ইবিতে আবারো ছাত্রলীগের হামলা, আহত ৪৫ শিক্ষক

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো শিক্ষকদের ব্যাপক পিটিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে শিক্ষক সমিতির সভাপতিসহ আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪৫ জন শিক্ষক। আহত শিক্ষকদের মধ্যে অধিকাংশই অধ্যাপক এবং তারা ডক্টরেট করা।
শনিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে গত ১৯ নভেম্বর শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দুপুর আড়াইটায় ক্যাম্পাস পরিস্থিতি নিয়ে অনুষদ ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করছিলেন শিক্ষক সমিতির নেতাকর্মীরা।

এসময় হঠাৎ ছাত্রলীগের জাপান, লেলিন, লিটন, ইলিয়াস, টিটু, সজিব, জনি, রতন, শামীম, জহিরুল, শফিক, মিথুন, দিলুসহ কয়েকজন বহিরাগত নেতাকর্মী সেখানে হামলা চালায়। অনুষদ ভবনের তালা ভেঙে তারা ভেতরে ঢুকে শিক্ষকদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে এবং অফিসে ভাংচুর করে।

ঘটনার সময় প্রক্টর ড. আক্তারুল ইসলাম জিল্লু এসে ছাত্রদের বাইরে বের করে দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন।

পরে সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতে আসলে ছাত্রলীগ আন্দোলন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়।

এসময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান তুহিন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ভেতরে ঢোকার নির্দেশ দিলে পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নেয়।

পরে প্রক্টর গেট ছেড়ে চলে গেলে নেতাকর্মী ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা শিক্ষক লাউঞ্জে অবস্থানরত শিক্ষকদের ব্যাপক মারধর করেন।

লাউঞ্জে থাকা টেবিল, বেসিন ও তাদের কাছে থাকা লাঠি দিয়ে শিক্ষকদের মেরে রক্তাক্ত করে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির নেতারা।

এ ঘটনায় কমপক্ষে ২৫ শিক্ষক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহত শিক্ষকরা হলেন, অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান, অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান (আইসিই), অধ্যাপক ড. নজিবুল হক, অধ্যাপক ড. ইকবাল হোসাইন, অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ, অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান, অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান আশরাফী, অধ্যাপক ড. রহমান হাবিব, অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন, অধ্যাপক ড. রুহুল আমীন, আসাদুজ্জামান, অধ্যাপক ড. আহসানুল আম্বিয়া, অধ্যাপক ড. রেজওয়ান সিদ্দিকি, অধ্যাপক ড. এ এস মোহাম্মদ আলী, আব্দুল গফুর গাজু, অধ্যাপক ড. তারেক আল মামুন, অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান, অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন, অধ্যাপক ড. মোতালেব হোসেন প্রমুখ।

ঘটনার সময় বহিরাগত কয়েক সন্ত্রাসী শিক্ষক সমিতির কয়েকজন নেতাকর্মীর মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নিয়েছে বলে শিক্ষকরা জানান।

এ বিষয়ে আহত অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান আসরাফী বলেন, “আমাদের ওপর হামলাকারীরা কেউই সাধারণ ছাত্র না। এরা সবাই ছাত্রলীগ ও বহিরাগত সন্ত্রাসী।”

ছাত্রলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, “শিক্ষক সমিতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছেন তার উচিত শিক্ষা তারা পেয়েছেন। ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করেছে।”
তবে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান তুহিন এ হামলার সঙ্গে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে বলেন, “এ ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগ জড়িত নয়। এটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। তারাই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে।” এদিকে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থী ইতিহাস বিভাগের হাবিব সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা ক্লাস-পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলন করছি। আমরা শিক্ষকদের ওপর হামলা বা ভাংচুর কোনোটাই চাইনি। তবে ছাত্রলীগ এসে আমাদের আন্দোলনটাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছে।”

পরে শিক্ষক লাউঞ্জ থেকে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নজিবুল হককে সঙ্গে করে বাইরে নিয়ে আসেন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তিনি সবার উদ্দেশ্যে রোববার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা চালুর আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

ক্লাস-পরীক্ষা চালুর আশ্বাসের খবর পেয়ে মহাসড়কে অবস্থানরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা চার ঘণ্টা পর বিকাল সাড়ে ৩টায় অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, “বার বার ছাত্রলীগের শিক্ষকদের ওপর হামলায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজ আজ স্তম্ভিত। আমরা এ হামলার নির্দেশ দাতা দুর্নীতিবাজ প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার বিচার এবং তাদের পদত্যাগ দাবি করছি।”

এদিকে বিশ্ববিদালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল হাকিম শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, “আমি শিক্ষার্থীদের কাছে ২৪ ঘণ্টার সময় চেয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু তারা আবার শিক্ষকদের ওপর কেন হামলা করছে আমি বুঝতে পারছি না। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।”

এর আগে গত ১৯ নভেম্বর শিক্ষক সমিতির অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। সেই ঘটনায় ৩০ জন শিক্ষক ও তিনজন সাংবাদিক আহত হন।

No comments

Powered by Blogger.