বিশ্ব ইজতেমা আজ শুরু

কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে আজ শুক্রবার বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা।
কনকনে শীত-কুয়াশা উপেক্ষা করে বাস, ট্রাক, ট্রেন, ব্যক্তিগত গাড়ি, ট্যাক্সি, স্কুটার, নৌকায় ও হেঁটে মুুসল্লিরা দলে দলে ইজতেমা ময়দানে যোগ দিচ্ছেন। এরই মধ্যে মুসল্লিদের ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে ইজতেমার ময়দান। আজ বেলা দেড়টার দিকে অনুষ্ঠিত হবে জুমার নামাজ। আগামী রোববার দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ইজতেমার প্রথম দফা। মাঝে চার দিন বিরতি দিয়ে ১৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় দফা। ইজতেমা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গতকাল পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন জানান, সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। টঙ্গীর ১৬০ একরের সুবিশাল ময়দানের পুরোটাই চটের শামিয়ানা টানিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে। এ বছর জেলাওয়ারি মুুসল্লিদের অবস্থানের জন্য ইজতেমা চত্বরকে প্রথম দফায় ৪০টি এবং দ্বিতীয় দফায় ৩৮টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে।
মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে পর্যাপ্ত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপনসহ টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে শয্যা বাড়ানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে রোগী স্থানান্তরে থাকবে সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স এবং অগ্নিনির্বাপণে থাকছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। গাজীপুরে পুলিশ সুপার আবদুল বাতেন জানান, ইজতেমাস্থলে বিদেশি ও সাধারণ মুসল্লিদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ, র‌্যাব, আনসারসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রায় ১০ হাজার সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। মাঠের চারদিকে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, ইজতেমা মাঠের পশ্চিম পাশের মাঝামাঝি এলাকায় তুরাগতীরে নামাজ পড়ার মিম্বর ও বয়ান মঞ্চ এবং পশ্চিম-উত্তর কোনায় দোয়া মঞ্চ, মাঠে তাশকিলের কামরা, মোকাব্বির মঞ্চ, জুড়নেওয়ালে জামাত কক্ষ নির্মাণসহ বিশেষ ছাতা মাইক স্থাপনের কাজ শেষ হয়ে গেছে। গোসলের হাউস, টয়লেট স্থাপন ও সংস্কারের কাজও শেষ হয়ে গেছে। গাজীপুরের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তফা জানান, বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত ও সরবরাহের সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে দুই হাজার ৮৩৪টি। মুসল্লিদের অজু-গোসল ও পান করার জন্য প্রতিদিন ১২টি গভীর নলকূপ থেকে ৭৮ লাখ গ্যালন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে।
ইজতেমা মাঠের আশপাশে ২৪টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে।
বিদেশি মুসল্লিদের আবাসন: বিদেশি মেহমানখানার জিমঞ্চাদার জুলহাস উদ্দিন জানান, মাঠের পশ্চিম-উত্তর কোণে গড়ে তোলা হয়েছে বিদেশি মেহমানদের (মুসল্লি) আবাসনব্যবস্থা। সেখানে বিদ্যুৎ, টেলিফোন, গ্যাস-সংযোগসহ রয়েছে আধুনিক সুবিধাদি। ইজতেমায় ইংরেজ, আরব, অনারবদের জন্য আলাদা তাঁবু ও আলাদা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দুই মুসল্লির মৃত্যু: ইজতেমায় যোগ দিতে এসে গত বুধবার রাতে হূদেরাগে আক্রান্ত হয়ে দুই মুসল্লি মারা গেছেন। তাঁরা হলেন কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার পষা গ্রামের আবদুল হামিদ (৭৫) ও চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ঘরদুয়ারা গ্রামের আবদুল মোতালেব (৬০)। বাদ ফজর তাঁদের জানাজা শেষে নিজ নিজ গ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রীর পরিদর্শন: গতকাল সকালে ইজতেমাস্থল পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। বিকেলে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মু. সিফায়েতউল্লাহ ইজতেমা ময়দান পরিদর্শন করেন।

No comments

Powered by Blogger.