বিশ্ব ইজতেমা শুরু- লাখো মুসল্লির কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে ‘আল্লাহু আকবর’

হাড় কাঁপানো শীত। ঘন কুয়াশা। এর সঙ্গে মৃদু বাতাস। বৈরী এ আবহাওয়া উপেক্ষা করে তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমায় লাখো মানুষের জমায়েত। ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিতে মুখর চারদিক। বেলা যত গড়ায়, মানুষের ভিড় ততই বাড়তে থাকে।
জুমার নামাজ আদায় করতে দুপুরের আগেই বিশ্ব ইজতেমার মূল ময়দান ও আশপাশের এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে।
গতকাল শুক্রবার ভোরে ফজরের নামাজের পর পাকিস্তানের মাওলানা জামিলের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা। কাল রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ পর্ব। এরপর ১৮ জানুয়ারি ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে। এ ধর্মীয় জমায়েত শেষ হবে ২০ জানুয়ারি। ওই দিন দুপুরে হবে দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত।
গতকাল সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে হাজার হাজার মুসল্লি ইজতেমা মাঠে জড়ো হচ্ছেন। শুকনো খাবার, পানি, বিছানাসহ বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে তাঁরা ছুটতে থাকেন ময়দানের দিকে। জুমার নামাজে অংশ নেন দেশি-বিদেশি লাখো মুসল্লি। ইজতেমায় ভারত, মিসর, ওমান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, যুক্তরাষ্ট্র, জিম্বাবুয়ে, বেলজিয়াম, ইয়েমেন, পাকিস্তান, বাহরাইন, ইরিত্রিয়া, জর্ডান, মৌরিতানিয়া, দুবাইসহ ৮৫টি দেশের প্রায় আট হাজার মুসল্লি অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
মুসল্লিদের তুলনায় ইজতেমায় মাঠে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা ছিল অনেক কম। তবে এ নিয়ে তাঁদের কোনো অভিযোগ ছিল না।
মোহাম্মদ আল আমিন নামে ঢাকা মেডিকেল কলেজের এক ছাত্র বললেন, ‘এটা আমাদের কাজ। নিজের তাগিদেই এখানে এসেছি। তাই কী সুযোগ-সুবিধা আছে, তা দেখা মোটেও জরুরি নয়।’ ঢাকার নবাবগঞ্জের মো. আমিনুর বললেন, পর্যাপ্ত শৌচাগার না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তবে এত বড় আয়োজনে ছোটখাট সমস্যা হতেই পারে।
ইজতেমা মাঠে প্রতিটি জেলার জন্য পৃথক এলাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। প্রথম পর্বে ৩২ জেলার মুসল্লিরা অংশ নিয়েছেন। পানি, বিদ্যুৎ, চিকিৎসাসহ মুসল্লিদের জন্য নেওয়া হয়েছে নানা ব্যবস্থা। পুরো এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন র্যা ব ও পুলিশ সদস্যরা।
মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে সরকারি-বেসরকারিভাবে প্রায় ৫০টি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। টঙ্গী হাসপাতালে কার্ডিয়াক, বার্ন, অ্যাজমা, ট্রমাসহ বিভিন্ন ইউনিট খোলা হয়েছে। হাসপাতালে রোগী স্থানান্তরের জন্য রয়েছে সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। অগ্নিনির্বাপণে রয়েছে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। সড়কের পাশে বসেছে বহু দোকান। শীতের কাপড়, ইসলামি বইপত্র, টুপি, তসবিহ, খাদ্যসামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্যের পসরা বসে মাঠের আশপাশে।
গতকাল জুমার নামাজে অংশ নেন লাখো মুসল্লি। জুমার নামাজের সময় ইজতেমার মূল ময়দান ছাড়িয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশপাশের আঞ্চলিক সড়কগুলো কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। বাসের ছাদে, নৌকায় এমনকি বাড়ির ছাদেও অসংখ্য মুসল্লিকে নামাজ পড়তে দেখা যায়। খবরের কাগজ, পলিথিন, চাটাই বিছিয়ে যে যেভাবে পেরেছেন নামাজ আদায় করেছেন। জুমার নামাজে ইমামতি করেন ঢাকার কাকরাইল মসজিদের ইমাম মাওলানা যুবায়ের।
পকেটমার থেকে সাবধান: টঙ্গী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন প্রথম আলোকে জানান, ইজতেমায় মানুষের ভিড় বাড়ায় পকেটমারের উৎপাত বেড়েছে। গতকাল ইজতেমা ময়দানের আশপাশ থেকে ১৭ জন পকেটমারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিকে সকাল থেকে নির্বাহী হাকিম মো. সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। ভেজাল খাদ্য বিক্রির অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত নয়টি মামলা করেছে। এতে ৪১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.