খাগড়াছড়িতে জনকণ্ঠ সম্পাদকসহ ৪ সাংবাদিকের বিরম্নদ্ধে সাত মামলা খারিজ

সংবাদদাতা, খাগড়াছড়ি দৈনিক জনকণ্ঠ সম্পাদকসহ ৪ জনের বিরম্নদ্ধে খাগড়াছড়ির সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভুঁইয়ার অনুসারীদের দায়ের করা ৭ মিথ্যা মামলা খারিজ করে দিয়েছে আদালত। গতকাল সোমবার জেলার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জ গঠনের দিন দীর্ঘ শুনানিতে অভিযোগের ভিত্তি না থাকায় আদালত মামলা খারিজ করে বিবাদীদের অব্যাহতি প্রদান করে।
গত চার বছর আগে সরকারী প্রভাব খাটিয়ে ওয়াদুদ ভুঁইয়ার অনুসারীরা দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক মোহাম্মদ আতিকউলস্নাহ খান মাসুদ, প্রধান বার্তা সম্পাদক কামরম্নল ইসলাম খান, চট্টগ্রাম বু্যরো চীফ মোয়াজ্জেমুল হক ও জনকণ্ঠের তৎকালীন খাগড়াছড়ি জেলা সংবাদদাতা জীতেন বড়ুয়ার বিরম্নদ্ধে এসব মামলা দায়ের করেছিল। চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ইখতিয়ারম্নল ইসলাম মলিস্নক ও এডিশনাল চীফ জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সাইফুজ্জামান হিরোর আদালতে পৃথক ৭টি মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে খাগড়াছড়িতে টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি, ভূমি জবরদখলসহ নানা অনিয়মের বিরম্নদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে দৈনিক জনকণ্ঠে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশিত হলে জামায়াত-বিএনপি জোট সরকারের এমপি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াদুদ ভুঁইয়াসহ তার ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা জনকণ্ঠের বিরম্নদ্ধে ১৪টি মামলা দায়ের করে। হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলা ছাড়াও জনকণ্ঠ পোড়ানো এবং বিতরণে বাধা দিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। সে সময় ৰমতার অপব্যবহার করে পুলিশী তদনত্মের মাধ্যমে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন আদালতে ১৪টি মামলা দায়ের করে।
পুলিশী তদনত্মে ৭টি মামলার অভিযোগ অসত্মিত্ববিহীন হওয়ায় আগেই বাতিল হয়ে যায়। বাকি ৭টি মামলার অভিযোগ সুষ্ঠু তদনত্ম না করেই পুলিশ আদালতে রিপোর্ট দাখিল করে। এর ভিত্তিতে আদালত এসব মামলা আমলে নেয়। সোমবার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ৪টি এবং এডিশনাল চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অপর ৩টি মামলার দিন ধার্য ছিল। উভয় আদালতে জনকণ্ঠের সম্পাদকের পৰে আইনজীবীরা উলেস্নখ করেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং হয়রানির উদ্দেশ্যেই প্রভাবশালী একটি চক্র অনুগতদের বাদী করে কাল্পনিক অভিযোগ দাখিল করে। এসব অভিযোগের কোন ভিত্তি ছিল না। ৰমতার অপব্যবহার করেই তদনত্ম কাজ প্রবাবিত করেছিল। তাই মিথ্যা মামলার চার্জ গঠন হতে পারে না। এছাড়া অভিযুক্ত এমপির বিরম্নদ্ধে পরে দোষও প্রমাণিত হয়। তিনি দ-িতও বটে। জনকণ্ঠ কোন অন্যায় বা অসত্য প্রকাশ করেনি। জাতির বিবেক হিসেবে সাংবাদিকরা তাদের ভূমিকা