স্বল্প সময়ে দেখা রাঙ্গামাটি আর খাগড়াছড়ি

সপ্তাহের প্রথম দিন রবি থেকে শেষ দিন বৃহস্পতির দুপুর পর্যন্ত কাপ্তাই প্রকৌশল একাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষেও যেন পাহাড় দেখার সাধ পূরণ হল না। তাই সাধ পূরণের জন্য ভ্রমণপ্রিয়াসু বন্ধু হিরণের সাথে পূর্ব পরিকল্পনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে কাপ্তাই থেকে বড়ইছড়ি হয়ে রাঙ্গামাটিতে সন্ধ্যা ৭.৩০ পৌঁছলাম। আর বন্ধুটি সকাল ৯ টায় ঢাকা থেকে বাসে চড়ে রাত্র ৯টায় রাঙ্গামাটিতে পৌঁছল।
ইতোপূর্বে সপ্তাহব্যাপী ট্রেনিংয়ের সময় কাপ্তাই-এ বন বিভাগের ১টি বিট আর নৌপথে বিলাইছড়ি ভ্রমণ ছাড়াও বৌদ্ধদের ধর্মীয় স্থান চিৎ-মরং ও নেভাল বেইসের সৌন্দর্য প্রশিক্ষণে আসা সহকর্মীদের সঙ্গে উপভোগ করেছি।
শুক্রবার খুব ভোরে প্রাতঃভ্রমণে বের হয়ে ৬ কিঃমিঃ হেঁটে রিজার্ভ বাজারে এসে সকাল ৭.৩০ থেকে ২টা পর্যন্ত নৌকা ভাড়া করলাম। জল পথে রাঙ্গামাটি শহরের আশপাশে পর্যটন স্পটগুলো রাজবাড়ী, রাজবন বিহার, ঝুলন্ত সেতু, পেদা টিং টিং, চাং পাই ইত্যাদি দেখে শুভলং এর উদ্দেশ্য সর খালের মধ্যে নৌকা প্রবেশকালে কাপ্তাই লেকের মূল সৌন্দর্য চোখের সামনে ধীরে ধীরে উম্মোচিত হতে শুরু করল। দুই ধারে পাথরের পাহাড়গুলো যে কারও নজর না কেড়ে ছাড়বে না। যাওয়ার পথে শুভলং ঝরনা আর শুভলং বাজার দেখে দুপুর ২.৩০ টার রাঙ্গামাটি শহরে এসে পৌঁছালাম। সে দিন বৃষ্টি ছিল বলে শুভলং ঝরনায় পানি প্রাণভরে উপভোগ করলাম।
মধ্যাহ্ন ভোজ, অতঃপর বিকেল ৩.৩০ টার বাসে চড়ে রাঙ্গামাটি ত্যাগ, উদ্দেশ্য খাগড়াছড়ি। বাসে যেতে যেতে প্রচুর বৃষ্টির সাক্ষাত পেলাম। উঁচু পাহাড় থেকে গডিয়ে পড়া পানিকে এক একটি ছোট ঝরনা মনে হচ্ছিল। বন, মাঠ, পাহাড়ে উপত্যকা পানিতে সায়লব আর উপজাতি ছেলে মেয়ে সেই পানিতে মাছ ধরা নিয়ে মহা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যায় খাগড়াছড়িতে এসে পৌঁছলাম, কিন্তু বৃষ্টি আমাদের পিছু ছাড়ল না। সারা রাত বৃষ্টি।
সকালে উঠে সেই বৃষ্টি, কোন কমতি নেই। সৌভাগ্য ক্রমে একটি গাড়ি ম্যানেজ করা গেল, অলুটিলায় যাওয়ার জন্য। সকাল ১১ টায় আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে দেখা গেল কোন জন মানবের চিহ্ন নেই। দুই মিনিট আগেও অঝরে বৃষ্টি ঝরছিল, এখন একেবারেই নেই। সামান্য দূরে পুলিশ বাহিনীর দু’জন সদস্যকে রেইন কোট পরে একটি বেঞ্চে জড়সড় হয়ে বসা অবস্থায় পেলাম। উনাদের কাছে গিয়ে শুনলাম সকাল থেকে কেউই এমনকি গেইট-এ টিকেট বিক্রেতা পর্যন্ত এই পর্যটন কেন্দ্রে আসেনি। তাই বিনা টিকেটেই মূল ফটকের মধ্য প্রবেশ করলাম। সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ের গায়ে লেগে থাকা মেঘগুলো আমাদের ভিজিয়ে দিয়ে স্বাগত জানানো, শুধু তাই না মেঘের ঘনত্ব এত বেশি ছিল যে ১০ মিটার দূরে কোন কিছুই আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম না। শুধু আমরা দুই বন্ধু মিলে সমস্ত এলাকা ঘুরে ফিরে আলুটিন গুহার প্রবেশ ও বাহির পথসহ প্রকৃতি এই অপরূপ রূপরাশি উপভোগ করে ধীরে ধীরে এলাকা ছাড়লাম। পথে মধ্যাহ্ন ভোজ সেরে ২টায় গাড়িতে ঢাকার উদ্দেশ্যে খাগড়াছড়ি ত্যাগ করলাম। পথে রামগড় ছুয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পেলাম উঁচু উঁচু পাহাড়, গভীর উপত্যকা, ঘন বন, অনিদ্য সুন্দর চা বাগান আর সারি সারি রাবার বাগান। ভ্রমণের পরম সুখ নিয়ে রাত ৯টায় ঢাকা এসে পৌঁছিলাম।
মোঃ সাইফুল আলম (ফিরোজ)

No comments

Powered by Blogger.