শীতের অনুষঙ্গ- শেখ মিলন

প্রকৃতি তার রূপ বদলায় আপন মহিমায়। ঋতুভিত্তিক এই দেশে একেক ঋতু একেক রূপ নিয়ে ধরা দেয়। প্রতিটি ঋতুর স্বকীয় বৈশিষ্ট্য মুগ্ধ করে আমাদের। ঋতুর পালা বদলের চক্রে হিমেল হাওয়া অনুভূত হচ্ছে সর্বত্র।
সকালের কুয়াশার জালে আবদ্ধ সূর্যের বিকিরণ যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবি। ঘাসের কণায় শিশির বিন্দু বারবারই যেন কবিগুরুর কবিতাটিকে মনে করিয়ে দেয়। শীতের সকালের এ দৃশ্য সত্যি আন্দোলিত করে তোলে মনকে। সকালের হিম বাতাস যেন মনে করিয়ে দেয় শীতের বার্তা। ভোরের শিশির ও কুয়াশা যেন মনকে আন্দোলিত করে তোলে। বারবারই মনে হয় কুয়াশার চাদরে হারিয়ে যেতে। আড়মোড়া দিয়ে বিছানাটা যেন ছাড়তে মন চায় না। ঋতুর পালা বদলে বইছে কনকনে হাওয়া। শীতের আমেজ বিরাজ করছে। আর এ সময়টাতে চারদিকে উৎসবের আমেজ পাওয়া যায়।
পারিবারিক, সামাজিক কিংবা ধর্মীয় যে কোন উৎসবই এ মৌসুমে এসে যেন অন্য রকম আবহ সৃষ্টি করে। এ সময়টায় উৎসবের আকাশ যেন আরও রঙিন হয়ে ওঠে। উৎসবপ্রিয় জাতি হিসেবে বাঙালী অনন্য বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। যে কোন উৎসবেই জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে একাকার হয়ে যেতে পারে। ভেদাভেদ ভুলে উৎসবকে করে তোলে আরও বেশি বর্ণময়। উৎসব উপলক্ষে নেয়া হয় নানা রকমের প্রস্তুতি। তার মধ্যে পোশাক অন্যতম। বাঙালী এখন ফ্যাশন সচেতন জাতি হিসেবে স্বীকৃত। উৎসবভিত্তিক পোশাক এখন ফ্যাশন ট্রেন্ডের পরিচিত রূপ। কোন উৎসবের সঙ্গে কোন পোশাকটি মানানসই তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করা হয়। আর হবেই বা না কেন। বিশ্ব ফ্যাশন ট্রেন্ডের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে এদেশের ফ্যাশন জগত। আর এ পথ চলায় ফ্যাশন হাউসগুলোও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ফ্যাশন হাউসগুলো সবসময় সচেষ্ট থাকে ক্রেতাদের রুচি ও চাহিদা মোতাবেক পোশাক সরবরাহ করতে। যখন যে উপলক্ষ সামনে এসে দাঁড়ায় সে উপলক্ষ নিয়েই অগ্রিম প্রস্তুতি সেরে ফেলে তারা। যে কারণে সাধারণ মানুষেরও নিত্যনতুন ফ্যাশন ট্রেন্ডের সঙ্গে পরিচিত হতে সময় লাগে না। কনকনে এ শীত মোকাবেলা করতে সবাই ছুটছে গরম পোশাকের সন্ধানে। জ্যাকেট, সোয়েটার পরেও যেন শীত নিবারণ করা যাচ্ছে না। বাড়তি আরও কিছু প্রয়োজন পড়ছে। যেমন কানটুপি, মাফলার, গ্লাভস, ক্যাপ ইত্যাদি। অর্থাৎ শুধু শরীর ঢেকে শীতের সঙ্গে পাল্লা দেয়া যাচ্ছে না। যে কারণে শীতের এসব অনুষঙ্গের দিকে ছুটছে মানুষ। শৈতপ্রবাহে নাক-কান না ঢেকে বাইরে বেরুনোই যেন দায়। ফ্যাশন ট্রেন্ডও ব্যস্ত ক্রেতাদের এ সব চাহিদা মেটাতে। পুরো শীত মৌসুমে দুয়েকবার শৈতপ্রবাহ হানা দেয়। আর এ সময়টায় বেড়ে যায় শীতের এইসব আনুষঙ্গিক বস্ত্রের। তবে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, এই সব পণ্য আগে এতটা ফ্যাশনেবল ছিল না। শুধু প্রয়োজন মেটানোর তাগিদে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে এখানেও। ফ্যাশনেবল হয়ে উঠেছে মাফলার, কানটুপি কিংবা গ্লাভস। প্রায় প্রতিটি ফ্যাশন হাউসেই দেখা মিলবে ফ্যাশনেবল টুপি, মাফলার, ক্যাপের। মজার বিষয় হচ্ছে, শীতের এই অনুষঙ্গগুলো অন্যান্য শীতের পোশাকের সঙ্গে ম্যাচ করে পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ কার্ডিগান কিংবা জ্যাকেটের সঙ্গে কালার ম্যাচ করে পাওয়া যাচ্ছে। আবার কন্ট্রাস্ট ম্যাচিংও মানিয়ে যায় বেশ। সবার প্রয়োজনের তাগিদ থাকলেও তরুণ তরুণীদের ঝোঁকটা যেন একটু বেশিই। তাদের কথা মাথায় রেখেই ফ্যাশন হাউসগুলো পসরা সাজিয়েছে শীতের অনুষঙ্গের। দামও হাতের নাগালে। মাফলার ম্যাচিং কিংবা কন্ট্রাস্ট পাওয়া যাবে ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে। কিছু নকশি কাঁথার গর্জিয়াস মাফলার পড়বে ৭৫০ থেকে ৯৫০ টাকা। মাংকি ক্যাপ বা কানটুপি পাওয়া যাবে ১০০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে। ফ্যাশনেবল ক্যাপ ১৫০ থেকে ৫৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। কিছু ব্র্যান্ডের ক্যাপ ১০৫০ থেকে ১৫০০ টাকা পড়বে। শীত নিবারণের তাগিদ থেকে শীতের অনুষঙ্গ সংগ্রহ করা হলেও মানুষ ফ্যাশনকে আগে প্রাধান্য দেয়। কারণ মানুষ এখন আগের থেকে অনেক বেশি ফ্যাশন সচেতন।
মডেল : নিশা ও সানিয়াত

No comments

Powered by Blogger.