অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত চাই-পদ্মা সেতুর ভবিষ্যৎ

বহুল আলোচিত পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজে অনিশ্চয়তা গোটা জাতির জন্য বেদনাদায়ক। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর মহাজোট সরকার এই প্রকল্পকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিল। বিদেশি দাতাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের প্রতিশ্রুতিও আদায় করতে পেরেছিল। এসব নিঃসন্দেহে সরকারের সাফল্য।


তাই যখন সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা ২০১৩ সালের মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করা হবে বলে আগাম ঘোষণা দিয়েছিলেন, তখন দেশবাসী অনেকটা আশ্বস্ত হয়েছিল।
কিন্তু সেতুর মূল কাজ শুরু হওয়ার আগেই দাতা সংস্থার পক্ষ থেকে দুর্নীতির অভিযোগ দুর্ভাগ্যজনক। বিশ্বব্যাংক বলেছে, জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পে তারা অর্থ দেবে না। অর্থমন্ত্রী গত মাসে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে বিষয়টি মীমাংসার জন্য গেলেও সফল হননি। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর সিংহভাগ অর্থের জোগানদাতা ও সমন্বয়কারী। তাদের সম্মতি ছাড়া অন্যান্য দাতা সংস্থাও এগিয়ে আসবে না।
এ অবস্থায় সরকারের করণীয় কী? অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তি। অন্ধকারে ছড়ি না ঘুরিয়ে বিশ্বব্যাংক কী কারণে আপত্তি করেছে, কী তার অভিযোগ, সেসবের যথাযথ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ যে ভিত্তিহীন নয়, তার প্রমাণ প্রকল্প পরিচালককে (পিডি) পত্রপাঠ বিদায় দেওয়া। এখন কথা হলো, পিডি কি একাই সব করেছেন, না তার পেছনে বড় কেউ ছিলেন, সেটি বের করা সরকারেরই দায়িত্ব। অভিযোগ ওঠার পর যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির তদন্তে টিআইবি ও দুদকের শরণাপন্ন হওয়াও নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
দেশবাসী চায়, পদ্মা সেতু প্রকল্পটি ঠিকমতো এগিয়ে যাক। পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প দেশীয় অর্থায়নে করার সক্ষমতা থাকলে দাতাদের মুখাপেক্ষী হওয়ার প্রয়োজন হতো না। ঋণের পরিমাণ ও সুদের হার ইত্যাদি নিয়ে এখানে কোনো বিরোধ নেই। বিরোধ দেখা দিয়েছে কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিয়ে। বিশ্বব্যাংক যেসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আপত্তি করেছে, সেই সব প্রতিষ্ঠানকে বেছে বেছে কার্যাদেশ দেওয়ার সঙ্গে কারও স্বার্থ ছিল কি না, খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
অতীতে বিশ্বব্যাংকের অনেক আপত্তি আমরা অগ্রাহ্য করেছি নৈতিক জোর ছিল বলে। যেমন বিশ্বব্যাংক একসময় কৃষিতে ভর্তুকির প্রবল বিরোধিতা করেছিল। সেই সময় আওয়ামী লীগ সরকারই তাদের পরামর্শ অগ্রাহ্য করে কৃষিতে ভর্তুকি দিয়েছে এবং তার সুফলও দেশবাসী পেয়েছে। কিন্তু পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগটি নীতিগত নয়, প্রক্রিয়াগত।
যেহেতু বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করছে, তাদের আস্থার বিষয়টিও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। আর সত্যি বলতে কি, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতি এই আস্থার সংকট দেশের ভেতরেও কম নয়। অতএব প্রধানমন্ত্রীকে সর্বাগ্রে আস্থাভাজন কাউকেই এ রকম একটি প্রকল্পের দায়িত্ব দিতে হবে। এত দিন বলা হতো, বড় প্রকল্পের জন্য ছোট প্রকল্প কিংবা রাস্তাঘাটের সংস্কার বন্ধ আছে। এখন কী বলবেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা? পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন চাইলে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্যোগী হয়ে এর কাজে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বব্যাংক উত্থাপিত অভিযোগের সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তই বাঞ্ছনীয়।

No comments

Powered by Blogger.