পিঙ্কির সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল_ দাবি বখাটে মুরাদের- প্রশ্নই ওঠে না পিঙ্কির পরিবার

ফজলে নোমানী হাত কেটে যাওয়ায় পিংকি স্থানীয় একটি ফার্মেসিতে ব্যান্ড এইড (ব্যান্ডেজ) লাগানোর জন্য এলে তাকে ডাক দেয় মুরাদ। কর্ণপাত না করে চলে যেতে চাইলে পেছন থেকে পিংকির ওড়না টান দিয়ে ধরে মুরাদ।
ওড়না গলায় জড়িয়ে গেলে সে থমকে দাঁড়াতে বাধ্য হয়। এক পর্যায়ে তাকে থাপ্পড় মারে মুরাদ। শ্যামলী আইডিয়াল স্কুল ও কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্রী পিংকির আত্মহত্যার জন্য দায়ী বলে অভিযুক্ত পাশের বাড়ির ড্রাইভার এবং এলাকার বখাটে যুবক মুরাদ নিজেই রবিবার সাংবাদিকদের কাছে এই তথ্য দিয়েছে। আগের রাতে খুলনা থেকে গ্রেফতারের পর মুরাদকে রবিবার আদালতে নেয়ার পূর্বে সাংবাদিকদের মুখোমুখি করানো হয়েছিল। মুরাদের সেই অপমান, লজ্জা আর বুকে জমাটবাঁধা ৰোভের বহির্প্রকাশ ঘটেছিল পিংকির আত্মহননের মতো বিয়োগানত্মক অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে। ছোটবেলায় মা মারা যাবার পর থেকে চাচাদের পরিবারে দাদির আদরে বড় হওয়া পিংকি ছিল বড়ই অভিমানী।
আদালত মুরাদের বিরম্নদ্ধে তিনদিনের পুলিশী রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। এই মামলায় মুরাদকে সহযোগিতার দায়ে পিংকিদের ফ্যাটের দারোয়ান এবং মুরাদের তথাকথিত চাচা কালামকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে রাখা হয়েছে। ১৯ জানুয়ারি দুপুরে শেরেবাংলানগর থানাধীন শ্যামলী ২নং রোডের বাসা নং ১৫২/ক/সি (চাকলাদার ভিলা) ৫তলা বাসার দোতলাতে পিংকিকে সিলিংফ্যানের সঙ্গে ঝুলনত্ম অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে মুরাদ অপমান করাতেই সে সকলের মানসম্মানের কথা চিনত্মা করে আত্মহত্যা করেছে এবং এ জন্য তার পরিবারের কেউ দায়ী নয় বলে একটি চিরকুটও লিখে রেখে যায়। মামলার তদনত্ম কর্মকর্তা শেরেবাংলানগর থানার দারোগা শাহেদ জানান, রিমান্ডে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে আসার পর এর মধ্যে অন্য কোন বিষয় থাকলেও তা পরিষ্কার হবে। আসামি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পিংকির সঙ্গে তার প্রেম থাকার দাবি করেছে। মিডিয়ার সামনেও সে এই দাবি করেছিল। মুরাদ তার ডান হাতে খোদাই করে অাঁকা লাভ সাইন থাকার দৃশ্যও সাংবাদিকদের দেখায়। কিন্তুু, তার শরীরে অসংখ্য কাটা দাগের পাশাপাশি বুকে 'এস' নামের একটি অৰরও ছুরি দিয়ে খোদাই করে অাঁকা চিহ্ন পাওয়া গেছে। ভালবাসা হলে পিংকির নাম বা তার আদ্যৰর থাকার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের সে কোন উত্তর দেয়নি।
সরেজমিনে শ্যামলী ২ নম্বর রোডের যে স্থানে পিংকিদের বাসা তার আশপাশ এলাকার বখাটেদের একটি আড্ডাস্থল বলেই মনে হয়েছে। প্রায়ই প্রকাশ্যে মাদক সেবনের পাশাপাশি মেয়েদের টিজ করার ঘটনা সেখানে অহরহই ঘটছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। পুরো এলাকাতেই মুরাদ একজন বখাটে যুবক এবং মাদকাসক্ত হিসেবে পরিচিত। তার পরও তাকে ড্রাইভার হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় পিংকিদের পাশের হোল্ডিং ১৫২ ক/এ, আব্দুল আউয়ালের বাসায় কথা হয় তার ছেলে সাখাওয়াতের সঙ্গে। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, তার বোন নাসরিনের ড্রাইভার এই মুরাদ। কিন্তু, নাসরিনের গাড়িও এ বাড়ির গ্যারেজেই থাকে। তবে, মাত্র দু'মাস আগে সে নতুন গাড়ি কেনায় মুরাদকে ড্রাইভার রেখেছে। পুরো এলাকাতেই নেশাখোর বলে পরিচিত এমন লোককে বোনের ড্রাইভার নিয়োগ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইদানীং সে এমন শুরম্ন করেছে। গত এক সপ্তাহ ঠিকভাবে ডিউটিও করেনি। মোবাইল করলে সে ফোনও ধরত না। তবে, আগে তার এমন বদনামের কথা শোনেননি বলেও দাবি করেন সাখাওয়াত।
অভিমানী পিংকি এখন চিরনিদ্রায় শায়িত তাদের গ্রামের বাড়ি কুমিলস্নার তিতাস থানার পারিবারিক কবরস্থানে। অথচ, কিছুদিন আগেই সে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিনামূল্যে বই বিতরণকালে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে বই গ্রহণ করেছিল। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে বই গ্রহণ করার সে ছবি পরদিন বিভিন্ন পত্রিকাতেও ছাপা হয়েছিল। নবম শ্রেণীর নতুন বই সে নিল ঠিকই, কিন্তু সেই বই হাতে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি তার। ২০ জানুয়ারি স্কুল খোলার দিনই তাকে শেষ বিদায় জানানো হয়। শ্যামলী আইডিয়াল স্কুল ও কলেজের সহপাঠীরা পিংকির এই অভিমানে আত্মহননের সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে নগরীতে তিনদিন বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের পাশাপাশি মানববন্ধনও করেছে। সহপাঠীরা কিছুতেই ভুলতে পারছে না তাকে। নতুন কাসে সামনের সারিতে তার জন্য একটি আসন ছেড়ে দিয়েই তাকে সবার মাঝে এখনও বাঁচিয়ে রেখেছে তারা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তার দফতর থেকে এই মামলার তদারকি করা হচ্ছে বলে পিংকির পরিবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের পরিচালক শামসুল আরেফিন নিজেও নাকি পিংকিদের বাসায় এসে খোঁজখবর করে গেছেন।

No comments

Powered by Blogger.