প্রথম ইনিংসে এবারও কাছাকাছি থাকতে পারবে টাইগাররা? by আরিফুর রহমান বাবু

 সুযোগ নাকি বার বার আসে না। জেতা সম্ভব হোক না হোক, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনেক কিছুই করার সম্ভাবনা ছিল। প্রথম ইনিংসে মাত্র ১ রানে পিছিয়ে থাকার পরও ম্যাচ ড্র কিংবা জয়ের সুযোগ ছিল।
কিন্তু এর কোনটাই করতে পারেনি টাইগাররা। এবার ঢাকায় দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ম্যাচে কি আর অমন পরিস্থিতি হবে? ঘুরিয়ে বললে শাকিব বাহিনী কি আবার লড়াই জমিয়ে তুলতে পারবে? নাকি এবার শুরম্ন থেকেই ব্যাকফুটে চলে যাবে। তার পর একপেশে ম্যাচে বড়সড় ব্যবধানে হেরে নিউজিল্যান্ড যাবে? মোটে একদিন হয়েছে। তাতেই এতদূর পর্যনত্ম বলা কেন? সব সম্ভবের খেলা ক্রিকেটে শেষ বলে কিছুই নেই। সামনের দিনগুলোয় অনেক কিছু হতেও পারে। হবেই না, শাকিবরা কিছুই করতে পারবে না_ এমন ভাবার এখনই কি আছে? কেউ এমন কথা বললে তাঁর মাথায় আঘাত করা যাবে না। তবে বাসত্মবতা হচ্ছে, চট্টগ্রামের পরিবেশ-পরিস্থিতি ঢাকায় নেই। সেই ঘন কুয়াশাঢাকা আকাশ নেই। পিচেও তেমন ময়েশ্চার নেই যে ভারতের বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপকে আবার ধাক্কা দিয়ে ২৪৩ রানেই ফেলা দেয়া যাবে। গত কয়েকদিনের ঝলমলে রোদে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট অনেকটাই সহজ ও স্বাভাবিক। শুরম্নর প্রথম ঘণ্টায় একটু-আধটু মু্যভমেন্ট থাকলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা আরও সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু সেই পিচেও বাজে ও দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ের নির্মম প্রদর্শনী শাকিব বাহিনীর। ২৩৩ রানেই শেষ প্রথম ইনিংস। মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটি না খেললে এই রানও হতো না। ৫১ রানে ইনিংসের অর্ধেক শেষ হবার পর এতদূর যাওয়া সম্ভব হয়েছে রিয়াদের অসামান্য দৃঢ়তায়। জবাবে ভারতীয়রা এগোচ্ছে তরতরিয়ে। রবিবার প্রথম দিনের শেষ ঘণ্টায় ধোনি বাহিনী করে ফেলেছে বিনা উইকেটে ৬৯। আজ সোমবার ১৬৪ রানে পেছনে থেকে শুরম্ন করবেন সেবাগ (৪১) ও গাম্ভীর (২৬)।
শেষ পর্যনত্ম প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থাকতে না পারলেও চট্টগ্রামে খুব কাছাকাছিই ছিল বাংলাদেশ। মাত্র ১ রানের ফারাক ছিল। কিন্তু ঢাকায় দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে এই পার্থক্যের দেয়াল কত বড় হবে? রবিবার প্রথম দিনশেষে এ প্রশ্নই ঘুরেফিরে উঠছে। উঠবেই। কারণ, দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং করে আবার কম রানে (২৩৩) অলআউট শাকিবের দল। জবাবে ভারত বিনা উইকেটে ৬৯। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, সেবাগ-গাম্ভীর প্রথম উইকেটে চট্টগ্রামেও শুরম্নতে এমন ব্যাটিংই করেছিলেন। প্রথম ইনিংসে ৭৯, আর দ্বিতীয় ইনিংসে ৯০ রানের উদ্বোধনী জুটি হয়েছিল। