৫০ বছর আগে আবিষ্কৃত তিন গ্যাসৰেত্র আজও পরিত্যক্ত!- পটিয়া ফটিকছড়ি বাঁশখালীর ৰেত্রগুলো বদলে দিতে পারে বর্তমান নাজুক পরিস্থিতি by বিকাশ চৌধুরী

পটিয়া/ইউনুচ মিয়া, ফটিকছড়ি সারাদেশে গ্যাসের যে নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা ৫০ বছর আগে চট্টগ্রামের তিনটি আবিষ্কৃত গ্যাসত্রেই বদলে দিতে পারে। সরকারীভাবে পটিয়ার হাইদগাঁও বুদবুদিছড়া, বাঁশখালীর চুনতি ও ফটিকছড়ির সীমানত্ম এলাকার স্যামুতাং গ্যাস ত্রে থেকে গ্যাস উত্তোলন করা গেলে সঙ্কট পুরোপুরি নিরসন করা সম্ভব হবে।
তা ছাড়া এসব গ্যাস ত্রে চালু করা হলে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করার সুযোগ পাবে। ইতোপূর্বে বাপেক্সের ভূ-তত্ত্ব বিশেষজ্ঞ দল ও বিভিন্ন সংস্থা অনুসন্ধান চালিয়ে এ তিনটি গ্যাসৰেত্র আবিষ্কার করেছিল। কিন্তু পটিয়া এবং বাঁশখালীর গ্যাসৰেত্র আজও রয়েছে অবহেলিত অবস্থায়।
পটিয়া গ্যাস ত্রে ১৯৫৩ সাল থেকে বিগত ষাট বছর ধরে পরিত্যক্ত গ্যাস কূপের বিসত্মীর্ণ এলাকাজুড়ে অনবরত আগুন জ্বলছে। গ্যাস কূপের পাশর্্ববর্তী এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া পানির ছড়া দিয়ে অনবরত বুদবুদ আকারে গ্যাস উঠছে। ছড়ায় বাঁশের নল ঢুকিয়ে তাতে আগুন দিলে দাউ দাউ করে জ্বলে। ১৯৫১ সালে হাইদগাঁওয়ে গ্যাসের বিষয়টি তৎকালীন পাকিসত্মান সরকারের নজরে এলে সরকার বর্মা অয়েল কোম্পানিকে (বক) অনুসন্ধানের জন্য নিয়োগ করেন। কোম্পানি তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করে। সে সঙ্গে পটিয়া সদর থেকে একটি সড়ক ও গ্যাস ফিল্ড এলাকায় হেলিপ্যাড, সুইমিং পুল ও বাসস্থান গড়ে তোলে। তা কালের আবর্তে এখন শুধুই ইতিহাস বহন করে। পরে গ্যাস ফিল্ড এলাকার ৩শ' একর ভূমিকে তেল-গ্যাস মজুদ এলাকা চিহ্নিত করে পুনরায় একটি সোভিয়েত সংস্থাকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়। উক্ত সংস্থা দীর্ঘ ৮ মাস অনুসন্ধানের পর বিপুল পরিমাণ তেল ও গ্যাস মজুদ থাকার ব্যাপারে রিপোর্ট প্রদান করে সরকারের কাছে। কিন্তু সরকার বিশেষ পরিস্থিতির কারণে সেসময় গ্যাস উত্তোলনের জন্য আর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বাংলাদেশ মিনারেল ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশ গ্যাস এ্যান্ড অয়েল কোম্পানি লিঃ-এর পৃথক দু'টি বিশেষজ্ঞ দলসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারের শাসনামলে একাধিক কোম্পানি কয়েকবার অনুসন্ধানের কাজ চালায়।
বাঁশখালী গ্যাসত্রে বাঁশখালীতে ১৯৬০ সালে খননকৃত ৩টি পরিত্যক্ত কূপে পটিয়ার ন্যায় একই অবস্থা বিরাজ করছে। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সীসা ঢালাই করে ফেলে বিদেশী বিশেষজ্ঞ দল চলে যাওয়ার পর থেকে এখনও এসব গ্যাস কূপে অনবরত গ্যাস উঠছে কু-লী পাকিয়ে। যা দেখার জন্য প্রতিদিন লোকজন ভিড় জমায় সেখানে। খননকৃত তিনটি গ্যাস কূপের নাভী অজ্ঞাত কারণে সীসা ঢালাই করে দেয়া হয়। বাঁশখালীর জলদি পৌর সদর থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে জলদি ও চুনতি রেঞ্জের মধ্যস্থানে এ কূপ অবস্থিত।
