আমিন আমিন- মুখরিত তুরাগ তীর- আখেরী মোনাজাতে লাখ লাখ মুসলিস্নর সঙ্গে অংশ নিলেন রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীনেত্রী by ফিরোজ মান্না

মোসত্মাফিজুর রহমান টিটো/নূরম্নল ইসলাম লাখো কণ্ঠে 'আমিন আমিন, ছুম্মা আমিন, আলস্নাহুম্মা আমিন' ধ্বনিতে মুখরিত তুরাগ তীর। আমিন আমিন ধ্বনিতে গোটা এলাকায় এক মোহনীয় সুরের আবহ ছড়িয়ে পড়ে।
তিন দিনের অপেৰা শেষে প্রত্যাশিত এ ৰণটি আসে রবিবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে। টানা ২১ মিনিট ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ আলস্নাহর দরবারে দুই হাত তুলে পরকালের মুক্তি কামনা করেন। এ মুক্তির জন্য ভোররাত থেকে মুসলিস্নদের স্রোত তুরাগ তীর পস্নাবিত করে ছড়িয়ে পড়ে চার পাশে। আখেরী মোনাজাত শেষে এবার তুরাগ তীরের মানুষের প্রবল স্রোত ছড়িয়ে যায় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানের জনসমুদ্রে আখেরী মোনাজাতে মহান আলস্নাহর কাছে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শানত্মি, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি, ইহলৌকিক কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তি এবং দ্বীনের দাওয়াত বিশ্বের দেশে দেশে পৌঁছে দেয়ার তৌফিক কামনা করা হয়। রবিবার তবলীগ জামাতের তিন দিনব্যাপী বিশ্ব এজতেমা শেষ হয়েছে। ইহলোকের সকল পাপ, অন্যায়, অনাচার, শানত্মি, অগ্রগতি, উন্নতি ও বিশ্ববাসীর সার্বিক স্থিতিশীলতা এবং পরকালের আজাব থেকে নাজাত পাওয়ার জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। মুসলমানদের আমল, আখলাক ও ইমানের ওপর চলার তৌফিক কামনা করা হয়েছে। বিশ্বের ৮২টি দেশের ২৪ হাজার ৬৯২ প্রতিনিধিসহ লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষ প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আখেরী মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন। রবিবার বেলা ১২টা ২০ মিনিট থেকে ১২টা ৪১ মিনিট পর্যনত্ম ২১ মিনিট স্থায়ী আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ব তবলীগ মার্কাজের বুজুর্গ দিলস্নীর মাওলানা জোবায়রম্নল হাসান। মোনাজাতে মুসলিম উম্মার শানত্মি, ঐক্য ও সংহতি কামনা করে ইসলামের শত্রম্নদের কবল থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের রক্ষার জন্য আলস্নাহর দরবারে ফরিয়াদ জানানো হয়েছে। মুসলমানদের হেফাজত করার প্রার্থনা করা হয়। বিশ্ব এজতেমার আখেরী মোনাজাতে এবারে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাসত্মা, শিমুলতলী, কাপাসিয়া, কালিয়াকৈর, সদর থানার ধীরাশ্রম এলাকা, মালেকের বাড়ি, বাসন সড়ক, সালনা, ঢাকার উত্তরা, কামারপাড়া, রানাভোলা গাজীপুরের সমগ্র টঙ্গী শিল্পাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থান থেকে টেলিফোন ও মোবাইল এবং টিভি চ্যানেলের সাহায্যে মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান নর-নারী। পাশাপাশি আখেরী মোনাজাতে অংশ নেন রাষ্ট্রপতি জিলস্নুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।