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শাকিব ব্রেক থ্রম্ন আনার পর পেসার রাজিব এদিকে আর বাঁহাতি স্পিনার শাকিব অন্যদিকে লাগাম টেনে ধরলে ২৪৩-এ থেমে গিয়েছিল ভারত। কাজেই একদম হতোদ্যম হবার কিছু নেই। কিন্তু সংশয় জাগাচ্ছে পরিবেশ। উইকেট আরও স্বাভাবিক হয়ে উঠলেই বিপদ। তখন আর সেবাগ, গাম্ভীর, দ্রাবিড়, শচীন, যুবরাজ ও ধোনিদের আড়াই শ'র নিচে আটকে রাখা সম্ভব হবে না। ওরা বার বার খারাপ করবেন না। হয়ত রানপাহাড় গড়ে তুলবেন। ওদের আটকাতে হলে আজ দ্বিতীয় দিন সকালেই চটজলদি কয়েকটা উইকেট তুলে নিতে হবে।
রবিবার প্রথম দিনশেষে যে ব্যাটসম্যান একা লড়েছেন, সেই রিয়াদও এমন আশাই করলেন। এই লড়িয়ে ক্রিকেটারের আশা, সোমবার সকালে পেসাররা উইকেটের সহায়তায় ভারতের টপ অর্ডারে ভাঙ্গন ধরাবে। সেই আশায় থাকা ছাড়া উপায় নেই। কারণ, টস জিতে ব্যাটিংসহায়ক পরিবেশে যে দায়িত্বপূর্ণ উইলোবাজি দরকার ছিল, তামিম, ইমরম্নল কায়েস, জুনায়েদ, আশরাফুল, রকিবুল ও শাকিব তার কিছুই করতে পারেননি। প্রথম দু'জন আউট হয়েছেন শূন্য রানে। জুনায়েদ (৭) আর রকিবুলও (৪) ফিরেছেন দু'অঙ্কে পেঁৗছানোর আগেই। আর আশরাফুল, শাকিব ও মুশফিক আশা জাগিয়েছিলেন। মনে হচ্ছিল, বিপর্যয়ের সব অন্ধকার কেটে যাবে। কিন্তু পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে পুরোপুরি মানিয়ে নেবার পরও তিনজনের কেউ লম্বা ইনিংস খেলতে পারেননি। সেটা জহির, ঈশানত্ম আর প্রাজ্ঞন ওঝার সমীহ জাগানো বোলিংয়ের কারণে নয়, নিজেদের ইচ্ছাশক্তি ও আনত্মরিক প্রচেষ্টায় কমতি থাকায়। তিনজনই তিরিশের ঘরে আউট হয়েছেন। এর মধ্যে আশরাফুল ও ক্যাপ্টেন শাকিব রীতিমতো অন্যায় করেছেন। ৩১ বলে ৩৯ করা আশরাফুল বাঁহাতি স্পিনার প্রাজ্ঞন ওঝার প্রথম ওভারের তিন বলে আট (২+২+৪) রান করার পর অযথা উইকেট ছেড়ে মারতে গিয়ে স্টাম্পড হয়ে সম্ভাবনার অপমৃতু্য ঘটিয়েছেন। এরচেয়ে অনেক সংযত শাকিবও (৬৭ বলে ৩৪) অযথা ধৈর্য হারিয়ে জহির খানের অফস্টাম্পের ফুটখানেক বাইরের বলকে অহেতুক তাড়া করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন। আর চট্টগ্রামের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিক (৬১ বলে ৩০) আবার মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেও পারেননি। এদের যে কোন একজন বড় ইনিংস খেলতে পারলে স্কোরলাইন বড় হতো। ওরা না পারলেও সামর্থ্যের সবটুকু ঢেলে চেষ্টা করেছেন রিয়াদ। এই তরম্নণের লড়িয়ে উইলোবাজিতেই স্কোর দু'শ'তে গিয়ে ঠেকেছে। না হয় আরও আগেই গুঁড়িয়ে যেত। তিন পেসার রাজিব, শফিউল ও রম্নবেলকে নিয়ে শেষ তিন উইকেটে রিয়াদ অসাধারণ সংগ্রামী ব্যাটিং করেছেন। ফিটনেস সমস্যায় মাঠের বাইরে থাকা মাশরাফির চোখে দেখা কোন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের সবচেয়ে সংগ্রামী ইনিংস। টাইগার ক্যাপ্টেনের মূল্যায়ন, আমি নিজ চোখে আমাদের কোন ব্যাটসম্যানকে এত খারাপ অবস্থা ও চাপের মুখে এমন ঠা-া মাথায় বলের মেধা-গুণ বিচার করে খেলতে দেখিনি। চট্টগ্রাম টেস্টে শচীন তেন্ডুলকরের অসাধারণ সেঞ্চুরির চেয়ে আমার কাছে রিয়াদের ৯৬ রানের ইনিংসটি ভাল লেগেছে।

No comments

Powered by Blogger.