বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ঐতিহাসিক রায় বাংলায় রূপান্তর : by এনামুল হক

বিষয়টা স্বীকারোক্তির গুরুত্ব ও এর সা্যমূল্যের সঙ্গে সম্পর্কিত, আইনে এর গ্রহণযোগ্যতার সঙ্গে নয়।" মোহাম্মদ হোসেন উমর বনাম কে এস দালিপসিংঘি, এআইআর ১৯৭০ এসসি ৪৫, রামপ্রকাশ বনাম পাঞ্জাব রাজ্য এআইআর ১৯৫৯, এসসি ১ এবং রাষ্ট্র বনাম ফজু কাজী ওরফে কাজী ফজলুর রহমান ও অন্যান্য ২৯ ডিএলআর (এসসি) ২৭১ মামলায়ও একই অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে।
স্বীকারোক্তির গুরুত্ব প্রসঙ্গে উচ্চতর আদালতগুলোর বক্তব্য হলো এই যে স্বীকারোক্তি আইন অনুসারে রেকর্ডভুক্ত করা হলে, সেটি সত্য ও স্বেচ্ছায় প্রদত্ত ও অভিযোগমূলক চরিত্রের প্রমাণিত হলে এবং সমাগ্রিকভাবে বক্তব্যটি পরীা করে যদি দেখা যায় যে, মামলার বাকি অংশের তুলনায় সেটা সঙ্গতিপূর্ণ তাহলে সেই স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত করা যেতে পারে। একটি মামলায় এর সমর্থনে কি পরিমাণ তথ্য প্রয়োজন হতে পারে সেটা সর্বদাই হবে এমন এক বিষয় যা প্রতিটি মামলার পরিস্থিতির আলোকে নির্ণয় করতে হবে। কখনও কখনও সমর্থনসূচক তথ্যপ্রমাণ না মিলতে পারে। সেেেত্র স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করা হোক আর নাই হোক আদালত সেই স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে স্বীকারোক্তিকারীর বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তে পেঁৗছতে পারে যদি দেখ যায় যে স্বীকারোক্তিটা সত্য ও স্বেচ্ছায় প্রদত্ত এবং তা নির্যাতন, জবরদস্তি বা প্ররোচণার মাধ্যমে আদায় করা হয়নি। এ ধরনের মামলাকে দেখার উপযুক্ত পন্থা হলো স্বীকারোক্তিকে একেবারেই বিবেচনা থেকে বাদ দিয়ে প্রথমে আসামির বিরুদ্ধে সা্যপ্রমাণ জড়ো করা এবং এর ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত করা যেতে পারে বলে যদি ধারণা করা হয় তাহলে সত্যিই সেটা করা যায় কি না দেখা। যদি স্বাধীনভাবে একথা বিশ্বাস করা সম্ভব হয় তাহলে স্বীকারোক্তিকে সাহায্যার্থে তলব করার কোন প্রয়োজন নেই। আদালত যেখানে অপর সা্যপ্রমাণের ভিত্তিতে কাজ করতে প্রস্তুত নয় তেমন পরিস্থিতিতে বিচারক সাহায্যার্থে স্বীকারোক্তি তলব করতে পারেন এবং অপর সা্যপ্রমাণকে আশ্বাস যোগানের জন্য সেটাকে কাজে লাগাতে পারেন।
দেখা যায় যে, সুলতান শাহরিয়ারের স্বীকারোক্তিটা হচ্ছে সেরনিয়াবাতের বাসভবনের সামনে এবং তারপর বেতার কেন্দ্রে তার উপস্থিতি সংক্রান্ত এবং সেটা অপর দু'জনের অর্থাৎ সৈয়দ ফারুক রহমান ও মহিউদ্দীনের (আর্টিলারি) স্বীকারোক্তি দ্বারা সমর্থিত। তার পরবতর্ী আচরণ সম্পর্কিত বক্তব্যটা রাষ্ট্রপরে ১৫, ৪২ ও ৪৬ নং সাীর বক্তব্যের দ্বারা সমর্থিত হয়েছে। ফারুক রহমানের স্বীকারোক্তি অপর দুই আসামি সুলতান শাহরিয়ার ও মহিউদ্দীনে (আর্টিলারি) স্বীকারোক্তির দ্বারা সমর্থিত। রাষ্ট্রপরে ১, ৪, ১১, ১২, ১৫, ২১, ৪২ ও ৪৬ নং সাী তাদের দেয়া গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনায় তার বক্তব্য সমর্থন করেছেন। মহিউদ্দীনের (আর্টিলারি) স্বীকারোক্তি অপরাপর স্বীকারোক্তিকারী আসামি কর্তৃক গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনাসমূহে সমর্থিত হয়েছে। রাষ্ট্রপরে ১৭, ১৮, ২৭ ও ৩৪ নং সাীও তার বক্তব্য সমর্থন করেছেন। রাতের কুচকাওয়াজে তার উপস্থিতি সম্পর্কে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা রাষ্ট্রপরে ১১, ২১, ২২, ২৪, ২৫, ২৯ ও ৩৫ নং সাী কর্তৃক সমর্থিত হয়েছে।
