আজ আখেরী মোনাজাত by ফিরোজ মান্না

মোসত্মাফিজুর রহমান টিটো/নূরম্নল ইসলাম লাখো মুসলিস্নর এবাদত-বন্দেগিতে তুরাগতীর মুখরিত। মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় দিন পার হয়েছে ধর্মীয় নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে।
আখেরাতে মুক্তিলাভের আশা নিয়ে মুসলিস্নরা আলস্নাহর নৈকট্য লাভে দিনরাত তাঁরই নাম জপে যাচ্ছেন। তিনি মহান_ তিনিই পাপমোচন করে পুণ্যের পালস্না ভারি করবেন। এ পুণ্যই পরকালের মূলধন। এমন বয়ান শুনতে মুসলিস্নরা দ্বিতীয় দিন তুরাগতীরে বসে ছিলেন। আজ দুপুর সোয়া ১২টা থেকে জোহরের নামাজের আগে যে কোন সময় আখেরী মোনাজাত শেষ হবে। আর এ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ৩ দিনব্যাপী আয়োজিত বিশ্ব এজতেমা। তবলীগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরবি্ব দিলস্নীর মাওলানা জোবায়রম্নল হাসান আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করবেন। আখেরী মোনাজাতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী নেতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের অংশ নেয়ার কথা রয়েছে।
শনিবার এজতেমা ময়দানে ১০৮টি যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নানা কারণে মারা গেছেন পাঁচ মুসলিস্ন। দিন-রাত অবিরত কোরান ও হাদিসের বয়ান হয়েছে। আরবী ভাষার বয়ান বাংলা, ইংরেজী, উর্দু, ফার্সীতে তর্জমা করে শোনানো হয়। লাখ লাখ মানুষের সঙ্গে একসঙ্গে আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে মোনাজাতের আগ মুহূর্ত পর্যনত্ম মুসলিস্নরা দলে দলে এজতেমা ময়দান ও তার আশপাশের এলাকায় হাজির হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বয়ানে যা বললেন
শনিবার তবলীগ মুরবি্বগণ ইসলামের মৌলিক বিষয় কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ ও যাকাতের বিষয়ে গুরম্নত্বারোপ করে মূল্যবান বয়ান করেন। এছাড়া তবলীগ বা দ্বীনের মেহনতের ওপর গুরম্নত্বপূর্ণ বয়ান হয়। তবলীগ মুরবি্বগণ তাদের বয়ানে বলেন, মহান আলস্নাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। মৃতু্যর সময় যখন ঘনিয়ে আসবে তখন এক মুহূর্তও দেরি করার মতা আমাদের নেই। কবরে চলে গেলে আমরা আর ফিরে আসতে পারব না। কাজেই আর সময় নষ্ট করার কোন সময় নেই। রাসুল (সা) বলেছেন, হে মানবকুল বল_ 'লা ইলাহা ইলস্নালাহু মুহাম্মাদুর রাসূলস্নাহ।' তাহলে তোমরা কামিয়াব হবে। কিন্তু মানুষ সেই দাওয়াতের কাজ থেকে সরে গেছে। দাওয়াতের কাজ থেকে সরে না গেলে মানুষ নামাজ ছাড়ত না। আলস্নাহর এবাদতে মশগুল থাকত। দুনিয়ার ধনদৌলতে শানত্মি আসে না। ধনদৌলত এক জিনিস আর শানত্মি আরেক জিনিস। সহি ইমান ও আমলে শানত্মি আসে। ইমান না থাকায় ভেতর থেকে ভয় তাকওয়া চলে যায়। এর জন্য জিন্দেগিতে অভাব আসে। হানাহানির ঘটনা ঘটে। ইমান আমলের কারণে মানুষের মনে মহব্বত সৃষ্টি হয়, শানত্মি আসে। ইমান মেহনত না থাকলে মানুষের মনে জানোয়ারের খাসলত সৃষ্টি হয়। এর জন্য ভাই ভাইকে, ছেলে পিতাকে খুন করতে কণ্ঠাবোধ করে না। ধনদৌলত দুনিয়ায় পেরেশানি সৃষ্টি করে। লোভ লালসা ভুলে গিয়ে আলস্নাহর পথে চলার জন্য বয়ানকারী মুরবি্বগণ সকলের প্রতি অনুরোধ জানান।
শনিবার বাদ ফজর দিলস্নীর জমসেদ আলী, বাদ জোহর বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল কাদের, বাদ আছর দিলস্নীর মাওলানা জোবায়রম্নল হাসান, বাদ মাগরিব পাকিসত্মানের আব্দুল ওহাব বয়ান করেছেন।

যৌতুকবিহীন বিয়ে
যৌতুক সমাজের একটি দুষ্টু ৰত। এ ৰত থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ হলেও এখান থেকে মানুষ বের হয়ে আসতে পারছে না। বিশ্ব এজতেমার যৌতুকের বিরম্নদ্ধে অবস্থান রয়েছে। এজতেমার শুরম্ন থেকেই এখানে যৌতুকবিহীন বিয়ে পড়ানোর রেওয়াজ পালন হয়ে আসছে। এবারও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এজতেমার দ্বিতীয় দিন বাদ আছর যৌতুকবিহীন বিয়ে পড়ানোর আয়োজন করা হয়। এ আয়োজনে দেশের বিভিন্ন এলাকার নির্লোভ ১০৮ দম্পতি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এজতেমা ময়দানের মূল মঞ্চে বরের উপস্থিতিতে কনের অভিভাবকের উপস্থিতিতে এ বিয়েগুলো অনুষ্ঠিত হয়। বিয়েতে কনের সম্মতি নিয়ে অভিভাবকরা উপস্থিত হন। এখানে কনের উপস্থিতির কোন প্রয়োজন নেই। তবে বরের অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে। যৌতুকবিহীন বিয়ে পড়ান তবলীগের শীর্ষনেতা দিলস্নীর মুরবি্ব মাওলানা জোবায়রম্নল হাসান। প্রতিবছরই এজতেমার দ্বিতীয় দিনে যৌতুকবিহীন বিয়ে পড়ানোর আয়োজন করা হয়। বিয়ে পড়ানোর পর বর ও কনে উভয়পৰের অভিভাবকরা উপস্থিত সকলকে খেজুর-খুরমা খাইয়ে মিষ্টিমুখ করান। প্রতিবছর যৌতুকবিহীন বিয়ে এজতেমার একটি বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে সকলের সামনে উপস্থিত হয়। এখানে উপস্থিত মুসলিস্নরা নিজেদের ছেলেমেয়ের যৌতুক আদান-প্রদান না করে বিয়ে দেয়ার উৎসাহ পান।

