চট্টগ্রাম মংলা বন্দর দৃষ্টি সীমায় নতুন মুসলিম লীগ by আব্দুল মান্নান

সদ্য সমাপ্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চার দিনের ভারত সফর নিয়ে দেশব্যাপী বেশ একটা বড় ধরনের শোরগোল হচ্ছে বল্লে অতু্যক্তি হবে না। বাংলাদেশের কোন একজন রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের ভারত বা অন্য কোন দেশ সফর নিয়ে এত হৈ চৈ, এত উত্তেজনা ইতোপূর্বে আর কখনও দেখা যায়নি।
সম্ভবত একমাত্র ব্যতিক্রম স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ১৯৭৪ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বঙ্গবন্ধুর পাকিস্তান গমন। ঠিক আগের দিন পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। সে সময় বেশ উপভোগ্য একটি ছবি বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে ১৯৭১ -এর অন্যতম খলনায়ক পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন আর পাকিস্তানের তৎকালীন সেনাপ্রধান একাত্তরের আর একজন ঘাতক জেনারেল টিক্কা খান বঙ্গবন্ধুকে সামরিক কায়দায় বিমানের সিঁড়ির গোড়ায় স্যালুট দিচ্ছেন। যেহেতু ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের প্রচার ও প্রসার বর্তমানের মতো এত ব্যাপক ছিল না সেহেতু তার সফর বা সেই চিত্র নিয়ে দেশব্যাপী এত হৈ চৈ হয়নি। হৈ চৈ না হওয়ার আরও একটি বড় কারণ ছিল যে, তখন দেশের রাজনীতি বর্তমানের মতো এত দ্বিধাবিভক্তও ছিল না এবং রাজনীতিতে বেগম জিয়ার মতো কট্টর ভারতবিদ্বেষী এবং পাকিস্তানপ্রেমী কারও আগমনও ঘটেনি। বর্তমানের অবস্থা ১৯৭৪-এর সম্পূর্ণ বিপরীত। এখন দেশের রাজনীতি সু্#৬৩৭৪৩;ষ্টভাবে দুই ধারায় বিভক্ত। এক ধারায় আছে ইসলাম পছন্দ দলগুলো। এরা পাকিস্তান-সৌদি আরব বলয়ের ভিতরে থেকে তাদের রাজনৈতিক আদর্শ প্রচার করে। এদের রাজনীতির প্রধান পুঁজি ভারত বিরোধিতা। এই দলসমূহের নেতৃত্বে আছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বড় বেনিফিশিয়ারি জেনারেল জিয়ার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপি। সাথে আছে একাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য সমমনা কট্টর ডান এবং একদা কট্টর বামপন্থীদের সমন্বয়ে সৃষ্ট দলসমূহ। এই শিবিরের উল্টো দিকে আছে বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সাথে আছে সমমনা উদার বামপন্থী, বাম পন্থী ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন এবং সুশিল সমাজ। দেশের রাজনীতি যখন এমন দুটি পৃথক ধারায় অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবে বিভক্ত, এটা প্রত্যাশিত যে পরস্পর পরস্পরকে রাজনৈতিক ভাবে ঘায়েল করার চেষ্টা সব সময় করবে। তবে সে চেষ্টাটা সুষ্ঠু ও সুস্থভাবে হলে রাজনীতির জন্য মঙ্গল। আর রাজনীতির জন্য যা মঙ্গল তা দেশের জন্য মঙ্গল। তবে জাতির দুর্ভাগ্য যে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তা হতে দেখা যায় না। বিশেষ করে বেগম জিয়া আর তার দল আওয়ামী লীগ যাই করে তার মধ্যে দেশ বিক্রি এবং ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করে।
চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে তো বটেই তার আগে হতেই শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে চারদিকে বেশ শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। ফিরে আসার পর চারদিকে বেশ উত্তেজনা। বেগম জিয়া ঘোষণা করেছিলেন শেখ হাসিনা যদি ভারত হতে খালি হাতে ফেরেন এবং ফেরার পথে ভারতকে তার ভাষায় সব কিছু উজাড় করে দিয়ে আসেন তাহলে বিমানবন্দরে তাঁকে কাঁটা বিছিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হবে। দিল্লীতে শেখ হাসিনা বস্তুত প েতিন দিন অবস্থান করেছেন। এর মধ্যে তিনি আজমির শরীফ জিয়ারতে গিয়েছেন এবং ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। রাষ্ট্রিয় কর্মসূচীর মধ্যে ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং -এর সাথে দ্বি পাকি বিষয়সমূহ নিয়ে আলোচনা। আলোচনা শেষে দু'দেশের মধ্যে সন্ত্রাস দমন, নিরাপত্তা এবং বন্দী বিনিময় বিষয়ক তিনটি চুক্তি স্বার হয়। সাথে দু'টি সমঝোতা স্মারক, যার বিস্তারিত ইতোমধ্যে গণমাধমে ব্যাপক ভাবে প্রকাশিত হয়েছে এবং ইলেকট্রনিকস মিডিয়ায় আলোচিত হয়েছে। বাংলাদেশে সরকারী আর বিরোধী শিবিরে যে ক'টি বিষয় নিয়ে নিরন্তর আলোচনা চলছে তার মধ্যে আছে বাংলাদেশে ভারতের ২৫০ মেগাওয়াট বিদু্যত রফতানি এবং বাংলাদেশ ভারতকে তার দুই সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করতে দেয়া, বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে ভারতীয় পণ্য বহন এবং ভারত কর্তৃক বাংলাদেশের জন্য এক বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা প্রদান, যা বাংলাদেশ তার অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করবে। স্মারকে আরও বেশ কিছু দ্বি পাকি বিষয়ের উল্লেখ আছে। এই সব নিয়ে ইতোমধ্যে অনেক আলোচনা হয়েছে এবং আরও হবে।
বর্তমান লেখার উদ্দেশ্য এই সব সম্পাদিত চুক্তি অথবা স্বারিত স্মারকের চুলচেড়া বিশ্লেষণ বা ব্যাখ্যা করা নয় অথবা কোনটি যৌক্তিক আর কোনটি দেশের স্বার্থবিরোধী তা আলোচনা করাও নয়। এই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী গত ১৬ জানয়ারি দেশের মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের সামনে তার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন, যা ইতোমধ্যে দেশের সকল মিডিয়া বিস্তারিত প্রকাশ করেছে। একই ভাবে বিরোধী নেত্রী বেগম জিয়া পর দিন, রবিবার তার গুলশানস্থ দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করে দেশবাসীকে জানিয়েছেন যে, শেখ হাসিনা দিল্লী সফরে গিয়ে বাংলাদেশকে সের দরে বিক্রি করে এসেছেন এবং তার মতে দেশের মানুষ শেখ হাসিনার করা সকল চুক্তি আর স্মারক প্রত্যাখ্যান করেছেন। অবশ্য তিনি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তেরে বলেছেন, চুক্তিতে ঠিক কী আছে তা তিনি সঠিক ভাবে জাননে না। আবার অন্য দিকে তিনি এও বলেছেন, আসলে শেখ হাসিনা দিল্লীতে গিয়ে কী সব গোপন চুক্তি করে এসেছেন। এর তিনদিন আগে বাংলাদেশের এক সাবেক জেনারেল ঘোষণা করেছেন তিনি তিন কোটি তৌহিদী মুসলমানকে নিয়ে দিল্লীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে পশ্চিম বাংলা, আসাম আর উড়িষ্যা