শেখ হাসিনার দিলস্নী জয় বিএনপির প্রলাপ by বাহাউদ্দীন চৌধুরী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে জয়ী হয়ে ফিরেছেন বলে দাবি করেছেন। আমরাও এই দাবির সঙ্গে একমত। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'ভারতে গিয়ে দেশের স্বার্থ শতভাগ রৰা করতে পেরেছি। কাজেই আমি জয়ী আজ।'
এই দাবির পরদিনই বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর বিরম্নদ্ধে দেশ বিক্রির অভিযোগ আনলেন। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের ফলাফল নিয়ে দেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল নিজেদের যে অবস্থান প্রকাশ করল, তা খুবই হতাশাজনক।
বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করে এসেছেন। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, ওটা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গে ভারত সরকারের ইশতেহার।
গুলশানের কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর সম্পর্কে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে সমঝোতা ভারতের সঙ্গে করা হয়েছে, সেই ৰমতা জনগণ এই সরকারকে দেয়নি। তিনি ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো জনগণের সামনে প্রকাশের দাবি জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, চুক্তির বিষয়ে এখনও তারা কিছু জানেন না। এই চুক্তি স্বার্থবিরোধী হলে বিএনপি ৰমতায় এলে তা বাতিল করবে। তিনি বলেন, যৌথ ইশতেহারে যা উলেস্নখ আছে, তাতে স্পষ্ট যে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে যা কিছু হয়েছে তাতে ভারত শতভাগ লাভবান হয়েছে। আর এই সফরে বাংলাদেশ শুধু ব্যর্থই হয়নি, বরং চরম ৰতিগ্রসত্ম হয়েছে। তাই এর বিরম্নদ্ধে আন্দোলন করা হবে। বিষয়টি রাজনৈতিক। তাই রাজপথেই মোকাবেলা করা হবে।
বাসত্মবতা হচ্ছে এই সফর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ৰেত্রে এক নতুন সম্ভাবনার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। নিরাপত্তা, যোগাযোগ, উন্নয়ন_এসব ৰেত্রে দেশ দুটির মধ্যে সহযোগিতা ও সমঝোতার মনোভাব দেখা গেছে, যা খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ। এ ছাড়া বাণিজ্য ঘাটতি দূর করার উদ্যোগ নেয়া, তিসত্মার পানি বণ্টন নিয়ে একটি সমঝোতায় আসা ও সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মেটানোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে দুই পৰ একমত হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য গুরম্নত্বপূর্ণ এই বিষয়গুলোর সমাধান না হলেও দুই পৰের সমঝোতায় আসার বিষয়টিকে আমরা অগ্রগতি হিসেবেই বিবেচনা করতে চাই। দেশ দুটি পারস্পরিক সহযোগিতার যে প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে, তা বাসত্মবে কার্যকর করতে কাজে নেমে পড়াই এখন গুরম্নত্বপূর্ণ। দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতার ৰেত্রে কোন সফর কখনও শতভাগ সফল হওয়ার সুযোগ নেই। এ ধরনের সফর ও পারস্পরিক সহযোগিতা একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া। এই সফরে যেসব সাফল্য পাওয়া গেছে, তাকে নিজের দেশের অনুকূলে কাজে লাগানোই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়া দাবি করে বসলেন, প্রধানমন্ত্রী ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করে দিয়ে এসেছেন। তাঁর মনত্মব্যকে এক কথায় দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে মানতেই হচ্ছে। বাংলাদেশের সংসদে যিনি বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, তাঁর কাছ থেকে এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মনত্মব্য কোনভাবেই প্রত্যাশিত নয়। বিরোধীদলীয় নেত্রী যদি তাঁর বক্তব্যে কিভাবে দেশ বিক্রি হয়ে