অশান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে এক দফার আন্দোলন- শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা

রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে সকালে ছাত্রলীগের একদল ‘বহিরাগত’ কর্মী আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। তাঁরা অবস্থান ধর্মঘটে ব্যবহূত মাইক ভাঙচুর করেন। এ সময় মাইকের ব্যাটারির অ্যাসিড ছিটকে আন্দোলনরত দুই শিক্ষকের চোখে পড়ে। তাঁদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলার পর শিক্ষকেরা উপাচার্য মুহম্মদ আবদুল জলিল মিয়ার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দেন এবং সন্ধ্যা থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন। রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। রাত ১২টার দিকে পুলিশ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে বলে। পরে তাঁরা অনশনস্থল ত্যাগ করে চলে যান।
বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার মাত্র চার বছরেই নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের দাবিতে গত শনিবার থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছেন। গতকালও শিক্ষার্থীরা শ্রেণীকক্ষে তালা ঝুলিয়ে রাখেন। প্রশাসনিক ভবনের এক পাশে ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সামনে ছয় দিন ধরে এই অবস্থান ধর্মঘট চলছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষকদের অন্যতম নেতা গণিত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রলীগ নামধারী একদল যুবক স্লোগান দিয়ে আমাদের অবস্থান ধর্মঘটের স্থান দখলে নেয়। এখন আমাদের এক দফার আন্দোলন—উপাচার্যের পদত্যাগ চাই।’
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল সকাল নয়টার দিকে ছাত্রলীগের বহিরাগত কিছু কর্মী-সমর্থক উপাচার্যের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারীদের সভাস্থল দখল করে সেখানে একটি মঞ্চ নির্মাণ করেন। মঞ্চে টানানো হয় একটি ব্যানার। এতে লেখা ছিল, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়’। এ সময় তাঁরা আন্দোলনরত শিক্ষকদের অবস্থান ধর্মঘটে হামলা চালিয়ে মাইক ভাঙচুর করেন। মাইকের ব্যাটারির অ্যাসিড বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মতিয়ার রহমানের চোখের পাশে পড়ে। তাঁদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুজনেরই ডান চোখে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে।
আন্দোলনের স্থান ছাত্রলীগের দখলে চলে যাওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ভবনের পাশের সড়কে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন। সন্ধ্যার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সেখানে আমরণ অনশন শুরু করেন। এর আগে বেলা একটার দিকে পুলিশ ছাত্রলীগের সভামঞ্চ এবং এর আশপাশ থেকে হামলাকারীদের সরিয়ে দেয়। এ সময় মঞ্চের নিচ থেকে পাঁচটি ছোরা, কিছু রড উদ্ধার করে পুলিশ।
হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের চিকিৎসক জি কে এম আফজাল খান বলেন, চোখের কর্নিয়ায় অ্যাসিডের ছিটা পড়েনি। তবে চোখের বাইরে লেগেছে। তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম হঠাৎ সেখানে উপস্থিত হয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পক্ষে বক্তব্য দেন। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল মনসুর আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রলীগের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফখরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। ‘তাহলে ব্যানারে ছাত্রলীগ লেখা কেন?’ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের কর্মী-সমর্থকেরা করতে পারেন। তবে কারা করেছেন, এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি অবস্থান ধর্মঘটে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বক্তব্য দিয়েছি।’ উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়টি সরকারের বিষয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
উপাচার্য গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যাননি। রেজিস্ট্রার শাহজাহান আলী মণ্ডলের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, কিছু শিক্ষক অনিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রাতে জরুরি বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়।

No comments

Powered by Blogger.