রাষ্ট্রপতির মোনাজাত
রাষ্ট্রপতি জিলস্নুর রহমান বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে বয়ান মঞ্চের পাশের মঞ্চে আসেন। তিনি সেখানে দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় বুজুর্গ ব্যক্তিদের বয়ান শোনেন। এ সময় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, সাবেক মন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরম্ন, রম্নহুল আমিন হাওলাদার, জ্বালানি মন্ত্রণালয় সংক্রানত্ম সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব) সুবিদ আলী ভুইয়া, সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান এবং রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত থেকে আখেরী মোনাজাতে অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রীর মোনাজাত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার সিভিল এভিয়েশন ভবনের ওপরে নির্মিত বিশেষ মঞ্চ থেকে আখেরী মোনাজাতে শরিক হন। টঙ্গীর বাটা সু ফ্যাক্টরিতে স্থাপিত বিশেষ মঞ্চ থেকে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হিরা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য আমির হোসেন আমু, গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট আকম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকী, তহুরা আলী এমপি, শাহিন মনোয়ারা হক এমপি, আসমা জেরিন ঝুমু এমপি, সাহিদা তারেক দিপ্তী এমপি, টঙ্গী পৌরসভার মেয়র এ্যাডভোকেট আজমত উলস্নাহ খানসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবর্গ ও নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বিরোধীদলীয় নেতার মোনাজাত
বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া টঙ্গীস্থ এটলাস (হোন্ডা) কারখানায় স্থাপিত বিশেষ প্যান্ডেলে আসেন সকাল ১০টা ২০ মিনিটে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরম্নল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, বিএনপির সহ-সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা, যুগ্ম মহাসচিব আমানউলস্নাহ আমান, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এমএ মান্নান, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম ফজলুল হক মিলন, বিএনপির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রম্নল কবির খোকন, শিরীন সুলতানা, গাজীপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান এসএম শাহেন শাহ আলম, সাখাওয়াত হোসেন সবুজ, হুমায়ুন কবীর রাজুসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সেবা
টঙ্গীতে অনুষ্ঠিত এবারের বিশ্ব এজতেমায় সরকারী-বেসরকারী এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রায় ৪২টি মেডিক্যাল ক্যাম্প ও শতাধিক টিম মুসলিস্নদের অসুস্থতার নানাবিধ রোগের চিকিৎসাসেবা প্রদান করে। টঙ্গী সরকারী হাসপাতালে এজতেমায় অসুস্থ অনত্মত ৪৩৬ মুসলিস্নর চিকিৎসা করা হয়, ১১৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৫৩ রোগীকে ঢাকায় স্থানানত্মর করা হয়েছে। এছাড়াও সহস্রাধিক রোগী এজতেমা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী বিভিন্ন ফ্রি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। এসব রোগীর মধ্যে জ্বর, ডায়রিয়া, এ্যাজমা, ঠা-া ও ধুলাবালিজনিত এবং পেটে পীড়ায় আক্রানত্ম রোগীর সংখ্যাই বেশি।

নিরাপত্তা
অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও নাশকতারোধে এবারের এজতেমায় ১৮ হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল। মূল এজতেমা ময়দানে র্যাব, টঙ্গী পৌরসভা, গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন পৃথক পৃথক কন্ট্রোল রম্নম প্রতিমুহূর্তে মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এজতেমার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। এছাড়া র্যাব হেলিকপ্টার নিয়ে এজতেমা এলাকা টহল দিয়েছে। এজতেমা চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকা থেকে পকেটমার ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে ৮০ জনকে গ্রেফতার করেছে। এজতেমার মোনাজাতে অংশগ্রহণ শেষে মুসলিস্নরা যাতে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন সেজন্য ঢাকা-গাজীপুর সড়কের উত্তরা, আব্দুলস্নাপুর, টঙ্গী, স্টেশন রোড, মিলগেট, চেরাগ আলী মার্কেট, কলেজ গেট, বোর্ড বাজার, জয়দেবপুর চৌরাসত্মা মোড়সহ বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যদের শনিবার রাত থেকে মোতায়েন করা হয়।

আখেরী মোনাজাত
দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে বিশ্ব এজতেমার আখেরী মোনাজাত শুরম্ন হয়। তিনটি সত্মরে ২১ মিনিটের মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ব তবলীগ মার্কাজের বুজুর্গ দিলস্নীর মাওলানা জোবায়রম্নল হাসান। মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর সুখ-সমৃদ্ধি ও শানত্মি কামনাসহ সারা জাহানে ইসলামের আলো পেঁৗছে দেয়ার তৌফিক কামনা করা হয়। মোনাজাতের প্রথম সত্মরে মহান আলস্নাহতালার গুণরাজি গাওয়া হয়। পরবর্তী সত্মরে মানুষকে দ্বীনের পথে চলার তৌফিক কামনা এবং শেষ সত্মরে বান্দাহর গুনাহ মাফের জন্য দোয়া চাওয়া হয়। মোনাজাতে বলা হয়, হে আলস্নাহ তুমি ইসলাম ও মুসলমানদের হেফাজত কর, সকল মানুষকে হেদায়েত নসিব কর, নবীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে সুন্নতের ওপর দ্বীনের রাসত্মায় সবাইকে চলার জন্য কবুল কর। এখলাসের ওপর চলার নসিব ফরমাও, হেদায়েতের রাসত্মার ওপর চলার তৌফিক দাও, সমগ্র জাহান থেকে সকল সঙ্কট দূর করে আমাদের দ্বীনের কাজ করার যোগ্যতা দান কর, সমগ্র উম্মতকে হেদায়েতের রাসত্মায় চলার তৌফিক দান কর, সারা দুনিয়ায় দ্বীনকে জিন্দা করে দাও, আমাদের হালাল রিজিক দান কর, সবার পেরেশানি মুসিবত দূর কর, সবাইকে ইমান নসিব কর, হে আলস্নাহ তুমি মাফ করনেওয়ালা এ এজতেমাকে কবুল করে আমাদের মাফ করে দাও, আমরা যেন নবীর চলার পথে চলতে পারি সেই তৌফিক দান কর।

