জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি-পরিত্রাণের ব্যবস্থা করতে হবে

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের মানুষের আয় বেড়েছে অনেক। কিন্তু আয়ের তুলনায় ব্যয় বৃদ্ধি অস্বাভাবিক। আঘাত লেগেছে সঞ্চয়ে। সঞ্চয়ের পরিমাণ কমতে কমতে শূন্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকেছে অনেকের। কারো কারো আবার জীবন চালাতে গিয়ে ঋণের বোঝা বাড়াতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে। এ অবস্থা মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণীরই বেশি।


শহর এবং গ্রামের মধ্যে কিছুটা হেরফের থাকলেও দ্রব্যমূল্যের কশাঘাত থেকে কেউই রেহাই পাননি। ব্যয় অস্বাভাবিক বাড়ার কারণে জীবনযাপনে মানের অধোগতি অনিবার্য হয়ে পড়েছে, যে জন্য কৃচ্ছ্রসাধনে মনোনিবেশ করতে হচ্ছে প্রায় সবাইকে। সে ক্ষেত্রে প্রথমত খরচ কমানোর জন্য অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে গিয়ে সাধারণ সাধ-আহ্লাদ ছেঁটে ফেলতে এবং বিলাসিতা বাদ দিতে হয়েছে সীমিত আয়ের মানুষকে। তারপর দেখতে হচ্ছে অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্য কোনটি। এই প্রবণতার জন্য তাকে ধীরে ধীরে খাদ্যমানও কমিয়ে আনতে বাধ্য করছে। টান পড়ছে নিত্য ক্যালরি গ্রহণের ওপর। এমনও দেখা গেছে যে কোনো কোনো মানুষকে নূ্যনতম প্রয়োজনীয় দৈনিক এক হাজার ৫০০ ক্যালরি খাদ্য গ্রহণ করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে জীবন সংকুচিত হয়ে পড়ছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে।
শহুরে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে প্রধানত বাড়িভাড়া বৃদ্ধির কারণে। একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ২০ বছরে হোল্ডিং ট্যাঙ্ না বাড়লেও বাড়িভাড়া বেড়েছে ৩২৫ গুণ। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, রাজধানীর এক কোটিরও বেশি মানুষ প্রয়োজনে বাড়িভাড়ার বিষয়ে কোনো আইনি সুবিধা পাচ্ছে না। ১৯৯১ সালে বাড়িভাড়া-সংক্রান্ত একটি আইন পাস হলেও এর কোনো বিধিবিধান ও তার প্রয়োগ এ পর্যন্ত হয়নি। কোটি মানুষেরও বেশি তাই জিম্মি হয়ে আছেন বাড়িওয়ালাদের হাতে। আবার বাড়িওয়ালাদেরও যদি জিজ্ঞেস করা হয় তাঁরা বলবেন, দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাধ্য হচ্ছেন বাড়িভাড়া বাড়াতে। কিন্তু যেহেতু কোনো নির্দিষ্ট আইন নেই, তাই যে যেভাবে পারেন ভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছেন, আর তার আঘাত পড়ছে ভাড়াটিয়ার ওপর। অন্যদিকে মোটামুটি সব শহরেই পরিবহন ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে, জ্বালানির দাম বাড়ার অজুহাতে। ব্যয় বাড়ানো হলেও যাত্রীর আয় কি বেড়েছে সেই হারে? যিনি গাড়িতে চড়তে গিয়ে অধিক হারে ভাড়া দিতে বাধ্য হলেন, তাঁকেই তো কাঁচাবাজারে গিয়ে অর্থ ব্যয় করতে হয়, সন্তানের শিক্ষার জন্য, পরিবারের সদস্যদের কাপড়চোপড় থেকে শুরু করে বিবিধ ব্যয় বৃদ্ধির মাসুল গুনতে হয়। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে মানুষের মাথাপিছু মাসিক আয় বেড়েছে ৭১.৮ শতাংশ। অথচ ভোগ ব্যয় বেড়েছে ৯৮.৮ শতাংশ। ফলে মানুষকে প্রতিমাসেই ঘাটতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
নিয়ন্ত্রণহীন জীবনযাত্রার ব্যয় জীবনযাত্রার মানকে ক্রমেই অধোগতি করছে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য অত্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে হবে। অলঙ্ঘনীয় কিছু বিষয়কে মেনে নেওয়ার পরও দ্রব্যের মূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনার ব্যবস্থা করা যায়। সেটা সম্ভব হলেও কিছুটা রেহাই পাওয়া যাবে।

No comments

Powered by Blogger.