নিশাত মজুমদারকে অভিবাদন-এভারেস্ট শৃঙ্গে প্রথম বাংলাদেশি নারী

নিশাত মজুমদারকে প্রাণঢালা অভিনন্দন। তিনি সেই তরুণী, প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশিখর এভারেস্ট জয়ের জন্য যাঁর নাম পর্বতারোহণের ইতিহাসে সোনার অক্ষরে স্থায়ীভাবে লেখা হলো। তাঁর এই ইতিহাস সৃষ্টিকারী সাফল্যে বাংলাদেশ আজ নিখাদ আনন্দে উচ্ছ্বসিত, বিরাট গৌরবে মহিমান্বিত।


যদিও বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের এটাই প্রথম এভারেস্ট বিজয় নয়; তবু এই ঘটনার তাৎপর্য যুগান্তকারী। এই একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকেও যে সমাজে নারীর পক্ষে ঘরের বাইরে পা ফেলার পথে সামাজিক-সাংস্কৃতিক-সংস্কারগত নানা প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে, সেই সমাজের একজন তরুণীর পক্ষে এভারেস্ট শৃঙ্গে আরোহণ প্রায় অসম্ভব একটি ঘটনা। কারণ এভারেস্ট শিখরে ওঠার পথটি বাংলাদেশের কোনো নারীর পক্ষে শুধু ভৌত কারণেই নয়, প্রচলিত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণেও দুর্লঙ্ঘ্য। নিশাত সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে নারীসমাজকে তো বটেই, গোটা জাতিকেও গৌরবান্বিত করেছেন।
শুধু শিক্ষা-গবেষণা বা পেশাগত দক্ষতার বিচারেই নয়, এ সমাজের নারী যে শারীরিক শক্তি-নৈপুণ্য, সাহস-সংকল্পের দৃঢ়তায়ও পুরুষের থেকে কিছুমাত্র কম নয়, নিশাত মজুমদারের এভারেস্ট বিজয় তার এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত। নারী অবলা, নারী ঘরের শোভা; সমাজে, রাষ্ট্রে, অফিস-আদালতে, ব্যবসা-বাণিজ্যে, কলকারখানায়, ফসলের মাঠে, গোলাঘরের আঙিনায়—এককথায়, গৃহকর্ম ছাড়া আর সব ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা হবে পুরুষের সহযোগীর—এই বদ্ধমূল দৃষ্টিভঙ্গির ওপর প্রবল আঘাত পড়ল নিশাতের এভারেস্ট বিজয়ের মধ্য দিয়ে। নারীর চারপাশের শৃঙ্খলে, এই সমাজের পশ্চাৎপদ, পুরুষকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সংস্কারগুলোর ভিত্তিমূলে এক বড় অভিঘাত সৃষ্টি করবে নিশাতের এভারেস্ট জয়ের ঘটনা।
বিশেষভাবে লক্ষ করার বিষয় নিশাতের এই সাফল্যে তাঁর মা-বাবার প্রতিক্রিয়া। আনন্দময় আবেগে আপ্লুত মা আশুরা মজুমদারের অনুভূতি: এটা খুবই আনন্দের ব্যাপার! আর বাবা আবদুল মান্নান মজুমদারের মন্তব্য: নানা ধরনের দোহাই দিয়ে মেয়েদের ঘরে আটকে রাখার যে চেষ্টা চলে, তাঁর আত্মজা নিশাত সেটা ভেঙে দিয়েছেন। আমরা অভিবাদন জানাই নিশাতের মা ও বাবাকে, যাঁরা কোনো দোহাই দিয়ে মেয়েকে ঘরে আটকে রাখার চেষ্টা না করে বরং মানুষের অমেয় শক্তি ও সম্ভাবনা কাজে লাগানোয় প্রেরণা জুগিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.