হেদায়েতি বয়ান
আখেরী মোনাজাতে সকাল থেকেই হেদায়েতি বয়ান করা হয়। আমাদের জীবনের সমসত্ম কামিয়াবী আলস্নাহ একমাত্র দ্বীনের মধ্যে রেখেছেন। তাই আমাদের দ্বীনের ওপর চলতে হবে এবং মেহেনত করতে হবে। দ্বীনের ওপর চলা কোন কঠিন কাজ নয়। এজন্য আমাদের জানমাল খরচ করতে হবে। একটু মেহেনত করতে হবে। তবেই আমাদের দ্বীনের ওপর চলা সহজ হবে। আমরা যারা দ্বীনের রাসত্মায় বের হয়েছি, তাদের দু'টি মেহেনত করতে হবে। একটি দিনের, অপরটি রাতের। দিনের বেলা আমাদের দাওয়াতের কাজ করতে হবে এবং রাতে আলস্নাহর নিকট কান্নাকাটি করে দোয়া করতে হবে। কারণ আলস্নাহ রাতের বেলা বান্দাদের ডেকে বলতে থাকেন_'কে আছ আমার নিকট সাহায্য চাইবে, আমি তাকে সাহায্য করব। কে আছ আমার নিকট মাফ চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।' আমাদের সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। যে আলস্নাহর নিকট সাহায্য চায়, আলস্নাহ তার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। যে আলস্নাহর নিকট চায় না আলস্নাহ তার ওপর নারাজ হয়ে যান। আমাদের সম্পর্ক মাখলুকের সঙ্গে বেশি রয়েছে। তাই আমরা আলস্নাহর নিকট চাই না, মাখলুকের নিকট চাই। আমাদের আলস্নাহর নিকট চাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। আর এতে আলস্নাহ খুশি হয়ে যান। একমাত্র আলস্নাহর দ্বীনের পথে চলা ইমানের মূল্য রয়েছে। আমরা ততক্ষণ পর্যনত্ম মেহেনত করে যাব যতক্ষণ না মানুষ আলস্নাহর মানুষে তৈরি না হয়। আমাদের মসজিদকে আবাদ করতে হবে, এজন্য আমাদের মেহেনত করতে হবে এবং মাসোহারার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। সকল মসজিদের আওতাভুক্ত পুরো এলাকার মধ্যে ঘরে ঘরে দাওয়াত পেঁৗছে দিতে হবে এবং মানুষকে মসজিদে আনতে হবে। মসজিদে বসার মধ্যে ফজিলত রয়েছে। মোত্তাকীদের ঘর হচ্ছে মসজিদ। আর যে মোত্তাকী হবে সে আলস্নাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করবে না। তার ভেতর থেকে মাখলুকের ভয় দূর করে দেবেন। যতক্ষণ পর্যনত্ম মসজিদের আমল চালু না হবে ততক্ষণ পর্যনত্ম জামাত নিয়ে আমরা মসজিদে অবস্থান করব।

