'জাতীয় স্বার্থ ৰুণ্ন হবার কোন বিষয় ভারতের সঙ্গে চুক্তিতে নেই'- মিয়ানমারের সঙ্গে সঙ্কট শীঘ্রই কেটে যাবে পররাষ্ট্র সচিব

 সার্ক কনভেনশন ও বিগত সরকারগুলোর আলোচনার ধারাবাহিকতায় ভারতের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ ও অপরাধী দমনে তিনটি চুক্তি করছে বাংলাদেশ। শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রসচিব মোহাম্মদ মিজারম্নল কায়েস এ তথ্য জানান।
চুক্তিতে বাংলাদেশের স্বার্থ ণ্ন্ন হয়েছে বিরোধী দলের এই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং স্বার্থ বিঘি্নত হওয়ার কোন বিষয় চুক্তিতে নেই। এছাড়া সমুদ্রসীমা নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্কট কাটার ইঙ্গিত দেন পররাষ্ট্রসচিব। তিনি জানান, ন্যায়ভিত্তিক ও সমদূরত্বের ভিত্তিতে সমুদ্রসীমা নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ মীমাংসায় রাজি বাংলাদেশ। এর ফলে গভীর সমুদ্রে ১৭৬ কিলোমিটার এলাকায় অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে বাংলাদেশ। ফলে বঙ্গোপসাগরে খনিজ অনুসন্ধানে ১৪ বস্নক হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা থাকছে না।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পররাষ্ট্রসচিব কমোডর (অব) খুরশীদ আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহির্প্রচার অনুবিভাগের মহাপরিচালক সাইদা তাসনিম মুনা এবং দণি এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইমরান উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্রসচিব বলেন, দণি এশিয়ার দেশসমূহ সার্ক, বিমসটেক ইত্যাদি ফোরামের আওতায় সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ দমন করে সামগ্রিকভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার বাসত্মবায়ন ছাড়াও দ্বিপাকি এসব সমস্যা মোকাবেলায় সহযোগিতার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই ধারবাহিকতায় বাংলাদেশ ও ভারত দ্বিপাকি েেত্র ২০০৬ সাল থেকে নিরাপত্তা বিষয়ক চুক্তিগুলো সম্পাদনের কাজ শুরম্ন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদ্য সমাপ্ত ভারত সফরকালে নিরাপত্তা সংশিস্নষ্ট তিনটি চুক্তি স্বারিত হয়। চুক্তিগুলোর উভয় দেশের সরকারের অনুসমর্থনের পর কার্যকর হবে। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং স্বার্থ বিঘি্নত হওয়ার কোন বিষয় চুক্তিতে নেই।
তিনি জানান, এগ্রিমেন্ট অন মিউচুয়াল লিগ্যাল এসিস্টেন্স অন ক্রিমিনাল নিয়ে ২০০৮ সালে শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে সদস্যভুক্ত দেশগুলো একটি কনভেনশন স্বার করে। কনভেনশনের শর্ত অনুযায়ী সদস্যভুক্ত সকল দেশের অনুসমর্থন না হওয়ায় কনভেনশনটি কার্যকর হবে না বলে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাকি চুক্তি করা হয়েছে। এর আওতায় দুই দেশ একে অপরকে ফৌজদারি অপরাধ বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেবে। আদালত বা অপর কোন সংশিষ্ট বিভাগের সহায়তা চাওয়া হলে পারস্পরিক আইনগত সহযোগিতা দেয়া হবে। চুক্তি কার্যকর হওয়ার আগে সংঘটিত কোন ফৌজদারি অপরাধ বিষয়ক অনুরোধের েেত্রও পারস্পরিক আইনী সহযোগিতা প্রদান কার্যকর হবে। উভয় দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয় কর্তৃপ হিসাবে চুক্তির আওতায় পারস্পরিক সহযোগিতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
দ্বিতীয় চুক্তি এগ্রিমেন্ট অন কমবেটিং ইন্টারন্যাশনাল টেররিজম চুক্তির খসড়া অনুমোদনের ব্যাপারে ২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার কাজ করছে। চুক্তির আওতায় উভয় দেশ অভ্যনত্মরীণ আইন ও বিধি সাপে,ে আনত্মর্জাতিক সন্ত্রাস প্রতিরোধ, মাদকদ্রব্য এবং রাসায়নিক পদার্থসহ সাইকোট্রোপিক দ্রব্যসমূহের অবৈধ পাচার রোধে সহায়তা প্রদান করবে। উভয় দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে দেশ দুটির আইনশৃঙ্খলা রাকারী এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত একটি সমন্বয় কমিটির মাধ্যমে সহায়তার কার্যক্রম পরিচালিত হবে। তবে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার স্বার্থ বিঘি্নত হয় অথবা দেশের প্রচলিত আইন বা বিধি পরিপন্থী কোন কার্যক্রম এই চুক্তির আওতায় করা যাবে না। গত ডিসেম্বরে একই বিষয়ে বিমসটেকের আওতায় সদস্যদেশগুলো ইতোমধ্যে একটি কনভেনশন স্বার করেছে।
