আদালতের মতে রিভিউ অর্থ চাঁদে হাত দেয়া, শুনানি চলছে- বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা

 জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় সুপ্রীমকোর্টের রায় রিভিউ-এর ওপর শুনানি শুরম্ন হয়েছে। রবিবার মেজর (অব) বজলুল হুদা ও লে. কর্নেল (অব) একেএম মহিউদ্দিন আহাম্মেদ (ল্যান্সার)-এর আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুলস্নাহ আল মামুন শুনানিতে তাঁর বক্তব্য শেষ করেছেন।
আজ সোমবার লে. কর্নেল (অব) সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খানের আইনজীবী আব্দুর রেজ্জাক খান ও লে. কর্নেল (বরখাসত্ম) সৈয়দ ফারম্নক রহমান ও লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দিন আহম্মেদ (আর্টিলারি)'র আইনজীবী খান সাইফুর রহমান শুনানিতে বক্তব্য রাখবেন। ১৯ জানুয়ারির মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পাঁচ খুনী রিভিউ পিটিশন দাখিল করে, চেম্বার জজ ২৪ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেন। রবিবার শুনানির শুরম্নতেই আসামি পৰের আইনজীবী খান সাইফুর রহমান এক সপ্তাহের সময় চান। এ সময় রাষ্ট্রপৰের প্রধান কেঁৗসুলি এ্যাডভোকেট আনিসুল হক এর তীব্র বিরোধিতা করেন। আদালত এ সময় আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুলস্নাহ আল মামুনকে বলেন, আপনি প্রস্তুত। মামুন এ সময় শুনানি শুরম্ন করেন।
ব্যারিস্টার আব্দুলস্নাহ আল মামুনের শুনানির সময় আদালত বার বার তাঁকে স্মরণ করিয়ে দেয়, এটি রিভিউ-এর ওপর শুনানি, ইচ্ছা করলেই অনেক কিছু বলা যাবে না। রিভিউটা হেয়ারিং নয়। আমরা আপনার কথা নিশ্চয়ই শুনব। আপীল শুনানিতেও শুনেছি। আসামি পৰের আইনজীবী ব্যারিস্টার মামুন বার বার ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বিষয়টি তুলে ধরেন। এ সময় আদালত তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলে, রিবিউ অর্থ হলো চাঁদে হাত দেয়া ছাড়া আর কিছু নেই। শুনানি শেষে ব্যারিস্টার মামুন এবং সরকার পৰের প্রধান কেঁৗসুলি আনিসুল হক সাংবাদিকদের ব্রিফিং প্রদান করেন।
রাষ্ট্রপৰের প্রধান কৌসুলি এ্যাডভোকেট আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, উনারা (আসামি পৰের উকিল) শুনানির জন্য এক সপ্তাহ সময় চেয়েছিলেন। আমরা এর বিরোধিতা করেছি। রিভিউ দাখিরের শেষ সময় ১৯ জানুয়ারি। আমরা যখন চেম্বারে গেলাম তখন চেম্বার বিচারপতি শুনানির জন্য ২৪ জানুয়ারি নির্ধারণ করলেন। ১৯ জানুয়ারির মধ্যে সব রিভিউ পিটিশন দাখিল করা হবে। তারা এ সময় বলেন, ২৪ জানুয়ারি শুনানি করতে কোন অসুবিধা নেই। অথচ রবিবার তাঁরা বললেন, শুনানির জন্য প্রসত্মত নয়, তারা শুনানি করতে পারবে না। শুনানির জন্য সময় দেয়া হোক। আসামি পৰের আইনজীবী আমাকে অভিযোগ করে বলেছেন, প্রসিকিউশন কোর্টের কাছে যা চায় তাই দেয়া হয়। আমরা এর বিরোধিতা করে বলেছি, ২০০২-২০০৭ পর্যনত্ম তারা আপীল শুনানির জন্য আবেদন করেনি। রিভিউ পিটিশনের স্কোপটা খুবই সীমিত। এতে কোর্ট বলেছে, রিভিউ পিটিশন চাঁদে হাত দেয়ার মতো।
আসামি পৰের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুলস্নাহ আর মামুন সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় রিভিউ পিটিশন শুনানিতে মেজর (অব) বজলুল হুদা ও লে. কর্নের (অব) একেএম মহিউদ্দিন আহম্মেদ (ল্যান্সার)-এর বিষয়গুলো শুনানিতে আদালতের সামনে তুলে ধরেছি। ১২টি পয়েন্টের ওপর বক্তব্য রেখেছি। নতুন যে বিষয়টি তুলে ধরেছি তা হলো ১৯৭৫ সালের ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। ৭৫ সালের ইনডেমনিটি করা হয়েছিল সরকার পরিবর্তনের জন্য। সেখানে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার কথা বর্ণিত ছিল না। আইন বাতিল হতে পারে, বিশেষ দিনের ঘটনার বিচার হতে পারে না। বিচার করতে হলে হবে সরকার পরিবর্তনের। আইনে আছে সামরিক অভু্যত্থান সফল হবে, তার বিচার হবে না। মামুন বলেন, যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছি আদালত তা গ্রহণ করলে মামলা থাকবে না।
রবিবার প্রধান বিচারপতি মোঃ তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে চার সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে রিভিউ শুনানি শুরম্ন হয়। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন, বিচারপতি বিজন কুমার দাস, বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন ও বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
আজ আবার শুনানি শুরম্ন হবে। আসামি পৰের আইনজীবী খান সাইফুর রহমান ও আব্দুর রেজ্জাক খান শুনানিতে তাদের বক্তব্য তুলে ধরবেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ১৯ নবেম্বর ঐতিহাসিক রায় প্রদান করা হয়। এরপর ১৭ ডিসেম্বর ৪১২ পৃষ্ঠার রায়ে পাঁচ বিচারপতি স্বাৰর প্রদান করেন। রায়ের অনুলিপি বিচারিক আদালতে পাঠানো হয়েছে। বিচারিক আদালত কারাগারে পাঁচ খুনীর নামে লাল খামে মৃতু্য পুরোয়ানা জারি করেছে।
কারা কর্তৃপৰ এখন প্রস্তুত। আইনী প্রক্রিয়াগুলো শেষ হলেই কারা কর্তৃপৰ প্রশাসনিক কাজ শুরম্ন করবে। ইতোমধ্যে খুনীদের স্বজনরা কারাগারে এসে দেখা করেও গেছে। রিভিউ নিষ্পত্তি হবার সঙ্গে সঙ্গে খুনীদের রায় কার্যকর করা হবে বলে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.