জঙ্গি জঙ্গি রবে সরকার আবারও সরবঃ বিদেশি প্রভুদের খুশি করার চেষ্টা!

কিছুদিন বিরতির পর সরকার মিডিয়ার চিহ্নিত একটি অংশকে সঙ্গে নিয়ে আবার অহোরাত্র জঙ্গি সংকীর্তন শুরু করেছে। কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও ঊর্ধ্বতন সরকারি আমলা একই সুরে দেশে জঙ্গিবাদের ‘উত্থান’ এবং কঠোর হাতে জঙ্গিবাদ দমনের কথা বলতে শুরু করেছেন। আর এটি শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ফজলে নূর তাপস এমপির গাড়িতে বোমা হামলার পর থেকে।

সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভানেত্রী সাজেদা চৌধুরী শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকার জঙ্গিবাদ ইস্যুতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। শিগগির জঙ্গি সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে। সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ শিগগির দৃশ্যমান হবে। সাজেদা চৌধুরীর এ বক্তব্যের আগের দিন হিযবুত তাহ্রীরকে জঙ্গি সংগঠন আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও ওই ঘোষণায় সংগঠনটি বাংলাদেশে কখন কোথায় কী ধরনের জঙ্গি তত্পরতা চালিয়েছে, তার কোনো উল্লেখ নেই। অবশ্য চিহ্নিত মিডিয়ায় সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণার খবর ফলাও করে প্রকাশের পাশাপাশি এ নিধেষজ্ঞা জারির যৌক্তিকতা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। চিহ্নিত মিডিয়ায় দিনক্ষণ উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র সচিবের বরাত দিয়ে এ খবরও জানানো হয় যে, অচিরেই ৮টি ইসলামপন্থী সংগঠনকে ‘জঙ্গি সংগঠন’ আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে। এ ধরনের কিছু একটা ঘটার আভাস অবশ্য তখনই পাওয়া গিয়েছিল, যখন ব্যারিসল্টার তাপসের গাড়িতে বোমা হামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সভায় বলেছিলেন, এই হামলার সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠী জড়িত। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, উগ্র সাম্প্রদায়িক জঙ্গিগোষ্ঠী এই হামলার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এভাবে বিভিন্ন জনের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ক্ষেত্র তৈরি করে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোকে টার্গেট করা হচ্ছে বলে আমাদের মনে হয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই বেশ জোরেশোরে জঙ্গি সংক্রান্ত জিগির শুরু করেছিল। সে সময় সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে শীর্ষস্থানীয় নীতিনির্ধারকরা প্রায় বিরামহীনভাবে যেসব বক্তব্য দিতে শুরু করেছিলেন তাতে দেশ-বিদেশের যে কোনো মানুষের মনে এ ধারণা জন্মানো স্বাভাবিক ছিল যে, বাংলাদেশ জঙ্গিতে গিজ গিজ করছে। কেউ জঙ্গি ধরতে আকাশে উড়েন তো কেউ সাগরে ঝাঁপ দেন, কেউ আবার পাতাল খুঁড়ে জঙ্গি বের করে আনার শপথ নেন, কেউ কওমি মাদ্রাসাগুলোতে জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্রের সন্ব্দান পান, কেউ সশস্ত্র বাহিনীতে ‘মৌলবাদের’ বিস্তারে মূর্ছা যাওয়ার উপক্রম হন, সে এক সময় গিয়েছিল বটে! সম্ভবত ক্লান্ত হয়ে তারা সবাই এক সময় থেমেছিলেন। রহস্যজনকভাবে তাদের কণ্ঠসঙ্গী মিডিয়ার চিহ্নিত অংশও তখন থেমে গিয়েছিল। কিন্তু হালে আবার নতুন উদ্যমে জঙ্গি খোঁজার পাঁয়তারা শুরু হওয়ায় সন্দেহ হয়, রিমোট কন্ট্রোলে কোনো নতুন এজেন্ডা বর্তমান সরকারের ওপর নাজিল হয়েছে কিনা। এটা এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে, দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করে বার্নিং ইস্যুগুলো থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে নেয়ার জন্য জঙ্গিবাদ নিয়ে লাফালাফি করা বর্তমান সরকারের এক প্রিয় অস্ত্র। কিন্তু এই অস্ত্র প্রয়োগ করতে গিয়ে তারা যে দেশের চরম সর্বনাশ করে ফেলছে সেদিকে যেন কারও নজর নেই। এমনিতে বাংলাদেশকে জঙ্গিকবলিত ব্যর্থ রাষ্ট্র প্রমাণ করার জন্য একটা আন্তর্জাতিক চক্র আদাজল খেয়ে নেমেছে। সেক্ষেত্রে খোদ সরকার যদি কবুল করে যে, দেশটি জঙ্গিতে ছেয়ে গেছে, তখন বিদেশি প্রপাগান্ডা সত্য বলে স্বীকৃতি পায়। বাস্তবে তাই ঘটেছে এবং সে কারণে আমাদের কপাল পুড়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারী দূরে থাকুক পর্যটকরা পর্যন্ত এখন আর পারতপক্ষে বাংলাদেশে আসতে চান না। দু’চারজন যারা আসব আসব করছিলেন তাদের নিরস্ত্র করার জন্য সরকারের জঙ্গি বিষয়ক নব উন্মাদনাই যথেষ্ট। এভাবে জাতি হিসাবে আমাদের একঘরে ফেলে বর্তমান সরকার কাদের কী এজেন্ডা বাস্তবায়নে নেমেছে সেটাই হচ্ছে প্রশ্ন।

No comments

Powered by Blogger.