পুনরুদ্ধার করবেন। দেশে বহু বছর পর এবার শীতটা বেশি পড়েছে। প্রবাদ আছে শীতকালে দেশে নাকি উন্মাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বুঝতে হবে এবারের প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় সাবেক জেনারেলদের কেউ কেউ কাবু হয়ে পড়েছেন। যে ক'টি বিষয় নিয়ে বেগম জিয়া আর তার সভা-পারিষদের অসম্ভব আপত্তি তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভারতকে চট্টগ্রাম আর মংলা বন্দর ব্যবহার করতে দেয়ার বিষয়টি। সাথে আছে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে ভারতের পণ্যবাহী ট্রাক, রেল আর জলযান চলাচলের অনুমতি। অর্থাৎ ট্রানজিট। বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে নদীপথেও সীমিত আকারে রেলপথে ট্রানজিট বহু বছর ধরেই আছে।
বেগম জিয়া ছাড়া তার সভা-পারিষদদের মধ্যে যারা নিয়মিত এই ক'টি বিষয়ে মিডিয়াতে উত্তাপ ছড়াচ্ছেন তাদের মধ্যে তিনজনের নাম উল্লেখযোগ্য। এরা হচ্ছেন স্বনামধন্য সাকাচৌ, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু চৌধুরী এবং আবদুল্লাহ আল নোমান। তাদের বাড়তি দাবী তারা চট্টগ্রামের সন্তান। প্রথম দুজনের চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক। সাকাচৌ এর কিউ সি শিপিং পূর্বে অনেকবার গণমাধ্যমে আলোচিত হয়েছে। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী একাধিক বিদেশী শিপিং কোম্পানির এদেশীয় এজেন্ট। আবদুল্লাহ আল নোমান বন্দরের শ্রমিক রাজনীতির সাথে দীর্ঘদিন সম্পৃক্ত। শেষের দু'জন সজ্জন ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত। এই তিন জনই তাদের আলোচনা শুরু করেন এই বলে যেহেতু তারা চট্টগ্রামের সন্তান সেহেতু চট্টগ্রাম বা চট্টগ্রাম বন্দরের স্বার্থ নিয়ে কথা বলার অধিকার তাদের অনেকটা জন্মগত। আর সাকাচৌ তো একধাপ এগিয়ে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ভারতের সাথে চট্টগ্রাম, বা বন্ধর অথবা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক কোন চুক্তি, সমঝোতা অথবা সিদ্ধান্ত হলে বলেন, আওয়ামী লীগ চট্টগ্রামকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। এই তিন জনই বিভিন্ন সময় চট্টগ্রামের মন্ত্রী ছিলেন। বিগত চার দলীয় সরকারের সময় চট্টগ্রাম হতে ডজন খানেক মন্ত্রী অথবা মন্ত্রী পদমর্যাদার ব্যক্তি ছিলেন। সব সরকারের সময়ই ছিলেন চট্টগ্রামের সব ডাকসাইটে মন্ত্রী। কিন্তু বাস্তবতাটা হচ্ছে চট্টগ্রাম হচ্ছে বাংলাদেশের সব চাইতে অবহেলিত অঞ্চল। সকলে যদি নিজ নিজ অবস্থানে থেকে চট্টগ্রামের উন্নতির জন্য সচেষ্ট থাকতেন তাহলে গত তিন দশকে চট্টগ্রাম হতে পারত এই অঞ্চলের দ্বিতীয় সিঙ্গাপুর। ১৯৬০ সাল পর্যন্ত সিঙ্গাপুর ছিল জেলেদের একটি নোংরা শহর আর জলদসু্যদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। সিঙ্গাপুর আজ সারা বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তি। অথচ সিঙ্গাপুরের কোন প্রাকৃতিক সম্পদ নেই। পানীয় জলটাও তারা মালেয়েশিয়া হতে আমদানি করে। সিঙ্গাপুরের এই অভাবনীয় সাফল্যটা এসেছে তার ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধার কারণে যা চট্টগ্রামের বেলায় একশ' ভাগ প্রযোজ্য।
