দেশ শাসন সৈনিকের কাজ নয়- বুঝেছেন মইন

 সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ বলেছেন, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর জরম্নরী অবস্থা চলাকালে জেনেশুনে তিনি কোন অন্যায় করেননি। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, এ সময়ে অভিজ্ঞতায় তিনি বুঝেছেন দেশ শাসন করা সৈনিকের কাজ নয়। এ জন্য তিনি নিজে এবং সেনাবাহিনীকে সব সময় রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চেয়েছেন।
শনিবার ঢাকার বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে তেজগাঁও পলিটেকনিক হাইস্কুলের ৭৫ বছর পূর্তি উপল েআয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের কাছে ওয়ান-ইলেভেনের পর জরম্নরী অবস্থা জারির অন্যতম প্রধান নায়ক সাংবাদিকদের এ সকল কথা বলেন। গত বছরের মাঝামাঝিতে সেনাপ্রধান পদ থেকে অবসর নেন সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত সেনা কর্মকর্তা। অবসরের পর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছুটি কাটাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে যান। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরে আসেন। জেনারেল মইন বলেন, আমি বাংলাদেশকে ভালবাসি, বাংলাদেশের জনগণকে ভালবাসি। এ দেশকে আমি যতটুকু দিতে পেরেছি, আমি মনে করি তার থেকে অনেক বেশি পেয়েছি। ওয়ান-ইলেভেন ও জরম্নরী অবস্থা জারি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ সময় অভিজ্ঞতায় আমি বুঝেছি রাজনীতি বা দেশ শাসন করা সৈনিকদের কাজ নয়। পাশর্্ববর্তী দেশ থেকেই আমি একই অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। এ জন্য সব সময় আমি নিজে এবং সেনাবাহিনীকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চেয়েছি। জরম্নরী অবস্থা চলাকালে নিজে কোন অন্যায় করেননি দাবি করে তিনি বলেন, জেনেশুনে আমি কোন অন্যায় করিনি। নিজের কাজের মূল্যায়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, কোন কাজের মূল্যায়ন করতে গেলে কমপ ে৫০ বছর অপো করতে হয়। আমরা এখন অপো করি। দেখি ৫০ বছর পর কি মূল্যায়ন হয়। তবে আমি আশা করি ৫০ বছর পর আমার কাজের ভাল মূল্যায়ন হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যদি আমরা ভাল গণতন্ত্র চাই তবে আমাদের গণতন্ত্রের চচর্া করতে হবে। গণতন্ত্রের মান উন্নয়ন করতে হবে। ভবিষ্যতে রাজনীতি করার কোন ইচ্ছা আছে কিনা এ প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, আমি এখনও এলপিআরে আছি। বাংলাদেশের জনগণকে ভালবাসি। জনগণের ভালবাসার মধ্যে থাকতে চাই।
২২ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক সংঘাতময় পরিস্থিতিতে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরম্নরী অবস্থা জারির নেপথ্য নায়ক হিসাবে চিহ্নিত করা হয় তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদকে। জরম্নরী অবস্থা চলাকালে ড. ফখরম্নদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশ পরিচালনা করলেও দেশ শাসনের নেপথ্য চালিকাশক্তি ছিলেন তিনি। জরম্নরী অবস্থা চলাকালে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও গ্রেফতার করে একাধিক দুর্নীতির মামলা দেয়া হয়। প্রশাসনের মদদে তথাকথিত সংস্কারের নামে রাজনৈতিক দলগুলোকে ভাঙ্গাগড়ার চেষ্টা চালানো হয়। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে জবানবন্দী আদায়ের নামে এ সময় নানা নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। রয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায়ের অভিযোগও। নির্যাতন থেকে রেহাই পাননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিকরাও। অবশেষে ২০০৮ সালের ২৯ জানুয়ারি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের বিপুল বিজয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে মতা হসত্মানত্মর করে বিদায় নেয় ফখরম্নদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে ওয়ান-ইলেভেনের মতা গ্রহণ এবং রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের ওপর নির্যাতনের জন্য মইন উ আহমেদসহ সিনিয়ন কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়। জরম্নরী অবস্থা চলাকালে নিজের চাকরির মেয়াদও এক বছর বাড়িয়ে নেন মইন উ আহমেদ। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প থেকে মইন উ আহমেদকে ওয়ান-ইলেভেনের খলনায়ক আখ্যা দিয়ে তাঁর বিচার দাবি করা হয়। জরম্নরী অবস্থা চলাকালে গ্রেফতার ও নির্যাতনের জন্য মইন উ আহমেদের বিরম্নদ্ধে আদালতে মানহানি মামলা দায়ের করেন চারদলীয় জোট সরকারের বিদু্যত প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। মামলাটি এখনও আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.