গেল, তার সপৰে কোন যুক্তি তুলে ধরতে পারতেন, তবে আমরা দায়িত্বশীলতার পরিচয় পেতাম। ভারতের সঙ্গে কোন চুক্তি যদি দেশের স্বার্থের বিরম্নদ্ধে যায়, তবে তার সমালোচনা করা ও প্রয়োজনে বিরোধিতা করা একটি দায়িত্বশীল বিরোধী দলের দায়িত্ব। আমরা খুশি হতাম, যদি তিনি সুনির্দিষ্ট করে ভারতের সঙ্গে কোন কোন চুক্তি বা সমঝোতা দেশের স্বার্থের বিরম্নদ্ধে গেছে বা কেন তা দেশের জন্য ৰতিকর হয়েছে, তা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতেন। সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া নিজেই বলেছেন যে, চুক্তির বিষয়ে তাঁরা এখনও কিছুই জানেন না।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে যেসব যৌথ ঘোষণা দিয়েছেন সে ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে জামায়াত এ কথা বলেছে। দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বলেন, জনগণ কখনও জাতীয় স্বার্থবিরোধী কোন চুক্তি, সমঝোতা ও ঘোষণা মেনে নেবে না। কাজেই দেশের জনগণের স্বার্থবিরোধী কোন চুক্তি, সমঝোতা ও ঘোষণা কার্যকর করা সম্ভব হবে না।
বিবৃতিতে মুজাহিদ আরও বলেন, বাংলাদেশের সামরিক নিরাপত্তা বিশেস্নষকদের মতে, ভারতকে চট্টগ্রাম, মংলা ও আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহারের অনুমতি প্রদান নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে কোনভাবেই সমীচীন হয়নি। এতে বাংলাদেশকে ভারতের রাজনীতি ও অর্থনীতির সঙ্গে জড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা তথা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপর্যয়ের মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মুক্তাঙ্গনে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ও ধর্মহীন শিৰানীতি চালুর সরকারের সিদ্ধানত্মের প্রতিবাদে ইসলামী আন্দোলন আয়োজিত সমাবেশে বিডিআরের সাবেক প্রধান এসব কথা বলেন। সমাবেশে ধর্মভিত্তিক ও ডানপন্থী বেশ কয়েকটি ছোট দলের নেতারা বক্তব্য দেন। বক্তারা বলেন, সরকার ভারতের সঙ্গে যে চুক্তি করেছে তা বাসত্মবায়ন করতে দেয়া হবে না। সমাবেশে তিনজন কাফনের কাপড় পরে যোগ দেন। ভারতের বিরম্নদ্ধে যুদ্ধের পরিকল্পনা নিয়ে ফজলুর রহমান বলেন, দেশের ১২ কোটি মানুষের ছয় কোটি নারী এবং তিন কোটি শিশু ও বৃদ্ধ বাদ দিয়ে বাকি তিন কোটি তৌহিদী জনতাকে নিয়ে একটি বাহিনী করতে চান তিনি। এ বাহিনী নিয়ে যুদ্ধ করে বাংলা, উড়িষ্যা ও আসামকে ভারতের কাছ থেকে পুনরম্নদ্ধার করতে হবে। তিনি বলেন, 'আমি সে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত আছি। ...ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে। আপনারা প্রস্তুত থাকুন।' সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলনের আমির চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ মোঃ রেজাউল করীম বলেন, 'আমরা সবাই একত্র হয়ে আলস্নাহর রম্নজ্জু ধরেছি। সবে শুরম্ন হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে।'
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার রায় কার্যকর এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাধা দিতে বেগম খালেদা জিয়া ভারত বিরোধিতার নামে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। তিনি গায়ে পড়ে ঝগড়া বাধাতে চাইছেন। দেশকে পুরনো সংঘাতের রাজনীতির ফাঁদে ফেলতে চাইছেন। ভারতের সঙ্গে 'গোপন নিরাপত্তা চুক্তির' অভিযোগ সম্পর্কে বেগম জিয়ার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে সৈয়দ আশরাফ বলেন, 'এ রকম কোন চুক্তির বিষয় জানা থাকলে জনসমৰে প্রকাশ করম্নন।' বেগম জিয়া স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, উলফা, হুজি ও শানত্মি, গণতন্ত্র ও উন্নয়নবিরোধী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছেন উলেস্নখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'এই অশুভ শক্তির ঐক্যে আমরা ভীত নই। এদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।'
বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। চাইলেই এ প্রতিবেশী বদলে ফেলা সম্ভব না। কাজেই ভারতের সঙ্গে দ্বিপৰীয় সম্পর্ক উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের মধ্যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস জমে আছে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর সেই অবিশ্বাস দূর করেছে। এখন এ সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে হবে। যেসব চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছে, সেগুলোর বাসত্মবায়নের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ ৰেত্রে দলীয় স্বার্থ থেকে বেরিয়ে এসে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। ইংরেজী দৈনিক ডেইলি স্টার আয়োজিত 'ভারত-বাংলাদেশ শীর্ষ বৈঠক ২০১০' শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেছেন।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বলেন, কেউ বাজারে গেলেন আর ব্যাগ ভরে সব নিয়ে এলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে কেউ তেমন কিছু আশা করলে ভুল হবে। কারণ কূটনৈতিক সম্পর্কে এভাবে কিছু হয় না। চারদিনের সফরে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে_ এমনটিও আশা করা যায় না। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে অনেক কিছু নিয়ে বাংলাদেশের সমস্যা আছে। দীর্ঘদিন পর এ বিষয়গুলো আলোচনায় এসেছে। দুই দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নেয়ার একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমণি বলেন, 'এ সফরকে শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেখলে চলবে না, এ সফর দৰিণ এশিয়ার জন্য একটি নতুন দিগনত্ম। আমরা দৰিণ এশিয়ায় সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চাই।' তিনি বলেন, একটি সফরে যতখানি অর্জন সম্ভব ততখানি হয়েছে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশ চুক্তিতে বাংলাদেশেরই লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আমরা তো ইচ্ছামতো প্রতিবেশী পরিবর্তন করতে পারি না। প্রতিবেশী ভাল না হলে তার সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। অথচ বিএনপি তার উল্টোটা করে। ভারত বিরোধিতা ও সাম্প্রদায়িকতা বিএনপি রাজনীতির মূল সত্মম্ভ। তাই বিএনপির সর্বাত্মক চেষ্টা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করে তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণ করা। তাতে জনহিতের দিকটি সম্পূর্ণ উপেৰিত। ইতোমধ্যে জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ছাত্র শিবিরের আসত্মানা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে পুলিশ। তারা বিএনপির সহযোগিতায় দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। তারা সদম্ভে ঘোষণা করেছে, দলীয় প্রধানের নির্দেশ পেলে তারা অচল করে দেবে। বিএনপি-জামায়াত জোটের কাছে কোন ইসু্য না থাকায় তারা এই চুক্তিবিরোধী আন্দোলনকেই প্রধান ইসু্য করতে চাইছে। কিন্তু এই বিষয়েও তারা দেশের মানুষের কাছ থেকে তেমন সমর্থন পাচ্ছে না। বর্তমান সময়ে ভারত সম্পর্কে দেশের মানুষের মনোভাবের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সেই পুরনো রেকর্ড বাজিয়ে তেমন কাজ হচ্ছে না। দেশের মানুষ শানত্মি চায়। চরম দারিদ্র্য থেকে মুক্তি চায়।
