এমপিওভুক্তির নতুন নীতিমালা চূড়ানত্ম, শীঘ্রই ঘোষণা- নতুন শিৰা প্রতিষ্ঠানের এমপিও সুবিধা জানুয়ারি থেকেই কার্যকর, এক সপ্তাহের মধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি

বিভাষ বাড়ৈ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন শিৰা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির নীতিমালা চূড়ানত্ম করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে। আগে আবেদন করা থাকলেও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর এমপিও পেতে পুনরায় আবেদন করতে হবে শিৰা প্রতিষ্ঠানকে।
তবে এবার আবেদনের জন্য আগের মতো জটিল কোন প্রক্রিয়ায় যেতে হবে না। এমপিওর শর্ত হিসাবে নতুন নীতিমালায় যা বলা হবে কেবল সেসব তথ্য জানাতে হবে সরকারকে। আর চলতি জানুয়ারি মাস থেকেই নতুন শিৰা প্রতিষ্ঠানের এমপিও সুবিধা কার্যকর করা হবে।
জানা গেছে, শিৰা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য নীতিমালা চূড়ানত্ম করার কাজ প্রায় শেষ। প্রসত্মাবিত নীতিমালার বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে শেষ মুহূর্তের কাজ করছে শিৰামন্ত্রণালয়। এর আগে, গত ৪ জানুয়ারি সরকারের কাছে খসড়া নীতিমালা জমা দেয় জাতীয় এমপিওভুক্তি নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি। যেখানে কমিটি নতুন এমপিওভুক্তির লৰ্যে যোগ্যতার ভিত্তিতে স্কুল ও কলেজকে গ্রেডিংয়ের আওতায় নিয়ে আসার সুপারিশ করে। আর এই গ্রেডিংয়ের জন্য প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতির তারিখ, শিৰার্থী সংখ্যা, পাবলিক পরীৰার্থীর সংখ্যা এবং উত্তীর্ণের হার এই চারটি বিষয়কে বিবেচনায় আনার সুপারিশ করা হয়। বলা হয়, কেবল গ্রেডিংয়ের ভিত্তিতেই শিৰা প্রতিষ্ঠানের এমপিও প্রদান, স্থগিত এবং বতিল করা যাবে। এছাড়া শিৰক নিয়োগ এবং পদোন্নতির ৰেত্রে সরকারী কর্ম কমিশনের (পিএসসি) ন্যায় একটি কমিশন গঠনেরও সুপারিশ করেছে সরকার গঠিত এ কমিটি। জানা গেছে, নতুন নীতিমালায় হুট করে কোন কারণ দর্শানো ছাড়া ইচ্ছেমতো শিৰক ও শিৰা প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিলের বিরম্নদ্ধে শক্ত অবস্থান তুলে ধরে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিল করতে হলে অনত্মত ৪ বছর পর্যায়ক্রমে সুযোগ দিয়ে তা কার্যকর করতে হবে। এছাড়া নীতিমালায় দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী ডিগ্রী পর্যায়ের কলেজে বিষয়ভিত্তিক তৃতীয় শিৰককে এমপিও প্রদানের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি এবং সরকারের সংশিস্নষ্টরা জনকণ্ঠকে বলেছেন, বিষয়টি ছিল অত্যনত্ম জটিল এবং ব্যাপক। আবার চাহিদা অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ না থাকাসহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার ফলে নীতিমালা তৈরিতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। কিন্তু যে নীতিমালা আসছে তা অতীতের যে কোন নীতিমালার তুলনায় শিৰক-কর্মচারীদের স্বার্থ রৰা করবে অনেক বেশি। জানা গেছে, এমপিওভুক্তি একটি চলমান প্রক্রিয়া হলেও দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে এমপিওভুক্তির কার্যক্রম। অথচ এমপিওর জন্যর্ িশৰা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে কয়েক হাজার শিৰা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সরকারী অনুদান পাওয়ার যোগ্যতা থাকলেও তা না পেয়ে হাজার হাজার শিৰা প্রতিষ্ঠান চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়ে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ৰমতা গ্রহণ করেই আবার এমপিওর চাকা সচল করার উদ্যোগ নেয় মহাজোট সরকার। বাজেটে এর জন্য বরাদ্দও করা হয় ১১২ কোটি টাকা। যদিও এ টাকা দিয়ে সর্বোচ্চ সাড়ে ৫শ' প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা সম্ভব তবুও দ্রম্নত এ প্রক্রিয়া সচল করার চেষ্টা করে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ জুন নতুন শিৰা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়নে সরকার এ কমিটি গঠন করে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. আলাউদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে শিৰা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিকরণ নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়।
জানা গেছে, নীতিমালায় এমপিও পাওয়ার জন্য শিৰক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগ্যতায় তেমন কোন পরিবর্তন আনা হয়নি। তবে পরিবর্তন আনা হয়েছে প্রতিষ্ঠানের অর্গানোগ্রামে। এর ফলে স্কুল, কলেজ মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিৰা প্রতিষ্ঠানে শিৰক-কর্মচারীদের সংখ্যায় পরিবর্তন আনা হয়েছে ব্যাপক। এছাড়া নীতিমালার এমপিও প্রদানে কারিগরি শিৰা প্রতিষ্ঠান, হাওর, বাঁওড়, দুর্গম এলাকা, আদিবাসী, নারী শিৰা, সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, বিশেষায়িত শিৰা প্রতিষ্ঠানসহ বেশ কিছু বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আগে এমপিওর জন্য প্রতিষ্ঠানের শিৰক ও কর্মচারীর জনবল এককভাবে বিবেচনা করা হলেও নীতিমালায় বিষয়টিকে আলাদা আলাদাভাবে বিবেচনা করার কথা বলা হয়েছে।
কোন কারণে একটি প্রতিষ্ঠানের এমপিও এখন আর হুট করে ঢালাওভাবে বন্ধ করা যাবে না। এৰেত্রে নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রথম বছর প্রতিষ্ঠানকে সতর্কতামূলক চিঠি দিতে হবে, দ্বিতীয় বছর অনুদানের ২৫ শতাংশ বন্ধ করা যাবে, তৃতীয় বছর ৫০ শতাংশ এবং চতুর্থ বছরে এসে শতভাগ বন্ধ করা যাবে। তবে এর পরেও দু'বছর প্রতিষ্ঠানের ফলসহ সংশিষ্ট বিষয় ভাল হলে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে যোগ্য হলে এমপিও আবার ফিরিয়ে দিতে হবে। নীতিমালায় স্কুল কলেজে বিষয়ভিত্তিক শিৰক নিয়োগ দিয়ে এমপিও প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। এর ফলে এখনকার মতো এক বিষয়ের শিৰক দিয়ে অন্য বিষয়ের কাজ করা বা এমপিওভুক্ত করা যাবে না। বিষয় অনুযায়ী শিৰক নিয়োগ দিয়ে এমপিওভুক্ত করতে হবে। বিজ্ঞানের প্রতি বিষয়ের জন্য একজন ডেমোনেস্ট্রেটর নিয়োগ দিয়ে এমপিও প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। রবিবার মন্ত্রণালয়ের সংশিস্নষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, নীতিমালা তৈরির কাজ মোটামুটি শেষ। নীতিমালার সার্বিক দিক সর্বসত্মরের মানুষের কাছে পেঁৗছে দিতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়ার প্রক্রিয়াও প্রায় শেষ। শিৰামন্ত্রী নূরম্নল ইসলাম নাহিদ জানিয়েছেন, এক সপ্তাহের মধে এমপিওভুক্তির নীতিমালা চূড়ানত্ম করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সকলকে জানিয়ে দেয়া হবে। আর নতুন করে আবেদন করা লাগলেও জটিল কোন প্রক্রিয়ায় যেতে হবে না। এমপিওর শর্ত হিসাবে নতুন নীতিমালায় যা বলা হবে কেবল সেসব তথ্য জানালেই চলবে।

No comments

Powered by Blogger.