সার্ক হোক কার্যকর আঞ্চলিক জোট-থিম্পু রজতজয়ন্তী ঘোষণা

ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে দুই দিনের ষোড়শ সার্ক (দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা) শীর্ষ সম্মেলন শেষে গত বৃহস্পতিবার যে ৩৬ দফা ঘোষণা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে প্রত্যাশার বড় প্রতিফলন নেই। বরাবরের মতো এ সম্মেলনেও সার্কের সদস্য-দেশগুলোর সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর সার্ক-নেতারা গুরুত্ব আরোপ করেছেন; দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নে কাজ করার সংকল্প ব্যক্ত করেছেন।


আঞ্চলিক সংস্থা হিসেবে সার্কের দুর্বলতা হলো, সহযোগিতার ক্ষেত্রে পথের বাধাগুলো অপসারণ করতে না পারা। মালদ্বীপের তরুণ রাষ্ট্রপ্রধান যথার্থভাবেই বলেছেন, ‘দুই আঞ্চলিক পরাশক্তি’ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ‘যুদ্ধ’ জিইয়ে থাকার কারণেই সার্কে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসেনি। দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক সহযোগিতার পূর্বশর্ত পারস্পরিক সন্দেহ ও অবিশ্বাসের অবসান। কেবল ভারত-পাকিস্তান নয়, এ অঞ্চলের প্রতিটি দেশে কমবেশি এ সমস্যা রয়ে গেছে। এর হয়তো ‘ঐতিহাসিক’ কারণও আছে। দূরদর্শী রাষ্ট্রনেতাদের কর্তব্য হলো, অতীতের অচলায়তন ভেঙে পারস্পরিক সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ইউরোপের দেশগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থাকলেও এখন তারা অভিন্ন ইউনিয়ন গড়ে তুলতে পেরেছে রাষ্ট্রনেতাদের প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার কারণে। অনুরূপ পূর্ব এশীয় দেশগুলোও শক্তিশালী জোট গঠনে সক্ষম হয়েছে রাজনৈতিক মতপার্থক্য সত্ত্বেও। আমরা পারিনি কেন? দ্বিপক্ষীয় সমস্যাগুলো পাশ কাটিয়ে সংস্থাকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা সোনার পাথরবাটি ছাড়া কিছু নয়। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা সুদৃঢ় করতে হলে দ্বিপক্ষীয় সমস্যাগুলোরও সমাধান জরুরি।
থিম্পু সম্মেলনের ইতিবাচক দিক হলো, এই প্রথমবারের মতো সার্কের নেতারা সংস্থাটিকে সরকারি কাঠামোর বাইরে এনে বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে দক্ষিণ এশীয় ফোরাম গঠনে রাজি হয়েছেন। নজর রাখতে হবে, প্রস্তাবিত ফোরাম যেন সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর তল্পিবাহক না হয়। সার্ক-নেতারা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাতে একযোগে কাজ করার ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছেছেন। থিম্পু রজতজয়ন্তী ঘোষণায় সার্কের কানেকটিভিটি দশক, বাণিজ্য উদারীকরণ, প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের ওপর যে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, দক্ষিণ এশীয়বাসী তার সফল বাস্তবায়নই দেখতে চাইবে। সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিমালয়ান কাউন্সিল গঠনের যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তাও বিবেচনার দাবি রাখে।
দক্ষিণ এশিয়ার বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ও সুষম ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে বিশ্বের দরিদ্রতম অঞ্চলটির উন্নয়ন তথা কোটি কোটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন অসম্ভব নয়। দক্ষিণ এশীয় নেতারা সেই লক্ষ্যে কাজ করবেন বলে আশা করি। অতীতের ব্যর্থতা, সংকীর্ণতা ঝেড়ে ফেলে ভবিষ্যতে সার্ক এ অঞ্চলের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার কার্যকর আঞ্চলিক সংস্থায় পরিণত হবে, সেটাই প্রত্যাশিত।

No comments

Powered by Blogger.