চট্টগ্রাম জেলে জামাই আদরে ১২ শিবির ক্যাডার- রিমান্ডে আত্মীয় ও কেঁৗসুলিদের দেখা সাৰাত, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

চট্টগ্রাম অফিস চট্টগ্রামে অস্ত্রসহ ১২ শিবির ক্যাডার গ্রেফতারের ঘটনায় পুলিশ আইওয়াশের নিমিত্তে রিমান্ডে এনেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা সাৰাতের মধ্য দিয়ে রিমান্ড কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
এছাড়াও দফায় দফায় আসামি পৰের কেঁৗসুলিদের আগমন ও দেখা সাৰাত পুলিশ কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। কিন্তু আদালত থেকে সাৰাতের অনুমতি দিলেও কেঁৗসুলিরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা না রেখে পুলিশকে প্রভাবিত করার মধ্য দিয়ে রিমান্ডে থাকা আসামিদের সঙ্গে প্রতিদিনই কয়েক দফায় দেখা করছে। এদিকে গত ১৯ জানুয়ারি অর্থাৎ গ্রেফতারের পরদিন ঐ ভবন থেকে দুটি কম্পিউটার উদ্ধার করা হলেও প্রতিটি ফোল্ডারে পাসওয়ার্ড থাকার কারণে তথ্য যাচাই করতে পুলিশকে বেগ পেতে হচ্ছে। শনিবার দুপুর ১২টা পর্যনত্ম ১২ আসামির মধ্যে ডা. একরামুল হকসহ ৫ জনকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এ ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের যেমন ঢিলেমি ছিল তেমনি আসামি পৰের কেঁৗসুলিদেরও বুদ্ধিমত্তা কাজ করেছে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে। কারণ কেঁৗসুলিদের শিখিয়ে দেয়া তোতা পাখির মতো বুলিই আসামিরা পুুিলশের জিজ্ঞাসাবাদে ছেড়েছে বলে ডবলমুরিং থানা পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে।
নগরীর আগ্রাবাদ মিস্ত্রী পাড়ার হক ভিলা থেকে গত ১৮ জানুয়ারি এ ১২ শিবির ক্যাডারকে অস্ত্র ও বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্রে ব্যবহৃত গুলিসহ গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর পরই মামলার বাদী এসআই মাহবুবুল আলম মোলস্না ও তদনত্মকারী কর্মকর্তা থানার ওসি একেএম মঞ্জুরম্নল হক আকন্দের আবেদনের প্রেৰিতে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে গত বৃহস্পতিবার। অপরদিকে, আসামি পৰের কেঁৗসুলিরা আরেক আবেদনের প্রেৰিতে থানা হেফাজতে থাকাকালীন খাওয়া ও বাসস্থানের সুবিধাসহ আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সাৰাত করার মতো সুযোগ সুবিধাসহ আদেশনামা আদালত থেকে নিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে। ফলে আসামি পৰের কেঁৗসুলিরা গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার দুপুর পর্যনত্ম কমপৰে ১৬বার আসামিদের সঙ্গে সাৰাত করেছেন। শুধু তাই নয়, আসামির আত্মীয়স্বজনরাও সারাদিন এমনকি রাতের বেলায় সবচেয়ে বেশি ভিড় জমায়।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, রিমান্ডে থাকাকালীন আসামিদের বাইর থেকে কোন খাবার সরবরাহ নিষিদ্ধ থাকলেও ডিউটি অফিসারের সহায়তা ও পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সুপারিশে আত্মীয়স্বজনের আনা খাবার থানা হাজতে পাঠানো হচ্ছে।
পুলিশের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, আসামি পৰের লোকজনের ভিড়ে আর কেঁৗসুলিদের আসা-যাওয়ার কারণে রিমান্ডে আনা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে অনেক অসুবিধা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার দুপুর পর্যনত্ম প্রায় ১৬ দফায় কেঁৗসুলিরা আসামিদের সঙ্গে দেখা করেছেন। রিমান্ডে থাকা আসামিদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারম্নদ বিষয়ক কোন তথ্য উদঘাটন না হওয়ার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে কেঁৗসুলিরা আসামিদের বিভিন্ন ধরনের কথা শিখিয়ে দেয়া। এছাড়াও আদালত থেকে তথ্য আদায়ের ৰেত্রে কোন প্রকার নির্যাতন না করার অনুমতি নেয়ায় অনেকটা জামাই আদরে কাটছে পুলিশের সঙ্গে আসামিদের রিমান্ডের পালা। সে সঙ্গে সন্ধ্যার পর পর আত্মীয়স্বজনরাও সমানতালে পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপৰকে ম্যানেজ করে আসামিদের সঙ্গে দেখা সাৰাত করছে। এসব আত্মীয়স্বজনরা প্রতিবেলায় খাবার নিয়ে আসার পাশাপাশি থানা পুলিশকেও অর্থ গুঁজে দিচ্ছে।
