জুলেখা বেগম

প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে উঠে আসা গাইবান্ধা সদর উপজেলার বানিয়ারজান গ্রামের জুলেখা বেগম। জীবন জীবিকার শূন্য অবস্থান থেকে যিনি একজন সংগ্রামী এবং নারী উন্নয়নের পথিকৃতে পরিণত হয়েছেন। অধ্যবসায় আর কর্মনিষ্ঠা যার সাফল্যের চাবিকাঠি।
এ কারণে এ বছর বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে তিনি সংবর্ধিত হন এবং রোকেয়া স্মৃতি পদক লাভ করেন। এ উপলক্ষে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গণউন্নয়ন আয়োজিত ‘উন্নয়ন ও সম্ভাবনায় নারী’ শীর্ষক দু’দিনব্যাপী নারী মেলায় তাকে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
চরম দারিদ্র্যে আর অসহায় অবস্থায় ১৯৮৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় যখন বাড়িঘর ছেড়ে যখন তাকে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাস করতে হয়েছিল। সে সময় নিজ পরিবারের দুঃখকষ্ট লাঘবের পাশাপাশি সেখানে আশ্রিত ১০টি দরিদ্র পরিবারের নারীদের নিয়ে ‘দশে মিলে’ নামে একটি মহিলা সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। সেই থেকে শুরু। এই সমিতির মাধ্যমে দরিদ্র নারীদের নানা উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে জড়িত হয়ে পড়েন।
এভাবেই তিনি নারী উন্নয়ন, পারিবারিক নারী নির্যাতন, যৌতুক এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। তার এই কর্মকা-ের সুবাদেই ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে ‘পরিবেশ সংরক্ষণে নারীদের ভূমিকা’ শীর্ষক প্রশিক্ষণে পাকিস্তান, সিডো সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিশ্ব নারী সম্মেলনে যোগদানের জন্য চীন এবং পারিবারিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের সমাবেশে যোগদানের লক্ষ্যে শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বো সফর করারও সুযোগ পান তৃণমূল পর্যায়ের এই নারীনেত্রী।

জাহানারা বেগম

গাইবান্ধা সদর উপজেলার ব্রিজ রোডের জিন্নাহ মিয়া স্ত্রী জাহানারা বেগম একজন অনুকরণীয় নারীনেত্রী। জীবনযুদ্ধে তৃণমূল অবস্থা থেকে নিজ প্রচেষ্টায় ভাগ্যের উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলনে তিনি সম্প্রতি সক্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে সবার দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছেন। এ কারণে এ বছর বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে গণউন্নয়ন কেন্দ্র আয়োজিত নারী মেলায় তিনি রোকেয়া স্মারক পদক লাভ করেন। সেই সঙ্গে তাকে সংবর্ধনাও প্রদান করা হয়।
নারী শিক্ষায় পারিবারিক প্রতিবন্ধকতা ও সামর্থ্যরে অভাবে এই নারীর ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও লেখাপড়ার বেশি সুযোগ পাননি। অতঃপর অল্প বয়সে তার বিয়ে হয় লজেন্স ফ্যাক্টরির একজন দরিদ্র শ্রমিকের সঙ্গে। পরিবারের দারিদ্র্যবিমোচনসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিয়ের পর থেকেই তিনি তৎপর হয়ে ওঠেন। ১৯৮৫ সালে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঞ্চয় সমিতিতে সম্পৃক্ত হয়ে সেখান থেকে মাত্র ৫০০ টাকা ঋণ নিয়ে তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করেন। এ থেকেই শুরু। তারপর আর পেছন দিকে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে তার রয়েছে লজেন্স, চানাচুর এবং আচার তৈরির ছোট্ট একটি কারখানা। তার উৎপাদিত পণ্য এ জেলার গ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়। এ থেকেই এখন তার মাসিক আয় ২০ হাজার টাকারও বেশি। এ আয় থেকেই দুই বিঘা আবাদি জমিসহ বাড়ি ঘরেরও উন্নয়ন করেছেন তিনি নিজ প্রচেষ্টায়। এছাড়াও গবাদি পশু পালন, বসতবাড়িতে সবজি চাষসহ নানা আর্থসামাজিক কর্মকা-ে সম্পৃক্ত হয়ে তিনি পরিবারের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন।
Ñআবু জাফর সাবু, গাইবান্ধা

No comments

Powered by Blogger.