মুদ্রা পাচার চক্রের হোতা শামীম চৌধুরীর জঙ্গী ও উলফা কানেকশন!- সাবেক এক মন্ত্রীপুত্র পান নিয়মিত মাসোহারা, শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে সখ্য by গাফফার খান চৌধুরী

 মুদ্রা পাচার ব্যবসা আড়াল করতে মক্কা-মদিনার মতো পবিত্র জায়গার নাম ব্যবহার করছে মুদ্রা পাচার চক্রের গডফাদার বিএনপি নেতা মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার নির্বাচিত বর্তমান চেয়ারম্যান শামীম চৌধুরী।
মক্কা-মদিনা ট্রাভেল এজেন্সির আড়ালে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে মুদ্রা পাচার ব্যবসা। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সিলেট অঞ্চলের প্রয়াত এক প্রভাবশালী মন্ত্রী পরিবারের সহায়তায় মুদ্রা পাচার চক্রের গডফাদার হয়ে ওঠেন শামীম চৌধুরী। কামিয়ে নেন বিপুল অর্থকড়ি। নিয়মিত মাসোহারা পাচ্ছেন প্রয়াত ওই মন্ত্রীর এক বিতর্কিত ছেলে। উলফা ও জঙ্গী ছাড়াও পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গেও এই গডফাদারের যোগাযোগ রয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, শামীম চৌধুরী '৯০ দশকে মুদ্রা পাচারের ব্যবসায় জড়িত হন। কিন্তু বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এক প্রভাবশালী মন্ত্রী পরিবারের আশীর্বাদে মুদ্রা পাচার ব্যবসার পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে যায় তার কাছে। এদিকে চেয়ারম্যানের গাড়িচালক রফিক ৩ বছর ধরে এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে কাজ করছে। অনত্মত ২০টি চালান বিমানবন্দরে পেঁৗছে দিয়েছে সে। এর মধ্যে ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে ৩টি চালানে ৯ কোটি টাকা মূল্যমানের মুদ্রা ধরা পড়ে। এ ব্যাপারে দায়েরকৃত মামলা ২টির তদনত্ম দেয়া হয়েছে গোয়েন্দাদের। মুদ্রা পাচার ব্যবসা আড়াল করতে শামীম চৌধুরী মক্কা-মদিনা ট্রাভেল এজেন্সি গড়ে তোলেন। ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগানোর জন্য পবিত্র ভূমি মক্কা-মদিনার নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। এটি গডফাদার শামীম চৌধুরীর বিশেষ কৌশল। কোন সময় অভিযোগ উঠলে বলা হতো, মক্কা-মদিনার মতো পবিত্র জায়গার নামে তারা ভুয়া ব্যবসা করেন না। সিলেট অঞ্চলের প্রয়াত এক প্রভাবশালী মন্ত্রী পরিবারের সঙ্গে শামীম চৌধুরীর সরাসরি যোগাযোগ ছিল। এই পরিবারের আশীর্বাদেই মুদ্রা পাচার ব্যবসা শামীম চৌধুরীর দখলে চলে যায়। ওই সময় জিয়া বিমানবন্দর দিয়ে মুদ্রার শত শত চালান দেশের বাইরে চলে গেছে। তার চালান আটক করার সাহস করত না কেউ। এ জন্য শামীম চৌধুরীর কাছ থেকে বহু অর্থনৈতিক সুবিধা পেয়েছে ওই মন্ত্রী পরিবারটি। মন্ত্রীর বিতর্কিত এক ছেলে নিয়মিত মাসোহারা পেতেন। মন্ত্রী পরিবারের আশীর্বাদেই শামীম চৌধুরীর বড় ভাই চোরাচালান জগতের মুকুটহীন সম্রাট হাজী মুজিব ওরফে সোনা মুজিব নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের টিকেট পেয়েছিলেন। প্রয়াত মন্ত্রী নিজেই সোনা মুজিবের চারদলীয় জোটের টিকেট পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। মন্ত্রী পরিবারের প্রভাবেই জিয়া বিমানবন্দরের চোরাচালান ব্যবসা চলে যায় শামীম চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণে।
বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে শত কোটি টাকার মালিক বনে যান তিনি। এসব ব্যবসায় অর্থায়ন করত উলফা। ব্যবসা থেকে অবৈধ আয়ের একটি অংশ দেয়া হতো উলফাদের। এ ছাড়া জঙ্গীরাও নিয়মিত অর্থ সহায়তা পেত। শামীম চৌধুরীর সঙ্গে পলাতক শীর্ষ বাংলাদেশী সন্ত্রাসীদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কাছে অর্থ পেঁৗছে দেয়ার সঙ্গেও জড়িত শামীম চৌধুরী। দুবাইয়ে অবস্থানরত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গেও রয়েছে শামীম চৌধুরীর সখ্য। শামীম চৌধুরীর পাচার সিন্ডিকেটের সঙ্গে বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একটি সংস্থার উর্ধতন কয়েক কর্মকর্তার যোগাযোগ রয়েছে। ইতোপূর্বে মুদ্রা পাচারের চালান আটকের ঘটনায় দায়েরকৃত দু'টি মামলার তদনত্মভার পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ডিসেম্বর জিয়া আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা থেকে ২ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রাসহ ওসমান গ্রেফতার হয়। পরে ওসমান আটককৃত বৈদেশিক মুদ্রাগুলো শামীম চৌধুরীর বলে জানায়। ওসমানের তথ্যমতে শামীম চৌধুরীর মুদ্রা পাচারকারী সিন্ডিকেটের সন্ধান পায় গোয়েন্দারা। তারই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর শানত্মিনগরের বাড়ি থেকে কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা শামীম চৌধুরীকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দারা। সেই সঙ্গে তার গাড়িচালক রফিকও গ্রেফতার হয়। এর আগে উত্তরা থেকে কমলগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মহসীন মধু গ্রেফতার হয়। শামীম চৌধুরী ও তার গাড়িচালক রফিকের ৪ দিনের রিমান্ডের আজ শেষ দিন। ওসমানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মুদ্রা পাচারের পৃথক ৩টি মামলার তদনত্মে বেশ কয়েকজন রাঘব বোয়ালের নাম প্রকাশ পেয়েছে। কয়েক উর্ধতন কর্মকর্তার বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উল্টর জোনের ডিসি মাইনুল হাসান জনকণ্ঠকে জানান।

No comments

Powered by Blogger.