তৃতীয় চুক্তি এগ্রিমেন্ট অন ট্রান্সফার অব সেন্টেন্সড প্রিজনস চুক্তির খসড়া নিয়ে ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আলোচনা চলছে। ফৌজদারি অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা যাতে নিজ দেশে সাজা ভোগ করতে পারে সেই সুযোগ সৃষ্টির ল্যে চুক্তিটি করা হয়েছে। ছয় মাসের বেশি সাজা ভোগ করা বাকি আছে অথবা যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত আসামি যার বিরম্নদ্ধে অন্য কোন মামলার বিচার বা তদনত্ম বাকি নেই এমন আসামিরা এই চুক্তির আওতায় বিবেচিত হবেন। তবে যারা কোন সেনা আইনে সাজাপ্রাপ্ত অথবা মৃতু্যদ-প্রাপ্ত অথবা যাদের বিরম্নদ্ধে অন্য কোন মামলা বিচারাধীন আছে তাদের েেত্র এই চুক্তির বিধান প্রযোজ্য হবে না। সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের নিজ দেশে স্থানানত্মরের বিষয়ে ভারত একই ধরনের চুক্তি ব্রিটেন, মিসর, মরিশাস, কানাডা, সৌদি আরব ও ফ্রান্সসহ ১৬ দেশের সঙ্গে স্বার করেছে। পররাষ্ট্রসচিব জানান, ছয় মাসের অগ্রিম লিখিত নোটিসের মাধ্যমে চুক্তিগুলো বাতিল করা যাবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের মধ্য দিয়ে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও সহযোগিতার নতুন ত্রে তৈরি হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ট্রানজিট নিয়ে বিদ্যমান বিতর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৮০ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণে স্থল ও জলপথ ব্যবহারের কথা বলা হয়। সে সময় চুক্তিতে ভারতের তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী প্রণব মুখার্জী এবং বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী চৌধুরী তানভির আহমেদ সিদ্দিকী স্বার করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সরকারের আমলে চুক্তিটি নবায়ন করা হয়। ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে ট্রানজিট কার্যকর হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে। তিনটি দেশের সঙ্গে ট্রানজিট একসঙ্গে কার্যকর হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রসচিব জানান, ন্যায়ভিত্তিক ও সমদূরত্বের ভিত্তিতে সমুদ্রসীমার বিরোধ মীমাংসায় রাজি হয়েছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের চট্টগ্রামে দুদেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে দুদেশের পঞ্চম দফা বৈঠকে উভয় দেশ এ ব্যাপারে ঐকমত্যে পেঁৗছায়। মিয়ানমার এতদিন সমদূরত্বের ভিত্তিতে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের দাবি করলেও বাংলাদেশ ন্যায়ভিত্তিক মীমাংসার দাবি জানিয়ে আসছিল। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পররাষ্ট্রসচিব এবং মন্ত্রণালয়ের আনকস অনুবিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকতর্া কমোডর (অব) খুরশীদ আলম বলেন, সমদূরত্বের ভিত্তিতে মীমাংসা হলে মহীসোপানে ২শ' কিলোমিটার এলাকায় মিয়ানমারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হতো। ফলে গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের ১৪টি খনিজ বস্নক মিয়ানমারের নিয়ন্ত্রণে চলে যেত। দুই দেশের ঐকমত্যের ফলে মহীসোপানে মাত্র ২৪ কিলোমিটার এলাকায় মিয়ানমারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। অবশিষ্ট ১৭৬ কিলোমিটার এলাকায় উভয় দেশের দাবি প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি দাবি করেন, এই ঐকমত্যের ফলে বাংলাদেশ অনেক লাভবান হয়েছে। তিনি জানান, জাতিসংঘ আরবিট্রেশন কাউন্সিলের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধ মীমাংসা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সচিব জানান, তিসত্মাসহ সব অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ চুক্তি করতে চায়। তিনি বলেন, আমরা তিসত্মার পানি বণ্টনে একটি দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি করতে চাই। কিন্তু সেজন্য হাইড্রোলজিক্যাল সার্ভে ডাটা প্রয়োজন, যা সময়সাপে। এ কারণে আপাতত এডহক ভিত্তিতে চুক্তি করতে চাই। যা দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির একটি ভিত্তি তৈরি করে দেবে। শুধু তিসত্মা নয় অভিন্ন সকল নদীর পানি বণ্টন নিয়েও চুক্তি করতে চায় বাংলাদেশ।

No comments

Powered by Blogger.