আক্রোশ নয় সমঝোতাই বিশ্বায়নের চাবি- অজয় দাশগুপ্ত

বাংলাদেশের যে কোন অর্জন ও সম্মানে প্রবাসীরা সব সময়ই গর্ব অনুভব করে। দেশ ও জাতির কল্যাণে তাদের ভূমিকা এখন তর্কাতীত। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর এবং অর্জিত ফলাফলে আমাদের প্রতিক্রিয়া তাই হেলাফেলার কিছু নয়।
দূর থেকে দেখা এই সফর ও সফরের সফলতায় বিমুগ্ধ হবার পাশাপাশি কিছু প্রশ্ন, কিছু জিজ্ঞাসা, অতীত অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যত বিষয়ক ভাবনাও মাথা তুলতে চাইছে। যাকে যৌক্তিক বলাটাই ন্যায়সঙ্গত। ভারতের মতো বিশাল প্রতিবেশীর সাথে সংঘাতে লাভ নেই জেনেও রাজনীতি তাতে ইন্ধন দিতে ব্যস্ত। সে কবেকার কথা! তখন আমরা অন্য দেশ অন্য নামে পরিচিত। সেই রাষ্ট্র ধর্মভিত্তিক অথচ অবাস্তবোচিত। তার কারণে কত দুভের্াগ, নিজের নামটি পর্যন্ত ঠিকভাবে উচ্চারণ করা যেত না। সে অপমান, সে বেড়াজাল ভাঙ্গার জন্য জন্মেছিলেন বঙ্গবন্ধুর মতো শত বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, ঘটেছিল মুক্তিযুদ্ধের মতো শতাব্দী-শ্রেষ্ঠ ঘটনা, কিন্তু ভাগ্য আমাদের পারদের মতো ওঠে আর নামে। সাড়ে তিন বছর পর আবার ফিরে এলো পাকিস্তানের পুরনো ভূত। নানা অজুহাতে ফিরে এলো ভারতবিদ্বেষ। আশ্চর্যের ব্যাপার এই ভোটের মতো জনরায়েও প্রভাব ফেলেছিল তা। দেশের রাজনীতি বা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ও লেখার উদ্দেশ্য নয। সিডনি তথা অস্ট্রেলিয়ার বাস্তবতায় সৎ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের অভিজ্ঞতাতে দেখছি এ জাতীয় অজ্ঞতা পৃথিবীর কোথাও নেই। নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্কই ধরা যাক না কেন। ক্রিকেট, রাগবি, ফুটবল সর্বত্র কড়া প্রতিদ্বন্দি্বতা। টান টান উত্তেজনা। রাগবি খেলাটি এই দু' দেশে প্রবল জনপ্রিয়। অস্ট্রেলিয়াকে মোকাবেলা করার পূর্বণে নিউজিল্যান্ডের দশাসই খেলোয়াড়রা যে শারীরিক কসরত দেখায় তার চলতি নাম হাকা। দুই উরুতে থাপ্পড় মেরে শরীর ঝুঁকিয়ে শূন্যে লম্ফ দিয়ে চিত্তে ভয় ধরানোর এই চেষ্টায় আর যাই থাক সহমর্মিতা বা বন্ধুত্ব নেই। অনেকটা প্রাচীন ভারতীয় মল্লবীর বা পাকিস্তানী কুস্তিগীরদের মতো ওয়ার্ম-আপ প্রচেষ্টা। এই আস্ফালন বা অস্ট্রেলিয়ার মাঠ পর্যায়ের দাদাগিরিও ঐ পর্যন্তই। মাঠের দুশমনী বা খেলার শত্রুতা ঘরে নিয়ে আসার রেওয়াজ নেই। আমাদের বেলায় ঠিক তার উল্টোটি ঘটে চলেছে। ময়দানে গ্যালারিতে প্যাভিলিয়নে পাক-ভারতের পতাকা দুলিয়ে মাতম বা গায়ে হাতে উল্কির ছাপ দেয়া বাঙালীর অভাব নেই। অথচ রাজনীতি বা দেশজ স্বার্থের প্রশ্নে এই আমরাই স্ববিরোধী। অতীত থেকে শিা না নেয়ার রোগটিও আমাদের পুরনো।
ভারতবিরোধিতার নামে অন্ধ সাম্প্রদায়িকতা মঙ্গল বয়ে আনেনি। সে ত যখন শুকানোর পথে সে দগদগে অতীত যখন ছুড়ে ফেলে দিয়ে সামনে এগোনোর সময় তখনও রাজনীতি পুরনো খেলায় মত্ত। জাতীয়তাবাদীদের বোধোদয় হবে কি হবে না সেটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ কথা বলি না ভারতীয় রাজনীতি ধোয়া তুলসী পাতা বরং আমার শহর চট্টগ্রামে ক্রিকেটযুদ্ধে ভারতীয় ঔদ্ধত্য অসহ্য ও অপমানজনক কিন্তু জবাব দিতে হবে অন্য ভাবে। যেমন দিয়েছেন তরুণ ক্রিকেটার মুশফিক। ভারতীয় ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা বাণিজ্য অধিকর্তা বা আমজনতার সাথে বিনিময়টাও সুখকর কিছু নয়। প্রতিপদে সাবধানতা, প্রতিস্তরে নিজেদের স্বার্থের প্রতি খেয়াল বা অধিকতর নজর দেয়ার বিকল্প নেই। বড় দেশ কিংবা বৃহৎ শক্তির আচরণ বরাবরই আগ্রাসী। তারপরও শত্রুতা দিয়ে উদ্দেশ্য হাসিল হবে না। এখন কৌশলের যুগ। পারস্পরিক স্বার্থ হাসিলের কাল। সে দৃষ্টিকোণে জাতির জনকের কন্যার সাম্প্রতিক সফর ও সফলতাকে না দেখলে মাঠ গরম ব্যতীত আখেরে কোন লাভ হবে না। তা ছাড়া কে কি বলছে বা বলবে তারও একটা মানদণ্ড থাকা উচিত। বেগম জিয়া যা বলবেন কুখ্যাত স্বাধীনতাবিরোধী সাকা চৌধুরীর কণ্ঠে তা মানায় না। আমাদের দেশের জন্মশত্রু রাজাকার শিরোমণি সাকা যখন বলে চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদনের পর থেকেই অনিরাপদ, প্রবাসের শিশুটিও হেসে উঠতে বাধ্য। হায়রে রাজনীতি! এখনও তার কলকাঠি এসব খুনী ও নেতা নামধারী অন্ধ ব্যক্তির সীমানা পেরুতে পারেনি। ঘরের কাছে সিঙ্গাপুর ও দণি কোরিয়ার উদাহরণই যথেষ্ট। সাকার মতো দেশবিরোধীদের সাথে একাত্ম হওয়াটা তাই জঘন্য অপরাধতুল্য। বাস্তবে রবীন্দ্রনাথের সেই উক্তিটিই যেন মেনে চলি আমরা_ 'বিশ্ব সাথে যোগে যেথায় বিহারও সেইখানে যোগ তোমার সাথে আমারও' নব সম্পর্ক, সম্পর্কের নবযাত্রা ও পারস্পরিক সম্মান আর ন্যায্য হিস্সাতেই গড়ে উঠবে নতুন মেলবন্ধন, দেশ বিক্রি বা অযাচিত বিদ্বেষ এড়িয়ে শান্তি আর প্রগতিই প্রবাসীদের ঐকান্তিক প্রার্থনা।
ঢট্রথলর্যটটনমহআদর্মবটধফ.ডমব

No comments

Powered by Blogger.