ফটিকছড়ি গ্যাসত্রে ১৯৬৪ সালে আবিষ্কৃত ফটিকছড়ির স্যামুতাং গ্যাস ফিল্ড। দীর্ঘ ৪৪ বছর পর ২০০৮ সালে শুরম্ন হয় খনন কাজ। এ গ্যাসত্রে খননের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৩শ' ৬৮ কোটি টাকা। চিমুতং গ্যাস ফিল্ডের চারটি গ্যাস কূপ খনন করা হয়। ব্রিটিশ তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও আহরণ কোম্পানি-'সোল' এবং তৎকালীন পাকিসত্মান পেট্রোলিয়াম লিঃ (পিপিএল) যৌথভাবে এই গ্যাস কূপ খননের মাধ্যমে পরীামূলকভাবে ড্রিলিংও করেন। সেই ড্রিলিংয়ের সময় ২নং কূপটি রিগ মেশিন ভূগর্ভে তলিয়ে যায় এবং সেখানে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়। এরপর কয়েক বছর ড্রিলিং কাজ বন্ধ থাকে। ১৯৭০ সালে আবার কাজ শুরম্ন করলেও '৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধের কারণে ড্রিলিং কাজ বন্ধ করে দেশী-বিদেশী সব প্রকৌশলী লোকজন গ্যাস ফিল্ড এলাকা থেকে চলে যায়। এর পরও প্রায় এক যুগ আর কোন কাজ হয়নি। ১৯৮৩ সালে সেল ও বিপিএল পরিত্যক্ত গ্যাস ফিল্ড ড্রিলিংয়ের জন্য পরীা নিরীা শুরম্ন করে। ঐ সময়ে শানত্মি বাহিনী কর্তৃক দুই ব্রিটিশ প্রকৌশলী অপহৃত হলে নিরাপত্তাজনিত কারণে অন্য প্রকৌশলী ও মাঠকর্মীরা ফিল্ড এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। পরে অবশ্য মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ঐ অপহৃত দুই প্রকৌশলী মুক্তি পান। ১৯৯৪ সালে পেট্রোবাংলা এবং ব্রিটেনের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও আহরণ কোম্পানি-কেয়ার্ন এনার্জি' যৌথ উদ্যোগে পুনরায় ড্রিলিং করার সিদ্ধানত্ম নেয়। ১৯৯৬ সালের প্রথম দিকে মাত্র দু'টি কূপ খনন করা হয় এবং আরও দু'টি কূপ পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় বর্তমান সরকার ঐ চিমুতং গ্যাস ফিল্ডে পরিপূর্ণভাবে চারটি কূপ খননের মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলনের প্রাথমিক দাফতরিক কাজ শুরম্ন করেন বলে সূত্রে জানা গেছে।
স্যামুতাং গ্যাস ফিল্ড প্রকল্প কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুজ্জামানের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি জানান, কোন প্রকার সমস্যা দেখা না দিলে আগামী ২০১১ সালের মধ্যে স্যামুতাং গ্যাস ফিল্ডের খনন কাজ এবং গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হবে। তবে বাখরাবাদের সংযোগ লাইন নির্মিত হলে ২০১২ সালেই গ্যাস সরবরাহ সম্ভব হবে।

No comments

Powered by Blogger.