গাজীপুরের মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাস
গাজীপুরের সর্বত্র রবিবার সকাল থেকে এজতেমার মোনাজাতে শরিক হওয়ার জন্য মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় সকাল থেকে দল বেঁধে হেটে মানুষ ছুটেছে মোনাজাতে শরিক হতে। অনেকে এজতেমাস্থলে পেঁৗছতে না পেরে দল বেঁধে রাসত্মায় বসে মোবাইল ফোন অথবা টিভি সেটের সামনে বসে মোনাজাতে শরিক হয়েছে। অনেকে আবার বাড়িতে টেলিভিশনের সামনে বসে মোনাজাতে শরিক হন।
এজতেমা ফেরত মুসলিস্নদের দুভের্াগ
বিশ্ব এজতেমার রবিবারের আখেরী মোনাজাত উপলক্ষে নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার কথা চিনত্মা করে শনিবার সন্ধ্যা থেকে টঙ্গীর এজতেমাগামী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জয়দেবপুর চৌরাসত্মা ও আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে এজতেমাগামী বিপুলসংখ্যক মুসলিস্ন এবং রাজধানী বা উত্তরবঙ্গগামী লোকজনকে হেটে প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। আখেরী মোনাজাত পর্যনত্ম এ নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের দুর্ভোগ বেশি পোহাতে হয়েছে। অনেকে তাদের গনত্মব্যস্থানে না গিয়ে জয়দেবপুর চৌরাসত্মা মোড় এলাকা হতে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। জয়দেবপুর চৌরাসত্মা এলাকা হতে বিমানবন্দর পর্যনত্ম কিছুসংখ্যক রিঙ্া ও হাল্কা যানবাহন চলাচল করলে সেগুলোতে প্রচ- ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। আখেরী মোনাজাতে অংশগ্রহণ শেষে এজতেমাস্থল থেকে মুসলিস্নগণ যাতে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন সেজন্য ঢাকা- গাজীপুর সড়কের উত্তরা, আব্দুলস্নাহপুর, টঙ্গী, স্টেশন রোড, মিলগেট, চেরাগ আলী মার্কেট, কলেজ গেট, বোর্ডবাজার, জয়দেবপুর চৌরাসত্মা মোড়সহ বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ, আনসার ও র্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। যানজট লাঘবের জন্য এসব সদস্য দিনভর প্রচেষ্টা চালান। কিন্তু এতকিছুর পরও আখেরী মোনাজাত শেষে ওই সড়কে বিশেষ করে জয়দেবপুর চৌরাসত্মা মোড় ও আব্দুলস্নাহপুর হতে বিমানবন্দর পর্যনত্ম দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে এজতেমা ফেরত মুসলিস্নদের যানজটে পড়ে দীর্ঘ সময় ধরে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। উত্তরাঞ্চলগামী বহু মুসলিস্ন যানবাহন না পেয়ে দীর্ঘ প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ হেটে জয়দেবপুর চৌরাসত্মা মোড়ে এসে জড়ো হন। ভিড়ের কারণে যানবাহনে চড়তে না পেরে দীর্ঘ সময় পর্যনত্ম মুসলিস্নদের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে থাকতে হয়। আবার ঢাকাগামী অনেক যাত্রী নিষেধাজ্ঞার কারণে ওই মোড়ে বিকেল পর্যনত্ম অপেক্ষা করেন।

মহিলাদের মোনাজাতে অংশগ্রহণ
মহিলারা দলে দলে মোনাজাতে অংশগ্রহণের জন্য টঙ্গী এজতেমা মাঠের পাশর্্ববর্তী এলাকায় সকাল থেকে অবস্থান নেয়। গাজীপুরের বিভিন্ন স্থান ও গ্রামাঞ্চল থেকে মহিলারা হেটে, রিক্্রা, টেম্পো ও নৌকায় চড়ে তুরাগ নদীর পার, বোর্ড বাজার, চান্দনা চৌরাসত্মা, ধীরাশ্রম, পূবাইলসহ বিভিন্ন স্থানে সমবেত হয়ে মোনাজাতে অংশগ্রহণ করে। এসব জায়গায় নারী-পুরম্নষ নির্বিশেষে বিশেষ ব্যবস্থায় মোনাজাতে অংশ নেন। টঙ্গী ও তার পাশর্্ববর্তী এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গত তিন দিন ধরে মেহমানদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। আখেরী মোনাজাতে মেহমানদের ভিড় আরও বেড়ে যায়।

গাজীপুরে অঘোষিত ছুটি
এজতেমার মোনাজাতে অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে রবিবার গাজীপুরের বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী অফিস-আদালত, শিল্প প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক বীমা, স্কুল-কলেজ মাদ্রাসাসহ সর্বত্র অঘোষিত ছুটি পালিত হয়েছে। অফিস-আদালতসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান প্রায় পুরোটাই ছিল ফাঁকা। সকাল থেকে সবাই মোনাজাতে অংশগ্রহণের জন্য এজতেমা মাঠসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়। জেলা শহরের প্রায় সকল দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দুপুর পর্যনত্ম বন্ধ ছিল।

