মাশুল আরোপের বিষয়টি তোলেনি বাংলাদেশ-ট্রানজিটের আওতায় আরও সুবিধা চায় ভারত

নৌ প্রটোকলের আওতায় পণ্য ট্রানজিটের জন্য ভারত নতুন করে দুটি পোর্ট অব কল, বহুমাত্রিক ট্রানজিট-সুবিধাসহ বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। ভারতের এই প্রস্তাবে ইতিবাচক মনোভাবও দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এ অবস্থার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান নৌ প্রটোকল-সংক্রান্ত যৌথ স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রথম দিনের বৈঠক শেষ হয়েছে। তবে বৈঠকে এসব সেবার বিনিময়ে কোনো মাশুল দাবি করেনি বাংলাদেশ।


গতকাল রোববার থেকে দুই দিনব্যাপী এই স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক শুরু হয়েছে। আজ সোমবার আশুগঞ্জ নৌবন্দর পরিদর্শনসহ দ্বিতীয় দিনের বৈঠক হবে।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধান নৌ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাশুল আরোপের বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত কোর কমিটি বিবেচনা করছে। এটা আমাদের বিষয় নয়। নৌ প্রটোকলের আওতায় যেসব বিষয় রয়েছে, আমরা তা-ই নিয়ে আলোচনা করছি।’ তিনি আরও জানান, ভারতের অন্যান্য প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে। এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বৈঠকের সূত্রগুলো জানায়, গতকালের বৈঠকে প্রথম থেকেই ভারতীয় প্রতিনিধিরা শুধু নৌ প্রটোকলের আওতায় বাড়তি সুবিধা কীভাবে পাওয়া যায়, এমন মনোভাবে আলোচনা করেছেন। বিদ্যমান সুবিধার বাইরেও ভারত এখন নারায়ণগঞ্জ ও সিলেটের ছাতক থেকে বহুমাত্রিক ট্রানজিট-সুবিধা চেয়েছে। অর্থাৎ নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত নৌপথে পণ্য এনে তারপর সড়কপথে নেবে ভারত। আর ছাতক পর্যন্ত নৌপথে এবং সড়কপথে তামাবিল হয়ে পণ্য নিতে চায় তারা।
আশুগঞ্জ নৌবন্দর ছাড়া আরও দুটি পোর্ট অব কল-সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বন্দর দুটি হলো চাঁদপুর ও ছাতক। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চাঁদপুরকে পোর্ট অব কল-সুবিধা দেওয়ার আপত্তি জানানো হলেও ছাতকের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া আশুগঞ্জ নৌবন্দর পর্যন্ত নৌপথে, বাকিটা সড়কপথে ত্রিপুরার আগরতলায় ৩৫ হাজার টন খাদ্যশস্য নেওয়ার জন্য বহুমাত্রিক ট্রানজিট-সুবিধা নিয়ে যেতে চায় ভারত। ইতিমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই অনুরোধ করা হয়েছে। গতকালের বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করেন ভারতীয় প্রতিনিধিরা। প্রসঙ্গত, অবকাঠামো দুর্বলতার কারণে এই পথ ব্যবহার করে তিনটি পরীক্ষামূলক চালানের পর আর নিয়মিত চালানের অনুমতি দেয়নি বাংলাদেশ।
বৈঠকে ভারতীয় প্রতিনিধিরা মানবিক কারণে জরুরি ভিত্তিতে ১০ হাজার টন খাদ্যশস্য নেওয়ার সুযোগ দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। এ সময় বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা জানান, ত্রিপুরাবাসী এই মুহূর্তে কোনো দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত নয়। তাই মানবিক কারণ যুক্তিসংগত নয়।
বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। অন্য দিকে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নৌ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এম সি জাওহরি। স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে সাধারণত চুক্তির কারিগরি দিকগুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ নৌপথ অতিক্রম ও বাণিজ্য প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়। এর আওতায় ফিরতি পথসহ আটটি পথে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নৌপথে ভারত পণ্য আনা-নেওয়া করে থাকে। এ জন্য কোনো মাশুল নেওয়া হয় না। নদী খননসহ বিভিন্ন কাজে প্রতিবছর সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা দেয় ভারত। প্রতি দুই বছর অন্তর এই প্রটোকল নবায়ন করা হয়ে থাকে। আগামী ৩১ মার্চ প্রটোকলের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.