি ছাত্রসমাজকে প্রগতিশীল আন্দোলন থেকে বিরত করতে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের সূচনা করে থাকেন, গণতান্ত্রিক সংগ্রামী ঐতিহ্যের ধারাবাহী বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার কোন স্বার্থে অথবা কিসের ভরসায় তা জিইয়ে রেখেছেন? সরকারের ক্ষমতাবান নীতিনির্ধারকেরা কেন তার ইতি ঘটাতে পারছেন না? এই প্রশ্নের উত্তর চাননি আমাদের পাঁচজন অতি শ্রদ্ধেয় সর্বজনমান্য শিক্ষাবিদ। তাই তাঁরা শুধু সরকারের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ক্ষমতাধরের মাঝে মাঝে দেওয়া বিবৃতির অনুসরণে শুধু মৃদু ভাষায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। অথচ তাঁদের কঠোর সতর্কবাণী ও তিরস্কারই সরকারের বিশেষ মহলের টনক নাড়াতে পারত। শিক্ষাঙ্গনে দুর্নীতি, সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষকদের মুখোশটি তাঁরাই খুলে দিতে পারতেন। কারণ তাঁরাই ‘সব’ জানেন ও বোঝেন।
যা হোক, শিক্ষাঙ্গনে লাঠালাঠি, দখলদারি, টেন্ডারবাজি নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য দীর্ঘায়িত করব না। আমি শুধু বর্তমান গণতান্ত্রিক জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকারপ্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করব, তিনি কি অনুধাবন করতে পেরেছেন, তাঁর আমলে একটি প্রজন্ম উচ্চশিক্ষার পথে হাঁটতে গিয়ে বারবার হোঁচট খেলে জাতির ভবিষ্যৎ কী? আমাদের উচ্চশিক্ষাবঞ্চিত উত্তরসূরিরা কি ভবিষ্যতে একটি অর্ধশিক্ষিত জাতি বলে পরিচিতি লাভ করবে না? আমার বোধগম্য হচ্ছে না, শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষাদান ও গ্রহণ নিরঙ্কুশ করার জন্য তিনি কেন কঠোর হচ্ছেন না। বাধাটি কোথায়, কী তাঁর সীমাবদ্ধতা? এত ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের উত্থান তিনি উপেক্ষা করছেন কেন? এক-এগারোর পর, মতিয়া চৌধুরীর ভাষায় বাঘ থেকে বিড়াল বনে যাওয়াদের ভূমিকা কী ছিল, তা কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানেন না? একসময় বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘আমার ছাত্রদল আছে।’ বিএনপি-নেত্রীর নিজের ও দলের সংকটকালে তারা কোথায় ‘ছিল’, তা বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের প্রধান স্মরণ করছেন কি? শিক্ষাঙ্গনে তাঁর দলীয় পরিচয়ধারী সন্ত্রাসীদের অরাজকতা, অশান্তি ও নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণ খুঁজতে গিয়ে এসব প্রশ্নের উত্তর আমি খুঁজে পাচ্ছি না। তাই তো চট্টগ্রাম থেকে একজন ছাত্রীর আর্তির, বগুড়া-রংপুর-রাজশাহী বস্তুত দেশের সর্বত্র থেকে পাওয়া ছাত্রদের হতাশাব্যঞ্জক চিঠির কোনো জবাব আমি দিতে পারছি না। বলতে পারছি না, তাদের উচ্চশিক্ষার পথটি কেন রুদ্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
এবিএম মূসা: সাংবাদিক, কলাম লেখক।

No comments

Powered by Blogger.