‘ভ্যাগজালে’ মাছের বংশ উজাড়

মাছের বংশ উজার করার নতুন এক উপদ্রবের নাম ‘ভ্যাগজাল।’ পটুয়াখালীর উপকূলীয় রাঙ্গাবালী উপজেলায় স্থানীয়দের আবিষ্কার করা বিশেষ ধরনের এ জালের সাহায্যে গত কয়েক মাস ধরে চলছে মাছের বংশ উজার করার পালা।
এ জালে মাছ ঢুকতে পারে কিন্তু বের হতে পারে না। এমনকি সাধারণ চোখে ধরা পড়ে না এমন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মাছও এ জালের ফাঁক গলে বের হতে পারে না। রাঙ্গাবালীর বনাঞ্চলের অন্তত দুশ খালে কয়েক হাজার জেলে এ জাল দিয়ে মাছ ধরছে। এ জালের ছড়াছড়িতে একদিকে মাছের বংশ উজার হচ্ছে, অন্যদিকে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির তালিকায় চলে যাচ্ছে। কয়েকটি খাল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জেলেরা বনাঞ্চলের অভ্যন্তরের খালগুলোর এপার-ওপার এবং পানির নিচ থেকে ওপর পর্যন্ত এ জাল পেতে রাখছে। মশারির নেট দিয়ে তৈরি সুক্ষ্ম ফাঁসের এ ভ্যাগজালে চিংড়ি, বাইলা, কৈ, শিং, মাগুর, টেংরা, শোল, গজাল, বাইন, পুটি, খলিশা, বোয়ালসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট বড় মাছ অনায়াসে খোলে ঢুকে পড়ছে। দীর্ঘক্ষণ জালে আটকা থাকার কারণে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মাছ ভেতরেই মারা পড়ছে। জেলেরা কেবলমাত্র বড় মাছ রেখে ক্ষুদ্র মাছ ডাঙ্গায় ফেলে দিচ্ছে। ফলে ধ্বংশ হচ্ছে ভবিষ্যত মৎস্য সম্পদ। স্থানীয়দের অনেকে এ ভ্যাগ জালকে ‘চাই’ অথবা ভ্যাসন জালও বলে। কয়েক জেলে জানিয়েছে, মশারির নেট দিয়ে একটি জাল তৈরিতে দেড়-দু’ হাজার টাকা খরচ হয়। এটি দেখতে অনেকটা লম্বা চাঁইয়ের মতো। দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা এ জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে গরিব জেলেরাই এ জাল ব্যবহার করছে। রাঙ্গাবালীর নেতা গ্রামের জেলে শুকুর আলী জানান, ভ্যাগ জাল দিয়ে একদিন পাঁচ শ’ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। দু’ তিনদিনের মধ্যে জাল তৈরির খরচ উঠে আসে। বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের মনিপাড়া গ্রামের আবদুল মান্নান জানান, অন্যান্য জালের তুলনায় ভ্যাগ জালে লাভ বেশি বিধায় প্রতিদিনই বাড়ছে জেলেদের সংখ্যা।
এদিকে ভ্যাগজাল দিয়ে নির্বিচারে মৎস্য সম্পদ উজারে এলাকার সচেতন লোকজন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বড়বাইশদিয়ার স্বর্গদ্বীপের মোঃ শাহআলম বলেন, ‘রাঙ্গাবালীতে বর্তমানে জেলেরা প্রতিদিন কয়েক কোটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মাছ ও মাছের রেনু পোনা মেরে ফেলছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে দেশীয় মাছ।’
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ কামরুল ইসলাম জানান, ভ্যাগজালের নাম এর আগে শোনা যায়নি। তবে ক্ষুদ্র ফাঁসের জাল দিয়ে মাছ শিকার সম্পূর্ণ বেআইনী। ভ্যাগজালের বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।

Ñশংকর লাল দাস, গলাচিপা

No comments

Powered by Blogger.