বিএনপির কাউন্সিল নিয়ে অশানত্ম বি'বাড়িয়া, গুলি বোমা- দুই গ্রম্নপ মুখোমুখি তুমুল সংঘর্ষ অস্ত্র মজুদ

রিয়াজউদ্দিন জামি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বিস্ফোরণোম্মুখ অবস্থা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বিএনপির দু'গ্রম্নপ মুখোমুখি। এক গ্রম্নপ আরেক গ্রম্নপকে দায়ী করছে। চলছে হামলা পাল্টা হামলা। মিছিল পাল্টা মিছিল হয়েছে। একই জায়গায় দু'প কাউন্সিল ডেকেছে।
শনিবার রাতে প্রচ- সংঘর্ষও হয়। নিজেদের আধিপত্য জানান দিতে তারা মরিয়া। সবকিছু মিলিয়ে তীব্র উত্তেজনাকর অবস্থা বিরাজ করছে। ২৬ জানুয়ারি জেলা বিএনপির কাউন্সিল ডাকা হয়েছে। কাউন্সিলে আহবায়কদের মতামত নেয়া হয়নি-এমন অভিযোগ উঠেছে। এর মাঝেই শনিবার রাতে মুহুর্মুহু গুলি ও বোমায় কেঁপে উঠে শহর। মূলত জেলা বিএনপির কাউন্সিলকে ঘিরে সৃষ্ট উত্তেজনায় অশানত্ম হয়ে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট হারম্নন আল রশিদের মৌলভীপাড়ার বাস ভবনে শনিবার সন্ধ্যায় বোমা হামলা চালানো হয়। এতে তার বাসভবন অভ্যনত্মরে রতি নিজস্ব প্রাইভেট কারটি তিগ্রসত্ম হয়। তার নিজস্ব চেম্বারে ভাংচুর হয়। হারম্নন আল রশিদের সমর্থকরা ঘটনার জন্য প্রতিপ বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রম্নহুল আল মাহাবুব মানিকের অনুসারীদের দায়ী করেছেন। ঐ ঘটনার পর প্রতিবাদ জানিয়ে রাতে জেলা বিএনপির নেতা হাফিজুর রহমান মোলস্না কচির নেতৃত্বে প্রতিবাদ বিােভ বের হয়। তারা বিএনপির বিদ্রোহী গ্রম্নপের শক্তিশালী ঘাঁটি পরিচিত শহরের কান্দিপাড়ায় যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন পুলিশ তাদের বাধা দেয়। বিােভকারীরা টি.এ রোড ব্রিজ এলাকায় সমাবেশ শুরম্ন করে। প্রত্যদর্শীরা জানায়, সমাবেশ থেকে কান্দিপাড়ার দিকে ল্য করে ইট পাটকেল ছোড়া হয়। জবাব আসে বিদ্রোহীদের কাছ থেকেও। এ সময় দু'পরে তুমুল সংঘর্ষ হয়। একে অপরের ওপর হামলা পাল্টা হামলা চালায়। মুহুমর্ুহু গুলি ও বোমায় রাতের নীরবতা ভেদ করে। উদ্বেগ আতঙ্কের শহরে পরিণত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া। লোকজন দিগ্বিদিক পালাতে থাকে। প্রত্যদর্শীরা জানায়, অনত্মত ৮/১০ টি হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। থেমে থেমে বোমার প্রচ- শব্দে গোটা শহরই কেঁপে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১২ রাউন্ড শর্ট গানের গুলি ছোড়ে। হারম্নন আল রশিদের সমর্থকরা জানায়, বিদ্রোহী গ্রম্নপের নেতা সাবেক যুব দল সম্পাদক আসাদুজ্জামান শাহীনের নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে। রাতে পুলিশের এ এস আই মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্বে কান্দিপাড়ার ঘরে ঘরে তলস্নাশি চালায়। তবে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। রাতে হারম্নন আল রশিদের চাচাত ভাই শাহীন আল রশিদ বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলার ধারা ১৪৩/৪৪৭/৪৪৮/৩৮০/৪২৭/১১ একই সঙ্গে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩ ধারা। সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানায়, এটি বিএনপির উপদলীয় কোন্দল, রাজনৈতিক মামলা। বিদ্রোহীদের পওে একটি মামলা দেয়া হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যনত্ম মামলাটি রেকর্ড করার খবর পাওয়া যায়নি। ভাংচুর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে মামলাটি দেয়া হয়। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ হামিদুল ইসলাম জানান, ২৬ জানুয়ারি সম্মেলনকে ঘিরে নজিরবিহীন নিরাপত্তা নেয়া হবে। আমরা কাউকে বিশৃঙ্খলতা করতে দেব না। পুলিশ জানায়, একটি মামলায় যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান শাহীন, আবু শামীম, মোঃ আরিফ ও আরমানসহ ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। কাউন্সিলের প্রাক্কালে গুলি আর বোমার শহরে পরিণত হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। দু'গ্রম্নপই অস্ত্রের মজুদ গড়ে তুলেছে। সদর থানা পুলিশ শনিবার রাত থেকে রবিবার দুপুর পর্যনত্ম টি.