পরবতর্ী প্রশ্ন হলো উপরোক্ত অপরাধ স্বীকারোক্তিগুলো সত্য ও স্বেচ্ছায় প্রদত্ত হয়েছে বলে যদি প্রমাণিত হয় তারপরও সেগুলো সা্য আইনের ১০ ধারায় ষড়যন্ত্র শেষ হয়ে যাওয়ার পর অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ প্রমাণের জন্য স্বীকারোক্তিকারীদের বিরুদ্ধে এবং সেই সঙ্গে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে আপীলকারীদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সা্য গ্রহণযোগ্য কি না।
দেখা যায় যে, সা্য আইনের ১০ ধারা তখনই শুধু কার্যকর হয় যখন আদালত একথা বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি আছে বলে সন্তুষ্ট হয়, যে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একটা অপরাধ সংঘটন বা অভিযোগযোগ্য অন্যায় করার জন্য একত্রে ষড়যন্ত্র করেছে। অর্থাৎ কোন ব্যক্তির কার্যক্রমকে তাঁর ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারার আগে সেই ব্যক্তি ষড়যন্ত্রের একটা প ছিল এই মর্মে আপাত গ্রহণযোগ্য সা্যপ্রমাণ থাকতে হবে। এ ধরনের যুক্তিসঙ্গত ভিত্তির অস্তিত্ব থাকলে অভিপ্রায় সাদরে গৃহীত হবার পর সেই অভিন্ন অভিপ্রায় প্রসঙ্গে ষড়যন্ত্রকারীদের একজন কিছু বললে, লিখলে বা করলে তা অন্যদের বিরুদ্ধে প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়ায়। সেটা শুধু ষড়যন্ত্রের অস্তিত্ব প্রমাণের জন্যই যে তা নয়, উপরন্তু এই বিষয়টিও প্রমাণ করার জন্য যে অপর ব্যক্তিও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল। উপরোক্ত কাজের সা্য মূল্য দুটো অবস্থার দ্বারা সীমাবদ্ধ। যথা কাজটি তাদের অভিন্ন অভিপ্রায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে হবে এবং তাদের যে কোন একজন মনে মনে পোষণ করেছে এমন একটা সময়ের পর সেই সময়ের প্রোপটে হতে হবে।
ষড়যন্ত্র বলতে বুঝায় একটা অপরাধ সংঘটনর জন্য দুই বা ততোধিক ব্যক্তির যৌথ কর্মকাণ্ডের চেয়েও বেশি কিছু। সেটা যদি ভিন্নভাবে হয় তাহলে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মিলিতভাবে সংঘটিত যে কোন অপরাধের েেত্র ১০ ধারা প্রযোজ্য হবে এবং তদনুযায়ী সেই অপরাধের বিচারে কোন সা্যের আমদানি ঘটবে যার মোকাবেলা করা অভিযুক্ত ব্যক্তির প েঅসম্ভব হবে। এই ধারার উদ্দেশ্য হচ্ছে ষড়যন্ত্র চলাকালে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রকারীর মধ্যে ষড়যন্ত্র কার্যকর করার বিষয় নিয়ে যেসব যোগাযোগ বা কথাবার্তা হয়েছিল সে সংক্রান্ত সা্যপ্রমাণকে মেনে বা স্বীকার করে নেয়া। এখন প্রশ্ন হলো ১০ নং ধারার ব্যাখ্যা এত বিশদ করা সম্ভব কি না যাতে করে অতীতে একটা ষড়যন্ত্র সম্পন্ন হবার পর সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের প্রকৃত কার্যক্রমে কি কি করা হয়েছিল সে প্রসঙ্গে একজন ষড়যন্ত্রকারীর দেয়া স্বীকারোক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
ভারত সম্রাট বনাম অবনী ভূষণ চক্রবতর্ী, ১৫ কেডবি্লউএন ২৫ মামলায় প্রশ্ন উঠেছিল সহ-আসামিদের স্বীকারোক্তি সা্য আইনের ১০ নং ধারার একটি প্রাসঙ্গিক বিষয় কি না। উপরোক্ত সিদ্ধান্তে ফুল বেঞ্চ নিম্নোক্ত মন্তব্য প্রকাশ করেছে :
(ক্রমশ)

No comments

Powered by Blogger.