তিন হাজার জামাত
বিশ্ব এজতেমার পর ময়দান থেকে এক চিলস্না ও তিন চিলস্না এবং দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় তিন হাজার নতুন জামাত পাঠানো হচ্ছে। রবিবার দুপুর পর্যনত্ম প্রায় আড়াই হাজার জামাতবদ্ধ হয়েছে। এর সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে এজমেতার মুরবি্বগণ আশা করছেন। বাংলাদেশে ২০/২২টি দেশের বেশ কিছু জামাত চার মাসের জন্য থেকে যাবে। এজতেমা মাঠে আরও একদিন থাকবেন বিদেশী মেহমানরা, তবে কাকরাইল থেকে নতুন জামাতগুলো নানা স্থানে পাঠানো হবে। জানা যায়, এজতেমা শুরম্নর আগেই বিদেশ থেকে বেশ কিছু জামাত বাংলাদেশে তবলীগের দাওয়াতভুক্ত রয়েছে।

মাঠের কাজে আবার স্বেচ্ছাশ্রম
দীর্ঘ তিন মাসে এজতেমা উপলক্ষে নির্মিত বিশাল প্যান্ডেলসহ যাবতীয় অবকাঠামো ভেঙ্গে ফেলতে এজতেমা মাঠে আবার স্বেচ্ছাশ্রম শুরম্ন হবে। এজন্য পাঁচ শতাধিক মুসলিস্ন ক'দিন পর থেকেই কাজ শুরম্ন করা হবে। আনত্মর্জাতিক নিবাসের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক জিম্মাদার মনোয়ার হোসেন জানান, খেদমত উপলক্ষে দু'শতাধিক পিতলের ডেকচিসহ প্রায় দশ হাজার থালাবাসন ও অন্যান্য তৈজসপত্র অচিরেই ঢাকা ভিক্টোরিয়া পার্কের গোডাউনে নিয়ে যাওয়া হবে।

মহাসড়কে অন্য রকম মেলা
আখেরী মোনাজাত উপলক্ষে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের দু'পাশে সকাল থেকেই বসে অন্য রকম মেলা। হাজার হাজার ভিক্ষুক এবং নানা রকম পণ্য নিয়ে ব্যবসায়ীরা মহাসড়কের দু'পাশ দখল করে নেয়। এছাড়া ময়দানের কাছাকাছি বিভিন্ন কারখানার খোলা জায়গায় অস্থায়ী বাজার বসে তাতে বিরাট মূল্যহ্রাস শুরম্ন হয়।

মুসলিস্নর মৃতু্য
এজতেমা মাঠে আরও তিন মুসলিস্নর মৃতু্য হয়েছে। এ নিয়ে এজতেমায় মোট ১৫ জনের মৃতু্য হয়েছে। এছাড়াও এজতেমা থেকে ফেরার পথে দু'জন নিহত ও অপর একজন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার আবুল হোসেন (৭০) শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে, নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার কুতুবপুর গ্রামের এনামুল হকের পুত্র হেলাল উদ্দিন (৫৫) শনিবার রাত সাড়ে ৯টায়, কঙ্বাজার জেলার চকরিয়া থানার ডোলাহাজরা গ্রামের আলী আহমেদ সরদারের পুত্র নাজিম উদ্দিন (৩৭) রবিবার ভোর ৬টার দিকে মারা গেছেন। এছাড়াও ভিড়ের চাপে টঙ্গীর কামারপাড়া এলাকায় অজ্ঞাত এক মুসলিস্নর মৃতু্য হয়েছে। অপরদিকে এজতেমা থেকে ফেরার পথে ময়মনসিংহগামী বলাকা ট্রেনের ছাদ থেকে পরে টঙ্গীর বনমালা এলাকায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তি নিহত ও অপর একজন আহত হয়েছে।

বিশেষ ট্রেন
বাংলাদেশ রেলওয়ে স্পেশাল ট্রেনের পাশাপাশি টঙ্গী হতে জামালপুর, ময়মনসিংহ, আখাউড়া, লাকাসাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন রেলরম্নটে ২১টি শাটল ট্রেন চালু করেছে। এছাড়াও ২২টি বিশেষ ট্রেন আখেরী মোনাজাতের দিন চলাচল করে বলে রেল সূত্রে জানা গেছে।

নৌকাডুবি
এজতেমায় আখেরী মোনাজাত শেষে নৌকাযোগে বাড়ি ফেরার পথে টঙ্গীর গরম্নর হাট লঞ্চঘাট রেলব্রিজের নিচে নৌকাটি ডুবে যায়। তিন মহিলা যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। নিহত সাঈদার (৪৫) পরিচয় মিলেছে। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানায়। বাকিদের পরিচয় সন্ধ্যা ৭টা পর্যনত্ম পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় একজন মারাত্মক আহত হন। আহত ওই ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.