সব বিষয়ে কথা না বলে চট্টগ্রামের উন্নয়ন তথা চট্টগ্রাম বন্ধরকে ভারতকে ব্যবহারের অনুমোতি দেয়ার প্রসঙ্গ নিয়ে দু'কথা বলতে চাই। উল্লেখিত তিনজনের মতো আমিও চট্টগ্রামের আদি বাসিন্দা। কয়েক শ' বছর ধরে আমার পূর্বপুরুষরা এই শহরেই বসবাস করে এসেছেন। অন্য সকলের মতো আমিও দেশকে ভালবাসি। দেশের সার্বিক উন্নয়নে বিশ্বাস করি এবং এও বিশ্বাস করি চট্টগ্রাম হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি। চট্টগ্রাম বন্দরর প্রতিষ্ঠা হাজার বছর আগে। আরব বণিক হতে শুরু করে, পতুিগজ, ওলন্দাজ, ইংরাজ, সকল দেশের বণিকই এই বন্দর ব্যবহার করেছে। পতর্ুগালের মহাকাব্য লুসিয়াদাস (ীলডধটঢল্র) -এ বন্দরের অসাধারণ বর্ণনা আছে। ইংরেজরা এই বন্দরকে ব্যবহার করেছে ব্যাপক ভাবে এবং এর পশ্চাৎভূমি ছিল আসাম, ত্রিপুরা, সিলেটসহ সমগ্র পূর্ব বঙ্গ। এই চট্টগ্রামেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আসাম বেঙ্গল রেলের সদর দফতর। পূর্ব বঙ্গে রেলপথের বিস্তার এই বন্দরকে ঘিরে। কিন্তু দীর্ঘদিনের অবহেলা আর এক শ্রেণীর অসাধু শ্রমিক সংগঠনের হাতে জিম্মি হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে ওঠে এই অঞ্চলের সর্বাধিক ব্যয়বহুল এবং এক অচল বন্দর। এই বন্দর হারিয়েছে তার নাব্য, যার ফলে এখন আর বড় বড় জাহাজ এখানে নোঙ্গর ফেলতে পারে না। বেশির ভাগ কন্টেনার জাহাজ সিঙ্গাপুর বন্দরে আমাদের কন্টেনার নামায় অথবা সেখান হতে তোলে। সেখান হতে ফিডার জাহাজ দিয়ে তা চট্টগ্রামে আনা হয়। খোলা পণ্যবাহী বড় জাহাজগুলো কুতুবদিয়ার অদূরে নোঙ্গর ফেলে। সেখান হতে লাইটারেজ জাহাজ দিয়ে তা চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হয়। সাকা চৌর কিউসি সিপিং এ কাজগুলো করার একটি বড় প্রতিষ্ঠান।
চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ভারতকে ব্যবহার করার সুযোগ দিয়ে শেখ হাসিনা চট্টগ্রামতো বটেই সারা দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নতুন গতি সঞ্চার করার জন্য এক উজ্জ্বল সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছেন।
শেখ হাসিনার সকল কর্মকাণ্ডের যারা একচোখা সমালোচক তাদের সমালোচনার বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল তিনি এই বিষয়ে চুক্তি করার পূর্বে লাভ তির হিসাব করা উচিত ছিল। একদল বলে, ভারত বন্দর ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশ শুধু এ বাবদ কিছু ভাড়া বা চার্জ পাবে। আর সাকাচৌরা বলছেন এখন এই বন্দর দিয়ে বৈধভাবে অস্ত্র আসবে। এমন দু'একজনও আছেন যারা বিশ্বাস করেন এর ফলে ভারতের সন্ত্রাসীরা চট্টগ্রাম বন্দর দখল করে নেবে। ইউরোপের দুটি বন্দরের কথা এখানে স্মরণ যোগ্য। একটি বেলজিয়ামের এন্টি উয়ারপ, অন্যটি হল্যান্ডের রটারডাম। এই দুইটি বন্দর মিলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় সত্তর ভাগ সমুদ্র বাণিজ্য বহন করে। নিজ দেশের বাণিজ্য ছাড়াও জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, প্রভৃতি দেশ এই দুটি বন্দর সারা বছর ব্যবহার করে। শীতের সময় আবহাওয়ার কারণে উত্তর ইউরোপের