নেতিবাচক রাজনীতি পরিহার করুন-এবং বিরোধীদলীয় নেতা কী বলেন

সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া তাঁর দল ও জোটের শরিকদের নিয়ে বিরোধী জোটের দায়িত্ব কতটা পালন করছেন, সেদিকে খেয়াল না রেখে প্রকাশ্য জনসভায় দায়িত্বহীন কথাবার্তার তুবড়ি ছোটাচ্ছেন। ১১ অক্টোবর সিলেটের জনসভায় তিনি যেসব কথা বলেছেন, তাতে দায়িত্বহীনতা ও বিদ্বেষই ফুটে উঠেছে। বিশেষ করে, শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর একটি উক্তির উল্লেখ করে তিনি যা বলেছেন, তা শিষ্টাচারবর্জিত।


খালেদা জিয়া একাধিকবার বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কী করে প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে এমন কথা উচ্চারণ করতে পারলেন, ‘তাঁর তো ধর্মেরই ঠিক নেই?’। এ ধরনের দায়িত্বহীন কথা ছড়িয়ে তিনি কি রাজনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারবেন বলে মনে করেন? কখনো সরকারে, কখনো বিরোধী দলে নেতৃত্বের ভূমিকায় থেকে খালেদা জিয়ার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অনেক অভিজ্ঞতা হওয়ার কথা। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের স্বার্থে দেশকে পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারের পাশে দায়িত্বশীল বিরোধী দলের ভূমিকা কত গুরুত্বপূর্ণ, সেটা তাঁর উপলব্ধিতে আসা উচিত।
জনগণ খালেদা জিয়াসহ বিএনপিকে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা দিয়েছে; কিন্তু তিনি বা তাঁর দলের সাংসদেরা কি কখনো ভেবে দেখেছেন, জনগণের রায়ের মর্যাদা তাঁরা কতটা রেখেছেন? সংসদ অধিবেশনে উপস্থিত থেকে সরকারের কর্মকাণ্ডের জবাবদিহি চাওয়া ও জনমানুষের পক্ষে কথা বলার পরিবর্তে তাঁরা ক্রমাগত সংসদ বর্জন করে চলেছেন। আবার তাঁরা সাংসদ হিসেবে বিদেশ সফরসহ বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ঠিকই গ্রহণ করে চলেছেন। দেশে সমস্যার শেষ নেই, অথচ তাঁরা জনগণের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের দাবিতে আন্দোলন করছেন না, ক্ষমতার মসনদের দিকে তাকিয়ে গাছে কাঁঠাল দেখে গোঁফে তা দিচ্ছেন। তাঁরা ‘অবিলম্বে’ সরকারের পদত্যাগ দাবি করছেন; ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই তালিকা তৈরি করছেন প্রতিপক্ষ দলের কোন কোন নেতাকে ডান্ডাবেড়ি পরাবেন। আশ্চর্যের বিষয়, জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতার নাম উল্লেখ করে তাঁকে ডান্ডাবেড়ি পরানোর প্রতিশোধ নিতে বিএনপির কতিপয় নেতা যখন বললেন, তাঁরা ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকে ‘ডান্ডাবেড়ি না পরালে জনগণের দাবি পূরণ হবে না’, তখন একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হয়ে খালেদা জিয়া তাতে সায় দিলেন।
খালেদা জিয়া ও তাঁর দলের নেতাদের কথাবার্তায় যে বিদ্বেষ মনোভাব প্রকাশিত হচ্ছে, তার পরিণতি ভয়ংকর হতে পারে; সেটা কেবল দেশ ও জাতির জন্যই খারাপ পরিণতি ডেকে আনবে না, বিএনপি ও তার শরিক দলগুলোও ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুতরাং, এমন নেতিবাচক মনোভাব ত্যাগ করে প্রকৃত গণতান্ত্রিক আচরণে সচেষ্ট হোন।

No comments

Powered by Blogger.