রেখেছেন। আইনজীবীরা মামলা খারিজ করে বিবাদীদের অব্যাহতি প্রদানের আবেদন জানান। শুনানিকালে আদালত বিবাদীদের আইনজীবীদের বক্তব্যে সন্তুষ্ট হয়ে উলেস্নখ করেন, অভিযোগের কোন ভিত্তি পাওয়া যায়নি। এছাড়া সাংবাদিকরা জাতির জন্যই লিখে থাকেন। এৰেত্রে অন্য কোন উদ্দেশ্যের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। দীর্ঘ শুনানি শেষে সোমবার খাগড়াছড়ির চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ইখতিয়ারম্নল ইসলাম মলিস্নক ৪টি এবং এডিশনাল চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সাইফুজ্জামান হিরো বাকি ৩টি মামলা খারিজ করে দিয়ে সব বিবাদীকে অব্যাহতি প্রদান করেন। বিবাদী পৰে মামলা পরিচালনা করেন এ্যাডভোকেট রতন কুমার দে। তাকে সহযোগিতা করেন এ্যাডভোকেট নাসির আহমদ, এ্যাডভোকেট মঞ্জুর মোর্শেদ ভূইয়া ও এ্যাডভোকেট সনোয়ারা সুলতানা হ্যাপী। এছাড়া খাগড়াছড়ি আদালতের অসংখ্য আইনজীবী বিবাদীদের পৰে একাত্মতা প্রকাশ করেন। শুনানিতে বাদী পৰের কোন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। বাদীও বেশ কিছুদিন ছিলেন গরহাজির। তবে সরকার পৰে প্রসিকিউশন চার্জ গঠনের আবেদন জানিয়েছিল।
খাগড়াছড়ি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দীর্ঘ চার বছর আগে হয়রানির উদ্দেশ্যে দায়ের করা ৭টি মিথ্যা মামলা খারিজ হয়ে যাওয়ায় দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক মোহাম্মদ আতিকউলস্নাহ খান মাসুদকে খাগড়াছড়ির স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক এবং স্যাটেলাইট মিডিয়ার অসংখ্য প্রতিনিধি এবং শুভাকাঙ্ৰীরা অভিনন্দন জানান। এ সময় সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, সত্য চিরদিনই সত্য, মিথ্যা সাময়িক। সত্যের জয় হয়েছে, চিরসত্যের এই ধারা অব্যাহত থাকবে। সত্য সন্ধানীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এজন্য যে, আমি ন্যায় বিচার পেয়েছি। চার বছর আগে হয়রানির উদ্দেশ্যেই এসব মামলা কেন কিভাবে দায়ের করেছিল তা সবার কাছে এখন পরিষ্কার হয়েছে। তিনি আরও উলেস্নখ করেন, জনকণ্ঠ সব সময় সত্য প্রকাশে নির্ভীক ছিল। আমরা এখনও নীতির প্রশ্নে আপোসহীন। জনগণের কথা বলেই যাবে জনকণ্ঠ। রক্তচৰুকে ভয় করে না জনকণ্ঠের কোন কর্মী।
উলেস্নখ্য, চার বছর আগে খাগড়াছড়ির পাহাড়ী জনপদে জোট সরকারের সেই এমপির দুর্নীতি, অত্যাচার, নিপীড়ন ও দখলসহ নানা অনিয়মের সুনির্দিষ্ট তথ্য অভিযোগের ভিত্তিতে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর শাসকদল ৰুব্ধ হয়। এমপির ভাই বেলায়েত হোসেন, ভাইপো দাউদুল ইসলাম, নিকটাত্মীয় মাহবুব, ক্যাডার বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড এনএম আফসার, নাহিদ আলী, মিলন, জয়নাল আবেদিনসহ ১৪ জন কাল্পনিক অভিযোগ এনে জনকণ্ঠের বিরম্নদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল। শুধু তাই নয়, মামলা যাতে আমলে এনে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয় এ জন্যও পুলিশী তদনত্ম কাজে নানাভাবে প্রভাব খাটানো হয়।

No comments

Powered by Blogger.