এছাড়াও রিমান্ড কমিটিতে থাকা পুলিশের ডবলমুরিং জোনের এসি, ওসি ও মামলার বাদী এসআই_ এ তিনজন একসঙ্গে সারা দিনেও সময়ের সমন্বয় করতে না পারায় দিনের বেলায় রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ হচ্ছে না। শুধুমাত্র রাতের বেলায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় বেছে নিয়েছেন এ তিন কর্মকর্তা। অভিযোগ রয়েছে, সিএমপি কমিশনার মনিরম্নজ্জামানের জামায়াত প্রীতি থাকায় গত ১৮ জানুয়ারি সিএমপি কমিশনার দফতরে আয়োজিত প্রেস কনফারেন্সে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। তবে বিভিন্ন সময়ে অর্থাৎ একজন ছিনতাইকারী আটকের ঘটনায়ও তিনি প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত থাকেন।
খোদ পুলিশের পৰ থেকে ঐদিন সকালে মিডিয়ার সকল সদস্যকে জানানো হয়েছিল বিকেলে কমিশনার দফতরে আয়োজিত কনফারেন্সে ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সিএমপি কমিশনার মিডিয়াকে ১২ শিবির ক্যাডার আটকের ঘটনা বিশেস্নষণ করবেন। ফলে ডবলমুরিং থানা থেকে কোন প্রকার তথ্য দিতে নারাজ ছিল সংশিস্নষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা। কিন্তু বিকেলে সিএমপি কমিশনার নিজ কৰে অবস্থান করলেও কনফারেন্সে উপস্থিত না হওয়ায় পুলিশের সঙ্গে শুধু সিএমপির উর্ধতন কর্মকর্তাই নয়, তদনত্মকারী কর্মকর্তার সখ্য রয়েছে বলে প্রশ্ন উঠেছে।
শনিবার দুপুরে ডবলমুরিং থানা সূত্রে জানা গেছে, একদিন রিমান্ড শেষে শুক্রবার দুপুরে হক ভিলার স্বত্বাধিকারী ও জামায়াত নেতা ডা. একরামকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু ডবলমুরিং থানার বৃহস্পতিবারের তথ্য অনুযায়ী আরও দু'জনকে দু'দিনের রিমান্ড আবেদনের কথা বলা হলেও শনিবার দেখা গেছে আরও চারজনকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এরমধ্যে একজন ডা. একরামের ছেলে গোলাম আজম। বাকি তিনজন হচ্ছে_ লুৎফর রহমান, আরিফ হোসেন ও জাহিদ মুনতালিব।
এদিকে এ ১২ আসামিকে গ্রেফতারের পরদিন হক ভিলা থেকে উদ্ধার করা হয় শিবির ক্যাডারদের ব্যবহৃত ২টি কম্পিউটার। এরমধ্যে একটি কম্পিউটার সচল নয় এমনকি হার্ড ডিস্কও নষ্ট, যা থানা কর্তৃপৰ পরীৰা-নিরীৰা করে দেখেছে। কিন্তু আরেকটি কম্পিউটার সচল হলেও এরমধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক এমনকি কেন্দ্রীয় শিবির নেতাদের বিভিন্ন তথ্য। কারণ এ কম্পিউটার সচল হলেও পাসওয়ার্ডের কারণে বিভিন্ন ফোল্ডার সচল করা যাচ্ছে না। তবে পুলিশের ধারণা, এসব ফোল্ডারের আওতায় শিবিরের বিভিন্ন অভিযান, অর্থের যোগানদাতাদের নাম, অস্ত্র ও গোলাবারম্নদের বিভিন্ন তথ্যসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের বিভিন্ন কার্যক্রমও অনত্মভর্ুক্ত থাকতে পারে। প্রত্যেকটি ফোল্ডারই পৃথক পৃথক পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করা রয়েছে।
রিমান্ডে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে ব্যবহৃত কম্পিউটারগুলো আসামিরা তাদের নয় বলে তথ্য দিয়েছে। ১৭ জানুয়ারি রাত ১০টায় হক ভিলা থেকে শিবিরের প্রায় ১০ নেতাকমর্ী ১৮ জানুয়ারির সম্মেলনের উদ্দেশ্যে ঢাকায় চলে যায়। তাদেরই অস্ত্র ও কম্পিউটার বলে স্বীকার করেছে রিমান্ডে থাকা আসামিরা। তবে পুলিশ কম্পিউটারের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে শিবিরের গোপন বিষয়গুলো বের করতে পারবে। কিন্তু সিএমপির কর্তা ব্যক্তির অসহযোগিতা থাকার কারণে থানা পুলিশ অনেক কিছুই লুকিয়ে রাখতে বাধ্য হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.