অন্য রকম বিয়ের উসব

সাজ সাজ রব। মাঠে বড় শামিয়ানা টানানো। মাইকে বাজছিল গান। গেটে বরকে আটকে টাকা আদায় করছিল কনেপক্ষ। ছিল খানাপিনার আয়োজন। এভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে তেজগাঁও সরকারি শিশু পরিবারের দুই সদস্য নাজমুন্নাহার ও কামরুন্নাহারের বিয়ে হয়েছে একই মঞ্চে।
বিয়ে উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার তেজগাঁও সরকারি শিশু পরিবারের চেহারাই পাল্টে যায়। অতিথি হিসেবে ছিলেন ঢাকা-১১ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ আসাদুজ্জামান খান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব রণজিৎ কুমার বিশ্বাস, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নাছিমা বেগম, ঢাকা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক হারুন অর রশিদসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
নাজমুন্নাহার ও কামরুন্নাহার সম্পর্কে আপন বোন। অন্যদিকে বর সেলিম আহমেদ ও ইকবাল হোসেন সম্পর্কে খালাতো ভাই। নাজমুন্নাহারদের বড় বোনও ওই শিশু পরিবারের সদস্য ছিলেন। বড় বোনের বিয়েও সেলিমদের পরিবারে হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এতিম, অসহায় শিশুরা সরকারি শিশু পরিবারে আশ্রয় পায়। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত তারা শিশু পরিবারে থাকা, খাওয়া, পড়াশোনা এবং বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পায়। তেজগাঁও শিশু পরিবারের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, সরকারি সহযোগিতায় এ পর্যন্ত ৪০২ জন মেয়ের বিয়ে হয়েছে।
গতকাল দুপুরে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার সময় বর ও কনেপক্ষের মধ্যে কোনো বিষয়ে মতবিরোধ দেখা যায়নি। ছিল না যৌতুকের বালাই। তবে দুই দম্পতির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সমাজসেবা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি রঙিন টেলিভিশন, সেলাই মেশিন, কম্বল, টাকাসহ বিভিন্ন উপহার দিয়েছেন। বিয়ের আয়োজন করে ঢাকা জেলা সমাজসেবা কার্যালয় ও তেজগাঁও শিশু পরিবার।
অনুষ্ঠানের পুরোটা সময় ব্যস্ত ছিলেন শিশু পরিবারের উপতত্ত্বাবধায়ক ঝর্ণা জাহিন। এই পরিবারের শিশুরা ঝর্ণা জাহিনকে মা বলে ডাকে। ফলে বিয়ের অনুষ্ঠানে তাঁর ব্যস্ততা ছিল বেশি।
এক ফাঁকে ঝর্ণা জাহিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওরা আমাকে মা ডাকে। তাই সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। এ পর্যন্ত পরিবারের যে মেয়েদের বিয়ে হয়েছে, তাদের প্রায় ৯০ শতাংশই ভালো আছে।’
বিয়ের অনুষ্ঠানে নাজমুন্নাহার ও কামরুন্নাহারের মা নিলুফা বেগমও উপস্থিত ছিলেন। বর সেলিম আহমেদ ও ইকবাল হোসেন কর্মসূত্রে দেশের বাইরে থাকেন। যৌতুক ছাড়াই শিশু পরিবারের মেয়েদের বিয়ে প্রসঙ্গে দুই বর দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, ‘কাজ করি, যৌতুক নেব কেন?’

No comments

Powered by Blogger.