দেখে মনে হয় রিক্ত নিঃস্ব কিন্তু ভেতরে ভেতরে সেজে ওঠার পালা- শিল্পকলায় চীনাদের বসনত্ম উৎসব

সৈয়দ সোহরাব এখন শীতকাল। তবে তার পেছনে দাঁড়িয়ে বসনত্মকাল। আগমনী বার্তা জানিয়ে কড়া নাড়ছে প্রকৃতিতে। রাসত্মায় চলাচলের সময় ডানে বাঁয়ে মুখ ঘুরিয়ে তাকালেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রকৃতিতে যে পরিবর্তন আসছে তা দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে।
গাছের ডালপালায় দেখা যাচ্ছে নরম কচি সবুজ পাতা। তার মসৃণ গায়ে ঝলমলে রোদ পড়ে যেন পিছলে যাচ্ছে। ফলবতী গাছগুলোতে মুকুল আসতে শুরম্ন করেছে। আবার গাছের নিচের দিকে তাকালে দেখা যায় ঠিক এর উল্টো দৃশ্য। ঝরে পড়তে শুরম্ন করেছে শুকনো পাতা। আর কিছু দিন পর দেখা যাবে হাজার-হাজার, অযুত অযুত পাতা পড়ে আছে গাছের নিচে। ওপরে জীবনের উলস্নাস আর নিচে বেদনার ছায়া। প্রকৃতি বাইরে রম্নক্ষ্মতা কিন্তু ভেতরে চলছে নতুন রূপ রস গন্ধে সেজে ওঠার প্রস্তুতি প্রকৃতিতে পরিবর্তন আসলেও ক্যালেন্ডারের হিসাবে এখনও আসেনি বসনত্মকাল। ১৩ ফেব্রম্নয়ারি থেকে শুরম্ন হয় আমাদের ঋতুরাজ বসনত্ম। কিন্তু নগরীতে বসনত্মকে বরণ করে নেয়ার উৎসব শুরম্ন হয়ে গেছে। তবে বাঙালী সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী কোন সংগঠন এ উৎসবের আয়োজন করেনি। করেছে চীনা দূতাবাস। দু'দিনব্যাপী এ উৎসবের সমাপনী ছিল শনিবার। উৎসবে দু'দেশের শিল্পীরাই তাদের মনমুগ্ধকর পরিবেশনা দিয়ে মাতিয়ে রাখে দর্শক-শ্রোতাদের।
উৎসব প্রসঙ্গে চীনা দূতাবাসের কালচারাল এ্যাটাশে সুর্বনা বলেন, বাংলাদেশীরা যেখানে বছরে ছ'টি ঋতু পালন করে, সেখানে আমরা পালন করি চারটি ঋতু। সেগুলো- সামার (গ্রীষ্মকাল), অটাম (শরতকাল), উইন্টার (শীতকাল) ও স্প্রিং (বসনত্মকাল)। আমাদের বসনত্মকালটাও অনেকটা বাংলাদেশের মতোই। এ দেশের মতোই রঙ ও বর্ণের আলোকচ্ছটায় একে আমরা বরণ করে নিই। বসনত্মকালে এ দেশের প্রকৃতিতে যে পরিবর্তন আসে, তা যতটা স্পষ্ট, আমাদের প্রকৃতিতেও পরিবর্তন আসে তবে তা ততটা স্পষ্ট নয়। কারণ অনেক স্থানে তখনও তুষারপাত ঘটে, কোথাও কোথাও আবহাওয়া বাংলাদেশের মতো হলেও ঠা-াটা একটু বেশিই থাকে। সেসব স্থানে পরিবর্তনটা কিছু চোখে পড়ে। আমাদের দেশে মাসব্যাপী নানা আয়োজনে আমরা বসনত্মকে বরণ করে নিই। এতে যেমন থাকে একক, দলীয় ও ফোক গান, তেমনি থাকে নাচ ও নানা ঐতিহ্যিক পরিবেশনা। উজ্জ্বল রঙের ও নানা ঢঙের পোশাকে সজ্জিত হয়ে আমরা শামিল হই এ উৎসবে। এতে আমাদের ঐতিহ্যবাহী নানা বাদ্যযন্ত্রও ব্যবহার করা হয়। আপনাদের (বাংলাদেশের) একতারা, দোতারার মতো আমাদের কিছু বাদ্যযন্ত্র আছে, যা বাঁশ দিয়ে তৈরি_সেগুলো, এছাড়া ফেনো, ওয়েলডিং ইত্যাদি নামের আরও কিছু বাদ্যযন্ত্র আছে, সেগুলোও ব্যবহার করা হয়। মাসব্যাপী এ উৎসবটাকে আমরা বেশ এনজয় করি। তারই ধারাবাহিকতায় এবার বাংলাদেশের শিল্পকলা একাডেমীর ওপেন পেস্নসে এ উৎসবের আয়োজন করেছি। এতে উদ্বোধনী দিন (শুক্রবার) দু'দেশেরই শিল্পীরা পারফর্ম করে। সমাপনী দিনে (শনিবার) শুধু বাংলাদেশের শিল্পীদের পরিবেশনা রেখেছি।
চীনাদের এই বসনত্ম উৎসবে এ দিন বাংলাদেশের শিল্পীরা যেমন নিজেদের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছে, তেমনি চীনা পোশাকে সেজে পরিবেশন করেছে তাদের নৃত্য। উৎসবে বাউল ও আধুনিক গান ছাড়াও কুংফু-কারাতের নানা কসরত এবং জ্বলনত্ম আগুনসমেত লাঠি খেলা দেখিয়েছে বাংলার তরম্নণেরা। নাচের সংগঠন নৃত্যরঙের শিল্পীরা আজি এ বসনত্মে..., লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প..., পায়ে নাচে সোনার নূপুর...প্রভৃতি গানের সঙ্গে পরিবেশন করে নৃত্য। এটিএন বাংলার তিন চাকার তারকা ওমর আলী তাঁর দরাজ গলায় গেয়ে শোনান-বন্ধু তুমি আমার ভাদ্র মাসের পূর্ণিমার চাঁদ..., মনের দুঃখ মনে রইলরে...গান দু'টি। বাউল মিলন সাধু পরিবেশন করেন-ছন্দে রসে মধুমাখা মন নিলয়ে হরি, আহ মরি মরি...এবং চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে...গান দু'টি। অন্য শিল্পীরা গেয়ে শোনান-মানুষ ধর মানুষ ভজ..., গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান...প্রভৃতি গান। এভাবে নানা পরিবেশনার মাধ্যমে এ অনুষ্ঠান চলে বেশ রাত পর্যনত্ম।

No comments

Powered by Blogger.