দুই রাষ্ট্রীয় সংস্থার বিরোধ অনাকাঙ্ক্ষিত-ডিবি সদস্যদের পেটানোর অভিযোগ

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (এনএসআই) সদস্যদের হাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) তিন সদস্যের আটক এবং নির্যাতিত হওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে এ দুটি সংস্থার মধ্যে বিরোধ স্পষ্ট। বিষয়টি উদ্বেগের। কারণ, আইনশৃঙ্খলা ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিরোধ মোটেই সুলক্ষণ নয়। তাদের মধ্যে বরং পরিষ্কার বোঝাপড়া ও সহযোগিতার সম্পর্কই বাঞ্ছনীয়।


ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে ডিবি পুলিশের তিন সদস্যকে এনএসআইয়ের সদস্যরা ‘হাতেনাতে’ আটক করার পর চোখ বেঁধে হাতকড়া পরিয়ে বেইলি রোডের কার্যালয়ে নিয়ে মেঝেতে ফেলে এলোপাতাড়ি পিটিয়েছেন বলে ডিবির ওই সদস্যরা অভিযোগ করেছেন। এনএসআইয়ের পক্ষ থেকে চোখ বাঁধা ও হাতকড়া পরানোর অভিযোগ সত্য বলে স্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু দাবি করা হয়েছে যে তাঁদের মারধর করা হয়নি। অর্থাৎ মূল অভিযোগটির সুরাহা এখনো হয়নি। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ বিভাগ, সে কমিটির প্রধান ডিবির একজন যুগ্ম কমিশনার। তদন্ত কমিটি ডিবির সদস্যদের ঘুষ গ্রহণের ঘটনা তদন্ত করবে। কিন্তু এনএসআইয়ের সদস্যদের হাতে তাঁদের প্রহূত হওয়ার অভিযোগেরও তদন্ত হওয়া উচিত। কারণ তাঁরা যদি ঘুষ নিয়েও থাকেন, এনএসআই কর্মকর্তাদের উচিত হয়নি তাঁদের পেটানো। এনএসআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের পেটানো হয়নি, কিন্তু তাহলে কী করে তাঁরা এমন গুরুতর আহত হলেন যে তাঁদের এখন রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে? এসব অবশ্যই তদন্ত করে দেখা উচিত এবং ডিবির সদস্যদের পেটানোর অভিযোগ সত্য হলে তার প্রতিকার করা অবশ্যকর্তব্য। কারণ, ডিবি পুলিশের সদস্যদের ওপরই যদি এমন নির্যাতন ঘটতে পারে, তাহলে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে কী হতে পারে, সেটা ভেবে শঙ্কিত হতে হয়। বস্তুত, অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের ওপর নির্যাতন চালানোর প্রবণতা যে কত প্রকট, তা এই ঘটনায় ফুটে ওঠে।
সবচেয়ে গুরুতর বিষয় হলো, রাষ্ট্রীয় দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কাজের সমন্বয়ের প্রকট অভাব। সমন্বয় থাকলে এমন ঘটনা কখনোই ঘটতে পারত না। এখন এ দুটি সংস্থার মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যেন কোনো দ্বন্দ্ব-বিরোধ সৃষ্টি না হয়, তা নিশ্চিত করতে এই ঘটনার সুষ্ঠু সমাধানে উভয় পক্ষের নেতৃত্বস্থানীয় কর্মকর্তাদের উদ্যোগী হতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.