আখেরী মোনাজাত

আজ তবলীগ জামাতের বিশ্ব এজতেমায় আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় বৃহত্তম পবিত্র মহামিলন। তুরাগ নদীর তীরে টঙ্গীতে বাংলাদেশের সকল বয়সী ধর্মপ্রাণ মুসলমানের সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রায় ষাট লাখ মুসলমান সমবেত কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন আলস্নাহু আলস্নাহু শব্দ।
সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর জীবনাদর্শকে সম্মান জানিয়ে একই সঙ্গে বসে বিশ্বের সর্বত্র শানত্মি ও সৌহার্দ্যের সুবাতাস নির্মল রাখার জন্য তিন দিনব্যাপী এই এজতেমার আয়োজন করা হয়। আলস্নাহপাকের অশেষ রহমতে টঙ্গীর তুরাগ নদীতীরসহ আশপাশের সর্বত্র মুসলিস্নদের সমাবেশে, সৃষ্টিকর্তা ও তার রাসূলের মহিমা প্রকাশ, সৌভ্রাতৃত্বের জন্য, অভিন্ন ঐশী বিশ্বাসে অটল ধর্ম অনুরাগীদের ইহলোক ও পরলোকে মঙ্গলময় জীবন কাটানোর উদ্দেশ্যে নামাজ, জিকির, মোনাজাতে বাংলাদেশে তিন দিনে পূর্ণ হয়ে উঠেছিল পবিত্রতার আবেশে। মুখর ও সরব হয়ে উঠেছিল তুরাগতীর। বাংলাদেশ সরকার, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, আনসার বাহিনী, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, সংবাদকমর্ী এবং সর্বসত্মরের মানুষ মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন প্রথম থেকেই। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক পৃথক বাণীতে মুসলিম উম্মাহর সহাবস্থান এবং স্রষ্টার প্রতি নিবেদিতপ্রাণ মানুষের কল্যাণ কামনা করেছেন। হিংসা-বিদ্বেষ-বিভ্রানত্মি সংঘর্ষমুক্ত জীবন সকলেরই কাম্য- এবারের বিশ্ব এজতেমায় লাখো মুসলমানের মোনাজাত আলস্নাহ যেন কবুল করেন।
বিশ্ব এজতেমা মূলত তিন দিনের জন্য নির্ধারিত থাকলেও সপ্তাহজুড়ে মুসলিস্নদের সমাগম ঘটতে থাকে। এবার বাংলাদেশসহ সত্তরটি দেশের লাখ লাখ মুসলমান বিশ্ব এজতেমায় অংশ নেন। বিদেশী তবলীগ ও জামাতের মুসলিস্নদের থাকা-খাওয়ার জন্য আলাদাভাবে বিশেষ প্যান্ডেলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এজতেমা ময়দানে বয়ান করেছেন দেশী-বিদেশী আলেম-ওলামা। এবার প্রায় সাড়ে আঠারো হাজার নিরাপত্তাকমর্ী সতর্কতার সঙ্গে মুসলিস্নদের নিরাপত্তার জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন। ষাটটি কোজ সার্কিট ক্যামেরাসহ আঠারোটি পয়েন্টে র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা মেটাল ডিক্টেটর দিয়ে দেহ তলস্নাশি করে মুসলিস্নদের মাঠে প্রবেশ করিয়েছেন। এছাড়া ন'টি পর্যবেণ টাওয়ারে অবস্থান করে র্যাব সদস্যরা পুরো এজতেমাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিশ্ব এজতেমার তিন দিনব্যাপী কর্মসূচীতে ছিল তালিম, ছয় উছুলের হকিকত, আম বয়ান, তাশকিল, দরসে কোরান, দরসে হাদিস, নতুন জামাত তৈরি করা, চিলস্নার প্রস্তুতি ও যৌতুকবিহীন বিয়ের ব্যবস্থা। তবলীগ শব্দের বাংলা হচ্ছে প্রচার করা বা ইসলামের দাওয়াত পেঁৗছে দেয়া। তবলীগের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আত্মশুদ্ধির দ্বারা সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে ইহকাল ও পরকালে সাফল্য লাভ করা। আর তবলীগ শব্দের অর্থ হচ্ছে সমবেত হওয়া বা সভা ও সম্মেলন। ইসলাম ধর্মের সঠিক প্রসারের জন্য বলিষ্ঠ পদপে গ্রহণ করার ল্যেই এজতেমা বোঝানো হয়। ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য রাসূলে করিম (সা.)-এর নির্দেশ পালনার্থেই প্রতিবছর তুরাগের কূল ঘেঁষে অবস্থিত টঙ্গীতে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে তবলীগ জামাতের উদ্যোগে মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ, বিশ্ব এজতেমা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও যানবাহনের সমস্যাকে উপো করে দূর-দূরানত্ম থেকে সমবেত হন ধর্মানুরাগী মুসলমানরা। সমর্পিত করেন নিজেদের আলস্নাহ পাকের সানি্নধ্য লাভের জন্য।
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে বিশ্ব পরিস্থিতি নাজুক এখন। বাংলাদেশ অবশ্য নানাবিধ জটিল অবস্থা থেকে ক্রমশ মুক্তির পথ খুঁজে পাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ধমর্ীয় বিধান পালনে সংবিধানের শর্তের েেত্র আনত্মরিক। বিশ্ব এজতেমার এই আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে ইসলাম নির্দেশিত শানত্মিপূর্ণ সহাবস্থান ও পারস্পরিক সম্প্রীতিবোধ জাগ্রত হোক, আলস্নাহপাকের কাছে এটি সবারই প্রার্থনা।

No comments

Powered by Blogger.