সহজ জয়েই ফাইনালে উত্তরাঞ্চল

আম্পায়ারের আঙুল দেখেই মাইশুকুর রহমান পাখির মতো ‘ডানা মেলে’ ভেসে বেড়াতে লাগলেন মাঠময়। সিলি মিড অনে ক্যাচ নিয়েছেন জয়ের পথে কাঁটা হয়ে থাকা সৌম্য সরকারের, মাইশুকুরকে আর পায় কে! সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে দাঁতে দাঁত কামড়ে লড়াই করছিলেন সৌম্য সরকার। কিন্তু পঞ্চাশকে তিন অঙ্ক পর্যন্ত টেনে নিতে ব্যর্থ আরেকবার।
সেই সঙ্গে একরকম শেষ প্রাইম ব্যাংক দক্ষিণাঞ্চলের ম্যাচ বাঁচানোর শেষ সম্ভাবনাটুকুও। এরপর অপেক্ষা ছিল আনুষ্ঠানিক সমাপ্তির। সেটা খানিকটা বিলম্বিত হলো সোহাগ গাজীর ব্যাটে। আটে নেমে নিজের ব্যাটিং সামর্থ্যের প্রদর্শনী আরেকবার মেলে ধরেছেন, ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে বিনোদন জুগিয়েছেন হাতে গোনা কিছু দর্শককে। তবে শেষ পর্যন্ত প্রাপ্য সেঞ্চুরিটা করতে পারেননি, রুখতে পারেননি দলের বড় পরাজয়ও। ১৭০ রানের জয়ে সবার আগে প্রথম বাংলাদেশ লিগের ফাইনালে উত্তরাঞ্চল। কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি পাওয়া যায়নি বলে যে দলটিকে চালাচ্ছে বিসিবিই।
অনেক রোমাঞ্চ আর সম্ভাবনা নিয়ে শুরু হয়েছিল দিন। সব সম্ভাবনার মৃত্যু সাতসকালেই। আগের দিনের অপরাজিত ব্যাটসম্যান ফজলে রাব্বি আউট দিনের দ্বিতীয় বলেই। বাঁহাতি স্পিনার সানজামুলের সোজা বলে মাইশুকুরের তালুবন্দী সিলি মিড অনে। বিপদে দলের সবচেয়ে বড় আশ্রয় হতে পারত যাঁর ব্যাট, সেই তুষার ইমরানই আউট সবচেয়ে দৃষ্টিকটুভাবে। বাঁহাতি স্পিনার সাকলাইনকে স্পিনের বিপক্ষে ফ্লিক করতে গিয়ে দলের অভিজ্ঞতম ব্যাটসম্যান ক্যাচ দিলেন কাভারে! ২৭ বলে ১ রান করে তাপস ঘোষও শিকার সাকলাইনের স্পিনের।
একটা পাশ তবু আঁকড়ে পড়েছিলেন সৌম্য। তাঁর ২৩৯ মিনিটের প্রতিরোধ শেষ তানভীরের লেগ স্পিনে। একটু বেশিই ফরোয়ার্ড খেলতে গিয়ে খানিকটা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। ডিফেন্সটাকে তাই নিচে রাখতে পারেনি, অপেক্ষায় থাকা মাইশুকুর ভুল করেননি লুফে নিতে। দুই ইনিংসেই সৌম্য আউট হলেন ফিফটি করে। নয়বার প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে পঞ্চাশ পেরিয়ে একবারও তিন অঙ্ক ছুঁতে পারেননি ১৯ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
সৌম্যর সঙ্গে তাল মেলাচ্ছিলেন জিয়াউর রহমানও। প্রথম রান পেতে তিনি ব্যয় করে ফেলেন ১৯ বল। পরে টানা দুই বলে লং অন দিয়ে উড়িয়েছেন সানজামুলকে। কিন্তু জিয়া ও রাজ্জাককে এক ওভারেই ফেরান সাকলাইন। ম্যাচ যখন শেষের অপেক্ষায়, হঠাৎই উত্তাল সোহাগের ব্যাট। দারুণ সব কাভার ড্রাইভ, পুল, স্লগ সুইপ, ডাউন দ্য উইকেট গিয়ে তুলে মারা—সোহাগকে থামানো যাচ্ছিল না নতুন বল নিয়েও। নবম উইকেটে শাফাক আল জাবিরের সঙ্গে ঠিক ১০০ রানের জুটি গড়েন, যাতে সোহাগের অবদানই ৮৫!
পাগলা ঘোড়াকে শেষ পর্যন্ত বশ মানিয়েছেন অষ্টম বোলার নাসির। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে দুটি সেঞ্চুরি আছে সোহাগের, একটি আবার ৬৯ বলে। কাল যেন চাইছিলেন এর চেয়েও দ্রুত সেঞ্চুরি। নাসিরকে প্রথম বলেই গ্যালারিতে পাঠাতে গিয়ে উচ্চাভিলাষী অভিযানের ইতি, লং অনে ফরহাদ রেজার ক্যাচে শেষ ১৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৫০ বলে ৮৫ রানের ইনিংস। এক বল পর ইনিংস ও ম্যাচেরও ইতি, বিনা রানেই ২ উইকেট নাসিরের। ১০ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা সাকলাইন সজীব।
উত্তরাঞ্চল হলেও দলটা আসলে আগের রাজশাহী বিভাগই। জাতীয় ক্রিকেটে যারা সফলতম দল। ফাইনালে উঠে গেল বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগেও। তবে টুর্নামেন্টটা যে ক্রিকেটারদের কাছে বিশেষ কিছু, বলে দিচ্ছিল উত্তরাঞ্চলের স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যাপনটাই!
সং ক্ষি প্ত স্কো র
উত্তরাঞ্চল-দক্ষিণাঞ্চল, মিরপুর
বিসিবি উত্তরাঞ্চল: ২৯১ ও ৮১.৪ ওভারে ৩৬২/৭ ডি.। প্রাইম ব্যাংক দক্ষিণাঞ্চল: ২০৫ ও ৮৬.৩ ওভারে ২৭৮ (ইমরুল ৯, সৌম্য ৬১, এনামুল ৭, রাব্বি ৩০, তুষার ২৩, তাপস ঘোষ ১, জিয়াউর ৩৫, সোহাগ ৮৫, রাজ্জাক ০, শাফাক ১৫, রবিউল ০*; ফরহাদ হোসেন ১/৪১, সাজেদুল ১/৩৯, সাকলাইন ৪/৯০, ফরহাদ রেজা ০/১০, সানজামুল ১/৪৫, নাঈম ০/২১, তানভীর ১/২১, নাসির ২/০)।
ফল: উত্তরাঞ্চল ১৭০ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাকলাইন সজীব (উত্তরাঞ্চল)।

No comments

Powered by Blogger.