সংঘর্ষে মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ-কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে

শিক্ষাঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে থাকে সাধারণত বিরোধীদলীয় ছাত্র সংগঠনের আন্দোলন-দাবিতে। কিন্তু প্রায়ই লক্ষ করা যাচ্ছে, দেশের শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ বিঘি্নত করছে সরকারকে সমর্থনকারী সংগঠন ছাত্রলীগ। শনিবার আবারও ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের জের ধরে কর্তৃপক্ষ সলিমুল্লা মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে।


ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, শুধু দ্বিতীয় ও ফাইনাল পর্বের পরীক্ষার্থীরা প্রবেশপত্র দেখিয়ে হলে থাকতে পারবে এবং যথারীতি কলেজ কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে। পুলিশের ভাষ্যমতে, শুক্রবার রাত দেড়টা থেকে ৩টার মধ্যে একটি গ্রুপ মিটফোর্ড রোডে অবস্থিত ছাত্রাবাসের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে হামলা চালায়। নতুন ছাত্রদের স্বাগত জানানোর ব্যাপারে মেডিক্যাল ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিই এ সংঘর্ষের কারণ।
ছাত্রলীগের টেন্ডার-চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার এমনকি ব্যক্তিগত ইমেজ প্রতিষ্ঠা নিয়েও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় অন্তঃকলহ ও সংঘর্ষ-সংঘাত লেগেই আছে। আমরা বর্তমান সরকারের সময়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ দেশের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের হানাহানি দেখে আসছি। ভিন্ন সংগঠন, সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ওপর অন্যায় আচরণ বা তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ তো রয়েছেই। ছাত্রলীগের এসব কর্মকাণ্ডের কারণে প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার বিরক্তি ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। মূল দল আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন এনে ছাত্রলীগকে একটি স্বতন্ত্র সংগঠন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত ছাত্রলীগের এখন এতটাই বেহাল যে মূল দল এ সংগঠনের দায়িত্ব অস্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছে। তারপরও বাস্তবতা হলো ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনই। পুলিশ ও প্রশাসনকে এ সংগঠনের ছাত্র নামধারীদের সমীহ করতে হয়, তাদের বিশেষ ছাড় দিতে হয়। এ অবস্থা চলতে পারে না, চলতে দেওয়া ঠিকও নয়। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছাত্রলীগের দ্বারা যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ততটাই আওয়ামী লীগকে দুর্নাম কাঁধে নিতে হবে। এ বাস্তবতা সরকারে থাকা দলটির বুঝতে হবে। টেন্ডার ও চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে ধর্ষণচেষ্টার সঙ্গেও যে ছাত্রলীগ জড়িয়ে পড়ছে, তাদের আওয়ামী লীগের বন্ধু ভাবলে চরম নির্বুদ্ধিতার পরিচয় হবে। আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীরা এ কথা মনে রাখলে দল উপকৃত হবে। দেশবাসী মনে করে, আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত করতে ছাত্র নামধারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ও সমাজের স্থিতিশীলতা বিঘ্নকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এখন সরকারের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। এভাবে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করা থেকে ফেরাতে না পারলে সে খেসারত সরকারকেই দিতে হবে। আর এই দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে একদিকে ছাত্র সংগঠনটি অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত ও সুশৃঙ্খল হবে, অন্যদিকে সরকারের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে।

No comments

Powered by Blogger.