বেশির ভাগ বন্দরই অনেকটা অচল হয়ে পড়ে। এই দুটি বন্দর তাদের অবস্থানগত সুবিধা (র্ওরর্টণথধড ীমডর্টধমভ) একশ' ভাগ কাজে লাগিয়েছে, যা চট্টগ্রাম বন্দর কাজে লাগাতে পারেনি। এবার সে সুযোগ এসেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর তার কার্যমতার শুধু চলি্লশ ভাগ ব্যবহার করতে পারে। বন্দরের নতুন কন্টেনার টামির্নাল চালু হলে তার কর্মমতা আরও বৃদ্ধি পাবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারত এবং শেখ হাসিনার প্রস্তাব অনুযায়ী নেপাল ও ভুটান যদি এই দুটি বন্দর ব্যবহারের সুবিধা পায় তাহলে বন্দর দুটি তার পূর্ণ মতা ব্যবহারের সুযোগ পাবে। বর্তমানে মংলা বন্দর শুধু মাত্র দশ ভাগের মতো তার কর্মমতা ব্যবহার করতে পারে। প্রথমে যে সুবিধাটি বাংলাদেশ পাবে তা হচ্ছে আরও অধিক সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান। বন্দরে জাহাজ আসলে তাদের অনেক ধরনের সেবার প্রয়োজন হয়। মেরামত, রসদ, পানি, পরিবহন, গুদামজাতকরণ, বীমা, ব্যাংকিং, চিকিৎসা, টেলিযোগাযোগ প্রভৃতি সেবা জাহাজের নাবিক, জাহাজ ব্যবহারকারী সকলেরই প্রয়োজন হয়। একই সাথে প্রয়োজন পড়বে বাংলাদেশের সড়ক ও রেলপথের যুগোপযোগী উন্নয়ন ও আধুনিককরণ। এ খাতে ভারত ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং প্রত্যাশা তার পঁয়ত্রিশ ভাগ অনুদানে রূপান্তরিত হবে। বেগম জিয়া এবং তার অনুসারীদের এতেও আপত্তি। এমন একটি ঋণের প্রস্তাব পাকিস্তান, সৌদি আরব, বিশ্বব্যাংক অথবা আইএমএফ দিলে তারা তখন নিশ্চয় সে সম্পর্কে এত হৈ চৈ করতেন না। আসলে পুরো বিষয়টা অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ হতে না দেখে সম্পূর্ণ অপরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ হতে দেখা হয়েছে। আগামীতে কখনও যদি ভারত চট্টগ্রাম বা মংলা বন্দর ব্যবহার করা শুরু করে এবং সেখানে সাকাচৌ গংদের যদি ব্যবসা করার সুযোগ হয় তাহলে তারা সেই ব্যবসা করবেন না _এমন একটা ঘোষণা তো তারা দিতেই পারেন।
ভারতের সাথে চুক্তি হওয়ার অর্থ এই নয় যে কাল থেকেই তারা চট্টগ্রাম বা মংলা বন্দর ব্যবহার শুরু করবে! এর জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরি করতে হবে। সে নীতিমালার যাতে বাংলাদেশের স্বার্থ একশ' ভাগ সংরতি হয় সেদিকে সরকার নিশ্চয় দৃষ্টি রাখবে। ২০০৬ সালে বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ভারত সফর করেছিলেন। তখনও বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে ভারতের পণ্য পরিবহনের চুক্তি হয়েছিল। তাদের সৌভাগ্য যে তখন আওয়ামী লীগ দেশ বিক্রির জিকির তুলে নি। আমার বন্ধু আলম বলে আসলে বিএনপির রাজনৈতিক ঝুলিতে ভারত বিরোধিতা ছাড়া মূলধনতো আর কিছু নেই। তাও যদি চলে যায় তাহলে তারা তো সম্পূর্ণ দেওলিয়া। আসলে দেওলিয়া হতে সম্ভবত বিএনপির আর বেশি দেরি নেই। একটি নতুন মুসলিম লীগ এখন মোটামুটি দৃষ্টি সীমার মধ্যে বলে বন্ধু আলম মনে করে। বিরোধিতার জন্য বিরোধিতার রাজনীতি ছেড়ে বিএনপি আর তার দোসরদের উচিত জনগণের মঙ্গলের কথা চিন্তা করা। নচেৎ মুসলিম লীগ হতে বেশি সময় লাগবে না।
লেখক শিাবিদ।

No comments

Powered by Blogger.