এ রোড, ব্রিজ এলাকা ও সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী হারম্নন আল রশিদের মৌলভীপাড়ার বাসভবন থেকে ২৭টি হাতবোমা উদ্ধার করেছে। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে একে অপরের ওপর হামলার জন্য এগুলো নিপে করে। বেশ কিছু বিস্ফোরিত হয়। বাকিগুলো অবিস্ফোরিত থেকে যায়। অন্যদিকে সাবেক প্রতিমন্ত্রীর বাসভবনে হামলার প্রতিবাদে রবিবার সকালে শহরে প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। প্রতিবাদ মিছিলটি শহরের উত্তরাংশেই সীমাবদ্ধ ছিল। পৌর আধুনিক সুপার মার্কেট প্রাঙ্গণে এক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাবেক পিপি শফিকুল ইসলাম, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, জহিরম্নল হক খোকন প্রমুখ। অপরদিকে বিকেলে যুবদল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের হয় কান্দিপাড়া থেকে। মিছিলটি শহরের উত্তরাংশে আসার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। একেক করে মিছিলকারীরা শুধু সে এলাকাতেই অবস্থান করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির সর্বশেষ কর্মকা- সম্বন্ধে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ হারম্নন আল রশিদ জনকণ্ঠকে বলেন, মানিক গ্রম্নপ এ সব করাচ্ছে। সে সামনে নেই। সে তো রাজনীতি থেকে আউট, ব্যাকগ্রাউন্ডে থেকে সব করছে। এ ব্যাপারে সাবেক ছাত্রদল নেতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রম্নহুল আল মাহবুব মানিক বলেন, আমি ব্যবসা বাণিজ্যে ইনভলব, রাজনীতি হলো তার ব্যবসা। সারা জীবন তিনি কর দেননি, ওয়ান ইলেভেনের পর তিনি কর দিয়ে সর্বোচ্চ করদাতা হয়েছেন। সে শুঁটকি চোরাচালানের পার্টনার। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সন্ত্রাসীদের লালন পালন করছেন। তার কারণেই এখন এ অবস্থা। তিনি আরও বলেন, আমি ভাল ব্যবসা করি, তাই হিংসাপ্রসূত হয়ে তিনি আমার নামে কুরম্নচিপূর্ণ কথা বলছেন। এদিকে বিদ্রোহী গ্রম্নপের নেতা সাবেক যুবদল সম্পাদক আসাদুজ্জামান শাহীন বলেন, আহবায়ক কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ ও পরামর্শ না করেই হারম্নন আল রশিদ কাউন্সিল করার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, আমরা ২৬ তারিখ সকালে জেলা বিএনপির কাউন্সিল ডেকেছি। সকালে পৌরসভার ওসত্মাদ আলাউদ্দিন খাঁ মিলনায়তনে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। তাতে সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আব্দস সাত্তার ভূইয়া বিশেষ অতিথি থাকবেন। অবশ্য হারম্নন আল রশিদ সমর্থিত গ্রম্নপ আগেই সেখানে কাউন্সিল ডেকেছে। বিএনপির দু'গ্রম্নপের পাল্টাপাল্টি কাউন্সিল ডাকায় শহরে বেশ উত্তেজনা বিরাজ করছে। সদর থানা পুলিশ বলেছে, উত্তেজনা তো আছেই। আমরা নিরাপত্তার সব কিছুই করব। জেলার পুলিশ সুপার মোখলেছুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, এক জায়গায় দু'গ্রম্নপ কাউন্সিল ডেকে থাকলে আমরা বিষয়টি দেখব।
একই জায়গায় উপজেলা বিএনপির কর্মিসভা আহ্বান
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মোঃ আব্দুল কুদ্দুস এক প্রেস রিলিসে জানান, আগামী ২৬ জানুয়ারি সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন মিলনায়তনে সদর উপজেলা বিএনপিকে তৃণমূল পর্যায়ে সুসংগঠিত করার জন্য বিএনপি এক কর্মিসভার আয়োজন করা হয়েছে। তাতে জেলা বিএনপির যুগ্মআহবায়ক সাবেক মন্ত্রী উকিল আব্দুস সাত্তার ভূইয়া প্রধান অতিথি থাকবেন। বিশেষ অতিথি থাকবেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক হাজী সৈয়দ এমরানুর রেজা, সাবেক পিপি হামিদুর রহমান, জেলা এিএনপির যুগ্ম আহবায়ক সাবেক এমপি আছিয়া রহমান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর বিএনপি টেঙ্কের মুক্ত মঞ্চে বিএনপির কর্মিসভা আহ্বান করেছে। এ জন্য সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে সভা করার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এদিকে জেলা বিএনপির হারম্নন আল রশিদের সমর্থকরা পৌরসভার আলাউদ্দিন খাঁ মিলনায়তনে জেলা বিএনপির কাউন্সিল ডেকেছে। এ নিয়ে তুমুল উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.