তাই বিএনপি-জামায়াতের বাগাড়ম্বরে তারা ভুলবে না। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীর শাসত্মি কার্যকর হওয়ার সময় এগিয়ে আসায় এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে সরকারের দৃঢ়সঙ্কল্পে ভীত হয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা কষছে। বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দলের জোটবদ্ধ হওয়া এবং ধর্মীয় জঙ্গীদের কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়া আশঙ্কাজনক। সরকারের এই বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের ভৌগোলিক বাসত্মবতাকে যুক্তিপূর্ণভাবে পারস্পরিক মঙ্গলের স্বার্থে কাজে লাগানোর পরিবর্তে অবিশ্বাস, অনাস্থা, দোষারোপের যে ধারা এত দিন কমবেশি চলে এসেছে, তার অবসান ঘটানো জরম্নরী হয়ে পড়েছিল। দিলস্নী শীর্ষ বৈঠকে দুই দেশের সরকারের মধ্যে যেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাৰরিত হয়েছে এবং আরও যা হতে যাচ্ছে, সেগুলোর বাসত্মবিক সুফল জনজীবনে প্রতিফলিত হলেই দুই দেশের সম্পর্কের প্রকৃত উন্নতি ঘটবে। জনগণ চুক্তি ও সমঝোতার সুফল পেতে আগ্রহী। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর দিলস্নী সফর দেশ দুটি মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে, দুই দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাকে গঠনমূলকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে আঞ্চলিকভাবে বড় ধরনের উন্নয়নের সূচনা ঘটানো সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর শেষে দিলস্নীতে ৫০ দফার যে যৌথ ঘোষণা প্রকাশ করা হলো, তা থেকে এটা পরিষ্কার যে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের অধিকতর সহযোগিতামূলক ধারা সূচিত হতে যাচ্ছে, যা দেশ দুটির দ্বিপৰীয় সম্পর্কের ৰেত্র ছাড়িয়ে আঞ্চলিক ৰেত্রেও বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। উভয় দেশের জনগণের জন্যই আশাব্যঞ্জক বার্তা বয়ে এনেছে হাসিনা-মনমোহন শীর্ষ বৈঠক।
প্রথমত, সন্ত্রাসবাদ দমনের লৰ্যে স্বাৰরিত তিনটি চুক্তি এই অঞ্চলে জঙ্গীবাদ ও সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা দমনের উদ্যোগে দুই দেশকে আরও কাছে টানবে। দুই দেশের আনত্মরিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে পারে। উভয় দেশের জনগণ শানত্মিকামী; সন্ত্রাসবাদ তাই কোন এক পৰের বিষয় নয়। দ্বিতীয়ত, বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের লৰ্যে বাংলাদেশ ও ভারত পরস্পরের সমুদ্র, রেল ও সড়কপথ একে অন্যকে ব্যবহারের সুযোগ দেবে বলে যে সমঝোতা হয়েছে, তা খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে গতিসঞ্চারের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানকে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেবে বাংলাদেশ; এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অনেক রাজস্ব আয় হবে। বিশেষত প্রায় অচল মংলা বন্দরটি এই সুবাদে প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠবে, সেখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানও ঘটবে। আর নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগের ৰেত্রে বাংলাদেশ পাবে ভারতীয় ভূখ- ব্যবহারের সুযোগ। ওই দুটি দেশে আমাদের বাণিজ্য সম্প্রসারণের ৰেত্রে এটি হবে অত্যনত্ম সহায়ক। এই উদ্যোগ শুধু দ্বিপৰীয়ভাবে ভারত-বাংলাদেশ নয়, বরং আঞ্চলিক যোগাযোগ বা কানেকটিভিটির পথ সম্প্রসারণের ৰেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা ঘটাতে পারে।
আমরা মনে করি বাংলাদেশ-ভারত চুক্তিকে দলীয় বা গোষ্ঠীগত দৃষ্টিতে না দেখে জাতীয় স্বার্থের নিরিখে দেখা উচিত। সঙ্কীর্ণ দলীয় রাজনীতির স্বার্থে বিবেচনা না করে জাতীয় উন্নয়নের কথা বিবেচনা করা প্রয়োজন।
_লেখক ভাষা সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও সাবেক সচিব

No comments

Powered by Blogger.