৮০টি দেশের মেহমান
শনিবার সন্ধ্যা পর্যনত্ম ইয়ামেন, ভারত, পাকিসত্মান, মালদ্বীপ, সিঙ্গাপুর, ফিলিপিন্স, কাতার, কুয়েত, আমেরিকা, জর্ডান, মিসর, আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ ৮০ দেশের ২৪ হাজার ৯৪২ বিদেশী মুসলিস্ন এজতেমায় অংশ নিয়েছেন। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে এজতেমায় স্থাপিত তথ্যকেন্দ্র জানিয়েছে। আখেরী মোনাজাতের আগ মুহূর্তেও বিদেশী মেহমান আসবেন। এ বছর অন্য বছরের তুলনায় বিদেশী মেহমানের সংখ্যা অনেক বেশি। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এ বছর দেশী-বিদেশী মেহমানের সংখ্যা বেড়েছে। তবে যে হারে মুসলিস্নদের সংখ্যা বাড়ছে সে তুলনায় এজতেমার জায়গা বাড়েনি। ফলে মানুষজনকে প্যান্ডেলের পরিবর্তে খোলা আকাশের নিচে রাসত্মায় বসে বয়ান শুনতে হচ্ছে। তবে বিদেশী মুসলিস্নদের জন্য এজতেমা ময়দানের মূল মঞ্চের কাছে খিত্তা (জায়গা) করা হয়েছে। তাঁদের যাতে কোন প্রকার ভোগানত্মির শিকার হতে না হয় সেজন্য সরকারী-বেসরকারী কড়া নজর রয়েছে।

পাঁচ মুসলিস্নর মৃতু্য
এজতেমা ময়দানে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যনত্ম ৫ মুসলিস্নর মৃতু্য হয়েছে। এদের মধ্যে কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর মাথাভাড়ি গ্রামের হাজী নাজিমউদ্দিনের ছেলে নুরম্নল ইসলাম (৬৫) রাত ১২টা ১০ মিনিটে, ময়মনসিংহ জেলা সদরের হরেকৃষ্ণ সড়কের হাজী মকবুল (৬৫) রাত ১২টায়, রাজশাহী জেলার সার রংপুরের সাহার আলী মোলস্না (৭০) ভোর ৪টায়, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের রইসউদ্দিন আকন্দ (৬২) ভোর ৫টায়, ময়মনসিংহের মাসকান্দা এলাকার শামসুদ্দিন (৬০) হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। তাঁদের এজতেমা ময়দানে জানাজা হয়েছে। পরে লাশ স্বজনরা বাড়ি নিয়ে গেছেন।

আইনশৃঙ্খলা
র্যাব ও পুলিশের সাদা পোশাকধারী সদস্যরা শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার দুপুর পর্যনত্ম ৩৭ ছিনতাইকারীকে আটক করেছে। বিভিন্ন অপরাধে এজতেমা ময়দানের মূল প্যান্ডেল ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আরও কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। গোটা এজতেমা এলাকায় সাড়ে ১৮ হাজার পুলিশ, র্যাব ও বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার কর্মী দায়িত্ব পালন করছেন। গত দুই দিনে এজতেমা এলাকায় বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

মোবাইল কোর্ট
ভেজাল ও নিম্নমানের খাবার বিক্রি বন্ধ করতে এজতেমা ময়দানসংলগ্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছে। কয়েক ৰুদ্র ব্যবসায়ীকে জরিমানাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ
সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থা সচল রাখতে শনিবার মধ্যরাত ১২টা থেকে টঙ্গীর মরকুন, চান্দনা চৌরাসত্মা ও কালিয়াকৈরের চন্দ্রা থেকে কেবল এজতেমার মুসলিস্নবাহী গাড়ি চলতে দেয়া হয়েছে। অন্যান্য যানবাহনের বেলায় কড়াকড়ি ছিল।

ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পে মুসলিস্নদের ভিড়
মন্নুনগর এলাকায় স্থাপিত ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা মুসলিস্নদের গতকাল ভিড় দেখা গেছে। পেটের পীড়াসহ নানা রোগে আক্রানত্ম মুসলিস্নরা চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া টঙ্গী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শনিবারও ভর্তি করা হয়েছে কয়েক মুসলিস্নকে।

ভিআইপিরা কে কোথায় মোনাজাতে অংশ নেবেন
রাষ্ট্রপতি জিলস্নুর রহমান, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বয়ান মঞ্চের পাশে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাটা সু ফ্যাক্টরিতে এবং বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এটলাস (হোন্ডা) ফ্যাক্টরিতে বিশেষভাবে স্থাপিত মঞ্চে অবস্থান নিয়ে আখেরী মোনাজাতে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.